সরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জলপাইগুড়ি। ছবি সংগৃহীত।
চন্দ্রযান তিনের সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন ‘জলু’র অন্তত ন’জন প্রাক্তনী। যে বাহন তৃতীয় চন্দ্রযানকে পৃথিবী থেকে চাঁদের কক্ষপথে নিরাপদে পৌঁছে দিয়ে এসেছিল, সেই বাহন তৈরির দায়িত্বে ছিলেন জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এক প্রাক্তনী। জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মুখে ‘জলু ক্যাম্পাস’ নামেই বেশি পরিচিত। এই কলেজ থেকে ২০১০ সালে মেকানিক্যালে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা নিরঞ্জন কুমার ছিলেন এই চন্দ্রযানের ‘লঞ্চ ভেহিকল ইউনিট’-এর অন্যতম দায়িত্বে। নিরঞ্জন-সহ জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিযারিং কলেজ তথা ‘জলু’র মোট সাত জন প্রাক্তনীর কোনও না কোনও ভাবে ছোঁয়া থেকে গিয়েছে চন্দ্র অভিযানের কোনও না কোনও অংশে।
বুধবার চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পর থেকে এক-এক করে প্রাক্তনীদের নাম উঠে আসছে। অভিযান সফল হওয়ার পরে ইসরোর কন্ট্রোল রুমে থাকা বিজ্ঞানীদের ছবি থেকে প্রাক্তনীদের কেউ খুঁজে পেয়েছেন এক সময়ের সহপাঠীকে, কলেজ বসে সরাসরি সম্প্রচার দেখতে দেখতে শিক্ষকদের কেউ কেউ টিভির পর্দায় চিনে নিয়েছেন প্রাক্তন পড়ুয়াদের। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জলপাইগুড়ির ক্যাম্পাসে ছিল উৎসবের আমেজ। একের পরে এক সংগঠন কলেজে এসে কর্তৃপক্ষকে কুর্নিশ জানিয়েছে। মিষ্টিমুখ হয়েছে। এক কলেজের এত জন প্রাক্তনীর চন্দ্রযান অভিযানে যুক্ত থাকার কৃতিত্ব বিরল বলে দাবি কলেজ কর্তৃপক্ষের।
জলপাইগুড়ি কলেজ থেকে ২০০৪ সালে পাশ করা সুজয় দলুই চন্দ্রযানের উৎক্ষেপণের দলে কাজ করেছেন। ১৯৯৭ সালে মেকানিক্যাল বিভাগে পাশ করা অমরনাথ নন্দীর ছবি গত বুধবারে ইসরোর সরাসরি সম্প্রচারে দেখেছেন শিক্ষকেরা। কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা সৌমিক সরখেল ২০০০ সালে পাশ করেছেন। ২০০৮ সালে মেকানিক্যাল নিয়ে পাশ করা বিকাশকুমার শর্মা মিশনের ‘কোর’ দলের সদস্য বলে খবর। এ ছাড়া, ২০০৪ মেকানিক্যাল নিয়ে উত্তীর্ণ বিশ্বনাথ দত্ত মজুমদার এবং চিন্ময় মণ্ডলও এইঅভিযানের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গিয়েছে। নয় প্রাক্তনীর মধ্যে এক মাত্র ইলেকট্রিক্যাল নিয়ে পাশ করেছেন মুকুন্দকুমার ঠাকুর।
জলপাইগুড়ি কলেজের অধ্যক্ষ অমিতাভ রায় এ দিন সাত প্রাক্তনীকে ফোন করে কলেজে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অমিতাভবাবু বলেন, “আমাদের কলেজে স্পেস ক্লাব আছে। অনেক পড়ুয়া মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চান। চন্দ্রযানের সফল বিজ্ঞানী তথা কলেজের দাদাদের অভিজ্ঞতা ওঁদের কাজে লাগবে। আমাদের সাত জন প্রাক্তনী চন্দ্রযান সফল করার নেপথ্যে রয়েছেন ভেবেই গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে।’’ সাত জনের মধ্যে পাঁচ জনই মেকানিক্যাল বিভাগের। বিভাগীয় প্রধান স্বৌপায়ন মিত্র বলেন, ‘‘ওঁদের সকলেই আমার সরাসরি ছাত্র। টিভিতে ওঁদের দেখে নিজেকেও সফল মনে হয়েছে।’’ চন্দ্রযানের সাফল্যে যেমন গর্বিত নাগরিকেরা, তেমনই আলোচনায় রয়েছে শিক্ষায়তনে র্যাগিংয়ের বিষয়টিও। এ দিন জলপাইগুড়ির এই কলেজে গিয়ে দেখা গেল, যাদবপুর-কাণ্ডের পরে, জলপাইগুড়ি কলেজেও সিসি ক্যামেরা বসানোর তোড়জোড় চলছে। কলেজে সাম্প্রতিক সময়ে র্যাগিংয়ের অভিযোগ না উঠলেও, বছর দশ-পনেরো আগে বেশ কয়েকটি অভিযোগ উঠেছিল।
বিহারের বাসিন্দা চন্দ্রযানের ল্যান্ডার তৈরির দায়িত্বে থাকা নিরঞ্জন কুমার যেমন বললেন, ‘‘আমাদের ক্যাম্পাসে র্যাগিংয়ের নিয়ে কোনও আতঙ্ক ছিল না। নানা রকমের প্রতিযোগিতা হত ঠিকই। তবে মারধর বা এমন কোনও বিষয়ই ছিল না।’’ নিরঞ্জন কুমারের ঠিক পাঁচ বছর পরে, ২০১৫ সালে জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করেছেন কৌশিক নাগ। কৌশিকের বাড়ি জলপাইগুড়ির বর্ধিত মোহান্তপাড়ায়। চন্দ্রযানের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের নানা সফটওয়র অপারেশন ইউনিটে থাকা কৌশিকের মা সোনালি নাগ এ দিন বললেন, ‘‘কৌশিক যখন প্রথম কলেজে ভর্তি হল বা তার পরেও র্যাগিং নিয়ে কোনও রকম আতঙ্কে থাকতে হয়নি। ওর মুখে নির্যাতনের কথা বা ভয়ে থাকার কথাও শুনিনি।’’
পুজোয় জলপাইগুড়ি বাড়ি আসার কথা ভেবেছেন ইসরোর বিজ্ঞানী তথা কলেজের প্রাক্তনী কৌশিক নাগ। কৌশিক বলেন, ‘‘পুজোর সময় জলপাইগুড়ি গেলে অবশ্যই কলেজে যাব। কলেজ থেকেই সব শেখা।’’ সফল বিজ্ঞানী তথা প্রাক্তনীদের প্রতীক্ষায় রয়েছে ‘জলু ক্যাম্পাস’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy