হাতির দেহে মহিলারা ফুল দিয়ে পুজো করেন। নিজস্ব চিত্র
ডুয়ার্সের পর তরাই। ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু মিছিলে সামিল হল আরও দুটি মাদি হাতি। বুধবার ভোর পৌনে ৫টা খড়িবাড়ির থানার দিলসারামের ঘটনা। কুশায়া মাখা রেল লাইনে শিলিগুড়ি-কাটিহার ইন্টারসিটির ধাক্কায় হাতিগুলি মারা যায় বলে অভিযোগ। হাতির মৃত্যুতে রেল এবং বন দফতরের গাফিলতির অভিযোগ সামনে আসতেই শুরু হয়েছে চাপানউতোর। বন দফতর এবং রেল তদন্ত শুরু করেছে আলাদা ভাবে।
কিন্তু বনকর্তারা জানান, সন্ধ্যের পর টুকুরিয়া ঝাড়ের রেঞ্জার টিটি ভুটিয়া রেলের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেন জংশন জিআরপি থানায়। রাতেই মামলা দায়ের করে রেল পুলিশ। সূত্রের খবর, ভারতীয় দণ্ডবিধি ও বনপ্রাণ সংরক্ষণ আইনের মোট দু’টি ধারায় মামলা হয়েছে রেলের বিরুদ্ধে।
এ দিনই সেবক ও গুলমা স্টেশনের মাঝে একটি মালগাড়ির চালকদের তৎপরতায় হাতি মৃত্যু রোখা গিয়েছে।
কিন্তু দিলসারামে হাতির মৃত্যু রোখা যায়নি। সেখানে দুর্ঘটনার পরে ছুটে যান বন দফতরের কর্তা, পুলিশ এবং রেল পুলিশ। হাতির দেহের ময়নাতদন্ত হয়। কার্শিয়াংয়ের ডিএফও শেখ ফরিদ জানান, পূর্ণ বয়স্ক মাদি হাতিটির বয়েস আনুমানিক ১৫ বছর। সেটি গর্ভবতী ছিল কি না, তা তদন্তের পর বলা সম্ভব। দ্বিতীয়টির বয়স প্রায় ৪ বছর। মুখ্য বনপাল (হিল সার্কেল) দেবাংশু মল্লিকও যান ঘটনাস্থলে। তিনি বলেন, ‘‘এলাকাটি হাতি করিডর নয় বলে ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের মতো রেলের সমন্বয় বৈঠক নিয়মিত হয় না। ঘটনার দীর্ঘ সময় পরেও রেল আমাদের জানায়নি।’’
বন দফতর সূত্রের খবর, ট্রেনের ধাক্কার পর লাইনের ঢালে অন্তত কুড়ি ফুট দূরে ছিটকে পড়ে হাতিগুলি। খবর পেয়েই আশেপাশের গ্রামের লোক ভিড়। হাতিগুলির দেহে মহিলারা ফুল দিয়ে পুজো করেন। লাইনের ধার ধরে তখনও চাপ চাপ রক্ত। বনকর্মীরা স্থানীয়দের সাহায্যে সেখানেই কাঠ দিয়ে চিতা সাজান। এবং হাতি দু’টির অন্ত্যেষ্টি করা হয়।
রানিগঞ্জ-পানিশালি পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামে হাতির উপদ্রব নতুন নয়। নেপাল সীমান্ত ঘেঁষে মেচি নদী। আরেক দিকে টুকুরিয়া ঝাড় জঙ্গল। পঞ্চায়েত প্রধান ভবতোষ মণ্ডল বলেন, ‘‘৩১সি নম্বর জাতীয় সড়ক এবং রেল লাইন বরাবর গ্রামগুলিতে হাতি প্রতি বছরই আসে। হাতি ফসল নষ্ট করছিল প্রায় দেড় মাস আগে থেকেই। বাড়িতে হামলাও করছিল।’’
রেলের কর্তাদের দাবি, হাতি করিডর হিসেবে কোনও এলাকা চিহ্নিত করতে গেলে বেশ কয়েক বছরের ইতিহাস নিয়েই তা করা হয়। চিহ্নিত করিডর নয় বলেই নকশালবাড়ি এবং বাতাসি স্টেশনের মাঝে ট্রেনের গতি বাঁধার জন্য রেল কর্তৃপক্ষকেও সাবধান করা হয়নি। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের দাবি, বন দফতর হাতির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। সমন্বয় বৈঠকে রেল কর্তাদের বিভিন্ন জায়গায় ট্রেনের গতি বাঁধার পরামর্শ দেয় বন দফতর। কিন্তু কাটিহার ডিভিশনের সঙ্গে এ রকম কোনও বৈঠক কেন হচ্ছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শুভানন চন্দ বলেন, ‘‘এলাকায় টানা হাতি আসছে বলে এখন শুনতে পাচ্ছি। বন দফতর আমাদের জানায়নি। জানালে একটা অস্থায়ী ব্যবস্থা করা যেত।’’ রেলের আধিকারিকরা জানান, প্রাথমিক ভাবে ইন্টারসিটির চালক দুর্ঘটনা হয়েছে বলেই মানেননি। রেল কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy