মূর্তি বিক্রির অপেক্ষায়। বালুরঘাটের তহবাজারে। ছবি: অমিত মোহান্ত
বিশ্বকর্মা মানে আকাশ জুড়ে ঘুড়ির লড়াই। হাতে লাটাই নিয়ে সকাল থেকেই ‘ভো-কাট্টা’র খেলায় মেতে ওঠা। কিংবা কঞ্চির লাঠি, গাছের ডাল নিয়ে কাটা ঘুড়িটির পিছনে ছোটা। ধরতেই হবে। এখন সে ছবি কি আর দেখা যায়? উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা শহরের বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘না।’’ ছায়াছবির ভাষায়, সে সব এখন ‘ফ্ল্যাশ ব্যাক’!
বছর দশক আগেও অবশ্য এমন ছবি বিশ্বকর্মার দিনে দেখা যেত। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর, ডালখোলা, গোয়ালপোখর বা করণদিঘির মতো মফস্সল এলাকায় জমে উঠত ঘুড়ির লড়াই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে কোথাও হারিয়ে গিয়েছে, ঘুড়ি ওড়ানো কিংবা ঘুড়ি ধরতে যাওয়া সে সব ছেলেগুলো। সব সময়ের টানে সব ভো-কাট্টা।
কদর কমেছে পেটকাটি, চাঁদিয়ালাদেরও। তাতে সঙ্কটে ঘুড়ি-শিল্পীরা। ডালখোলার এক ঘুড়ি-শিল্পী ও বিক্রেতা স্বপন অধিকারী বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগেও বিশ্বকর্মা পুজোর আগে থেকেই কত ঘুড়ি, লাটাই, সুতোর বেচা-কেনা হত। এখন প্রায় কেউ আর ঘুড়ি ওড়ায় না, কেনেও না। সবাই মোবাইলে গেম নিয়ে ব্যস্ত।’’ তিনি জানালেন, এ বছর বাজার ভাল নয়। কাগজের ঘুড়ি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। সব ঘুড়ি প্লাস্টিকের। পাঁচ টাকা থেকে ঘুড়ির দাম শুরু হচ্ছে৷ ভাল ঘুড়ির দর ১০-১৫ টাকা। তবে চিনা মাঞ্জা-সুতোর ঘুড়ির বাজারে চাহিদা থাকলেও, পুলিশের কড়াকড়ির জন্য বিক্রি করছেন না।
ডালখোলা শহরের প্রবীণদের মুখেও আফসোসের সুর। তাঁরা জানালেন, কোথাও সেই মাঞ্জা দেওয়ার ব্যস্ততা নেই। কাচ গুঁড়িয়ে, গদের আঠা, ভাতের ফ্যান দিয়ে সুতোয় মাঞ্জা দিতেন তাঁরা। প্রবীণ বাসিন্দা স্বপন বর্মণ বললেন, ‘‘একটা সময় ছিল, বিশ্বকর্মা পুজোর দিন সকাল হলেই ছোটদের সঙ্গে বড়রাও শামিল হতেন ঘুড়ি ওড়ানোয়। ছাদে-ছাদে ‘ভো-কাট্টা’ চিৎকারে মুখর থাকত পাড়া। শহর, গ্রাম কোথাও বাদ ছিল না। এখন সে সব প্রায় উঠেই গিয়েছে।’’
ইসলামপুর গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জগদ্ধাত্রী সরকার বলেন, ‘‘বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি ওড়ানো বাঙালির উৎসবের একটা অঙ্গ। কিন্তু এখনকার শিশু, কিশোর বা যুবকেরা আর কেউ লাটাই হাতে মাঠে বা বাড়ির ছাদে যায় না। সবাই এখন পড়াশোনা আর মুঠোফোন নিয়ে ব্যস্ত।’’ করণদিঘির স্কুল শিক্ষক শ্যাম মাহাতো বলেন, ‘‘এত দিন শুধু শহরের পড়ুয়াদের মোবাইল আসক্তির কথা শোনা যেত। অনলাউন ক্লাস চালুর পর, সে আসক্তি হানা দিয়েছে গ্রামে-গঞ্জেও। তাই আর নীল আকাশে ঘুড়িরা ভিড় করে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy