ধ্বংসস্তূপে হতাশার দৃষ্টি। রতুয়ার হঠাৎপাড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিমা হাওয়ার দাপটে রান্নাঘর থেকে আগুন ছড়িয়ে ভস্মীভূত হয়ে গেল দু’টি গ্রাম। শুক্রবার দুপুরে মালদহের রতুয়া-১ ব্লকের বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁদপুর ও হটাতপাড়া এলাকায় আগুন লাগে। ফুলহর নদীর এ পাড়ে পাশাপাশি দু’টি গ্রাম। নদীর জল স্যালো পাম্পসেট দিয়ে তুলে বাসিন্দারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
গত দু’দিন ধরেই চাঁচল মহকুমা জুড়ে পশ্চিমা হওয়া বইছে। হাওয়ায় দাপটে আগুন এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। নিমেষে পুড়ে ছাই হয়ে যায় শতাধিক ঘরদোর। ঘরবাড়ি, মজুত ধান, চাল, এমনকী নগদ টাকা সহ সর্বস্ব খুঁইয়ে খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নিয়েছেন ৫০টি পরিবারের দু’শোরও বেশি বাসিন্দা। অগ্নিকাণ্ডে কেউ হতাহত না হলেও আগুন নেভানোর সময় অল্প-বিস্তর আহত হয়েছেন বাসিন্দাদের অনেকেই। আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছে বহু গবাদি পশু। খবর দেওয়ার পর প্রায় দু’ঘণ্টা দেরিতে দমকল পৌঁছায় বলে অভিযোগ তুলেছেন দুর্গত বাসিন্দারা।
ফুলহারে সেতুর কাজ শুরু হওয়ায় যানজট হচ্ছে রাস্তায়। তাই পৌঁছাতে দেরি হয় বলে দমকল কর্তৃপক্ষের দাবি। ঘটনার পরই এলাকায় যান এলাকার বিডিও, রতুয়া থানার ওসি সহ প্রশাসনের কর্তারা। স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলে নিঃস্ব বাসিন্দাদের জন্য রান্না করা খাবারের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্গত বাসিন্দাদের জন্য শুকনো খাবার, চিড়ে-মুড়ি সহ তাদের ত্রাণের জন্য ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের মুখে ভয়াবহ ওই অগ্নিকান্ডে বিপাকে পড়তে হয়েছে প্রশাসনকেও।
রতুয়া-১ ব্লকের বিডিও বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অগ্নিকাণ্ডে ৫০টি পরিবারের প্রায় দু’শো বাসিন্দা সর্বস্ব খুঁইয়েছেন। প্রশাসনের তরফে তাদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু বাসিন্দা সামান্য আহত হয়েছেন। সেজন্য চিকিত্সক পাঠানো হয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন কংগ্রেস প্রধান আজিজুর রহমানের বাড়ির রান্নাঘরে প্রথম আগুন লাগে। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িই মাটির। মাথায় খড় ও টিনের চাল। এলাকাটি একেবারে নদীর ধারে হওয়ায় হাওয়ার দাপটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা কৃষিজীবী ও দিনমজুর। পড়নের পোষাকটুকু ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই দুর্গত বাসিন্দাদের। প্রচন্ড দাবদাহ চলতে থাকায় মাঠে গবাদি পশু না রেখে অনেকেই বাড়ির গোয়ালঘর বা ছায়ায় বেঁধে রেখেছিলেন। ফলে পুড়ে মৃত্যু হয় তাদেরও।
প্রাক্তন প্রধান আজিজুর রহমান বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী রান্নাঘর থেকে বাইরে বেরিয়েছিলেন। ওই সময় অসাবধানে বেড়ায় আগুন ধরে যায়। আমারও সর্বস্ব পুড়ে গিয়েছে। কীভাবে দিন চলবে কে জানে।’’ সর্বস্ব পুড়ে গিয়েছে সইদুর রহমান, মুক্তার আলমদেরও। তারা বলেন, ‘‘সারা জীবনের কষ্ট করে রোজগার করা সব শেষ হয়ে গেল। এখন পথে বসা ছাড়া উপায় নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy