পাট চাষে ক্ষতি। নিজস্ব চিত্র।
এমনিতেই প্রতি বছর পাট চাষিদের কোনও না কোনও সমস্যার মুখে পড়তে হয়। তাতে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে ক্রমশ কমে গিয়েছে পাট চাষ। নতুন করে ফের পাট চাষে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা। আর তার মধ্যেই কখনও শিলাবৃষ্টি, কখনও খরা পাট চাষে বড় ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে কৃষকদের।
এ বারও পাট চাষের মরসুমের শুরুতেই তীব্র দাবদাহ। যার জেরে কোচবিহারে পাট চাষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। খেত শুকিয়েছে। কোথাও কোথাও নেতিয়ে পড়েছে পাট গাছ। এই পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন দাবদাহ চললে পাট চাষ আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
কৃষি দফতরের কোচবিহার জেলা উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) গোপাল মান বলেন, ‘‘পরিস্থিতির দিকে নজর রয়েছে। কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’’ উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ মৌসম সেবা কেন্দ্রের নোডাল অফিসার শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। তাপপ্রবাহ আরও কয়েক দিন চলবে। সে জন্য কৃষি ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাট খেতে জলের ব্যবস্থা করতে হবে।’’
কোচবিহারে পাট অর্থকরী ফসল হলেও তা নিয়ে সমস্যা চলছে কয়েক বছর ধরেই। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, একসময় কোচবিহারে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হত। সেখানে বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে। মনে করা হয়, একের পর এক ‘পাটকল’ বন্ধ হয়ে যাওয়াতেই কোচবিহারে পাট চাষের প্রতি ঝোঁক কমে এসেছে। সেই জায়গা নিয়েছে ভুট্টার মতো ফসল। কৃষকদের অনেকেই জানিয়েছেন, এক সময় জেসিআই (জুট করপোরেশন অব ইন্ডিয়া) জেলার বিভিন্ন জায়গায় শিবির করে পাট কিনত। অভিযোগ, সিতাই ও শীতলখুচির জেসিআইয়ের শিবির বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তুফানগঞ্জের শিবিরেও এখন পাট কেনা হয় না। ভেটাগুড়ির শিবিরও কার্যত বন্ধ। দিনহাটার চওড়াহাট বাজারের একটি শিবির, মাথাভাঙার শিকারপুর এবং মেখলিগঞ্জের চ্যাংরাবান্ধার একটি শিবির কোনও রকমে চলছে।
এমন অবস্থায় তীব্র দাবদাহে পাট নষ্ট হতে বাসায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। দেওয়ানহাটের বালাসি গ্রামের কৃষক পলান ভৌমিক জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পাট চাষ করেন।। পাটের বয়স এক মাসের কাছাকাছি। তিনি বলেন, ‘‘পাট গাছ শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। এমন চললে অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে দশ হাজার টাকা থেকে পনেরো হাজার টাকা খরচ হয়। ভালোপাট হলে চার-পাঁচ হাজার টাকা লাভ থাকে। এমন আবহাওয়া থাকলে খরচ উঠবে না।’’
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বৈদ্যুতিক পাম্প দিয়ে পাট খেতে জল দিতে গিয়ে বিদ্যুতে এক কৃষকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কৃষকের নাম প্রদীপ বর্মণ (৩৪)। তাঁর বাড়ি সিতাইয়ে।
এই বিষয় নিয়ে সারা ভারত কৃষক সভার কোচবিহার জেলা যুগ্ম আহবায়ক আকিক হাসান বলেন, ‘‘ওই কৃষকের বাড়িতে আমরা গিয়েছিলাম। এমন মৃত্যু মানা যায় না। কোচবিহারে আবহাওয়া চাষের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সে ক্ষেত্রে সেচের পরিকল্পিত ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy