Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Accident

মন্ত্রীর কনভয়ের ধাক্কায় মৃত্যু মায়ের! ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে ১০ বছর ধরে আদালতে চরকি ছেলের

ট্রাইব্যুনাল কোর্টের রায়ের পর ২০১৪ সালে শিলিগুড়ি আদালতে এগজিকিউশন মামলা দায়ের করেন গণেশ। জেলাশাসকের দফতর থেকেও এক জন আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়। গণেশ জানান, সেই মামলা‌ এখনও চলছে।

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৩০
Share: Save:

নামেই সরকারি আশ্বাস! ৯ বছর পরেও কার্যকর করা গেল না আদালতের নির্দেশ!

ক্ষতিপূরণের আশায় আজও আদালতের চরকি কেটে যাচ্ছে রাজ্যের মন্ত্রীর কনভয়ের ধাক্কায় বেঘোরে প্রাণ হারানো বছর পঞ্চাশের সেই তুলিরানি বর্মণের পরিবার। শুনানির তারিখে আদালতে যান তুলির ছেলে গণেশ বর্মণ। ফিরে আসেন নতুন তারিখ নিয়ে। এ ভাবেই চলছে দশ বছর ধরে। প্রত্যেক শুনানিতে বিচারক কী বলবেন, তার জবাব কী হবে, এ সবই তাঁর ‘মুখস্থ’! এখন সাত জনের সংসার টানতে হিমশিম খাচ্ছেন গণেশ। তিনি বলছেন, ‘‘ভেবেছিলাম, কোর্টের রায়ের পর সরকার নিশ্চয়ই ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু এখন দেখছি, আদালতের রায়েরও কোনও গুরুত্ব নেই। আগামী দিনে মেয়েদের মুখে ভাত জোটাব কী করে জানি না।’’

সালটা ২০১২। এপ্রিল মাসে উত্তরবঙ্গ সফরে এসেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী (বর্তমানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী) চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে শিলিগুড়ির দিকে আসার সময় মাটিগাড়ার কাছে মন্ত্রীর কনভয়ের ধাক্কায় গুরুতর জখম হন গণেশের মা তুলিরানি। তাঁকে তড়িঘড়ি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। কনভয়ের ধাক্কাতেই যে তুলিরানির মৃত্যু হয়েছে, তা মেনে নেয় পুলিশ-প্রশাসনও। এই ঘটনার পর সরকার আশ্বাস দেয়, তুলিরানির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কিন্তু তা না পাওয়ায় ২০১২ সালে জুন মাসে শিলিগুড়ি মোটর অ্যাক্সিডেন্ট ট্রাইব্যুনাল কোর্টে মামলা দায়ের করেন গণেশ। সেই মামলায় পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৩ সালে আদালত রায় দেয়, রাজ্য সরকারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ লক্ষ ২৪ হাজার ৫০০ টাকা দু’মাসের মধ্যে ৭ শতাংশ সুদ বাবদ নিহতের পরিবারকে দিতে হবে। তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয় জেলাশাসককে।

গণেশের অভিযোগ, আদালতের রায়ের নথি জেলাশাসকের দফতরেও পাঠানো হয়। কিন্তু তার পরেও নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি। গণেশ বলছেন, ‘‘বাড়িতে আমি আর আমার মা এই দু’জনই রোজগার করতাম। আমাদের বড় সংসার।। আমার পাঁচ মেয়ে। মায়ের মৃত্যুর পর আমাদের কোমড় ভেঙে গিয়েছে। নেতারা এসে বলেছিলেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কিন্তু এখন দেখছি, আদালতের রায়েরও কোনও গুরুত্ব নেই।’’ এ বিষয়ে একাধিক বার দার্জিলিঙের জেলাশাসক এস পুণ্যবল্লমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল কোর্টের রায়ের পর ২০১৪ সালে শিলিগুড়ি আদালতে এগজিকিউশন মামলা দায়ের করেন গণেশ। জেলাশাসকের দফতর থেকেও এক জন আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়। গণেশ জানান, সেই মামলা‌ এখনও চলছে। গণেশের আইনজীবী সুভাষপ্রসাদ গুপ্ত বলেন, ‘‘২০১৪ সাল থেকে নানা রকম কারণ দেখিয়ে একের পর এক তারিখ দেওয়া হচ্ছে। কখনও নির্বাচনের অজুহাত, কখনও আবার মুখ্যমন্ত্রীর সফর। এই সব করেই পিছিয়ে যাচ্ছে। এর দায় তো রাজ্যেরই। কারণ, জেলাশাসককে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। যার অর্থ, গাফিলতি সেখানেই। আগামী দিনে আমরা উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছি।’’

অন্য দিকে, সরকার পক্ষের আইনজীবী সুস্মিতা বসু মৈত্র বলেন, ‘‘বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। আদালত যা রায় দেবে, সরকার তা মাথা পেতে নেবে। তবে ওঁরা যা বলছেন, তা সঠিক নয়। আমরাও চেষ্টা করছি যাতে ক্ষতিপূরণের অর্থ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy