Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বাচ্চা থাকলেই ‘ভূতের’ হানা, ঠেকাতে পাহারা

আবছা আলোয় দু’চার জন দেখেছেন চোখের নিমেষে কালো পোশাকে শরীর, মুখ ঢাকা একটা লম্বা ছায়ামূর্তি যেন দৌড়ে যাচ্ছে গ্রামের সুনসান মাঠের দিকে। বাসিন্দাদের একাংশের অন্তত এমনই দাবি।

সতর্ক: লাঠিসোটা নিয়ে রাতপাহারা প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র

সতর্ক: লাঠিসোটা নিয়ে রাতপাহারা প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দিনহাটা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৭ ০৬:৩০
Share: Save:

শ্রাবণের রাত। কখনও বৃষ্টি হচ্ছে। তার মধ্যেই শোনা যাচ্ছে নিশুতি রাতে কেউ নিজেদের বাড়ির উঠোনে হাঁটাহাটি করছেন। কেউ আবার বাড়ির দরমায় বেড়ায় ধাক্কা দেওয়ার শব্দে চমকে যাচ্ছেন। অন্তত দশটি বাড়িতে ‘ভূতের হানা’ হয়েছে বলে দাবি। ওই দশটি বাড়িতেই বাচ্চা রয়েছে।

আবছা আলোয় দু’চার জন দেখেছেন চোখের নিমেষে কালো পোশাকে শরীর, মুখ ঢাকা একটা লম্বা ছায়ামূর্তি যেন দৌড়ে যাচ্ছে গ্রামের সুনসান মাঠের দিকে। বাসিন্দাদের একাংশের অন্তত এমনই দাবি।

সব মিলিয়ে জাঁকিয়ে বসেছে কালো ভূতের আতঙ্ক। দু’সপ্তাহের বেশি দিন থেকে দিশেহারা অবস্থা দিনহাটার নান্দিনা, আবুতারা ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আতঙ্ক এতটাই জাঁকিয়ে বসেছে যে, গ্রামবাসীরা একজোট হয়ে রাতে লাঠিসোটা, টর্চ নিয়ে এলাকায় পাহারাও শুরু করেছেন। তার মধ্যেও কালো ভূতের দৌরাত্ম্য চলছে।

তাই সন্ধে হলে অনেকে ঘরের দরজায় খিল সেঁটে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ভয়ে কেউ বাড়িতে পুজোও করছেন। কালো ভূতের গল্প এখন মুখেমুখে ফিরছে। জনপ্রতিনিধি থেকে যুব নেতা অনেকেই বিষয়টি শুনেছেন। এলাকার কোচবিহার জেলা পরিষদ সদস্য মমতাজ বেগম বলেন, “প্রথমে গুরুত্ব দিইনি। পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি আতঙ্ক সত্যিই রয়েছে।” আবুতারার বাসিন্দা তৃণমূল যুব নেতা মিলন সেন বলেন, “পুলিশকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানান হয়েছে।”

এলাকার প্রবীণ বাসিন্দাদের মতে, কোনও একটা চক্র ভয় দেখাতে চাইছে। কিন্তু তারা কারা, তা বোঝা যাচ্ছে না। সম্প্রতি এই এলাকায় চুরি ডাকাতি তেমন কিছু হয়নি। কোনও গোপন সংগঠনের সদস্যরা শান্তিপ্রিয় এই এলাকায় লুকিয়ে থাকতে চাইছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। সেই সঙ্গে কারও মত, এলাকাটি বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে। সে কারণে কোনও দুষ্কৃতী চক্রের কেউ এখানে উপদ্রব শুরু করেছে কি না, তা-ও খতিয়ে হচ্ছে।

বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ‘ভূত’ ধরতে রাত পাহারায় থাকছেন গোবড়াছড়া- নয়ারহাট গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য শ্যামল রায়ও। তিনি বলেন, “শিশুদের ধরতে কেউ কিছু করছে কি না, সেই আতঙ্ক রয়েছে। নিজেও পাহারায় থাকছি।” কালো ভূতের প্রত্যক্ষদর্শীর দাবিদারের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তাদের একজন নান্দিনার বাসিন্দা রঞ্জিত বর্মন বলেন, “গভীর রাতে ঘুম ভাঙতেই বাড়ির উঠোনে পায়চারির শব্দ কানে আসে। বেড়ার ফুটো দিয়ে দেখি আপাদমস্তক কালো পোশাক পরা, কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা একজন ঘুরে বেড়াচ্ছে।”

আবুতারার নারায়ণ সেন বলেন, “আমাদের বাড়ির পিছনেও একদিন এসেছিল। টর্চ জ্বেলে সবাই চিৎকার করতেই দৌড়ে পালিয়ে যায়।” বাসিন্দাদের কয়েকজনের সন্দেহ, কালো ভূত সেজে বাড়িতে ঢুকে মহিলাদের হেনস্থার উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “পুরো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।” মিলনবাবুর মতো কয়েকজনের কথায়, ভূত হোক বা মানুষ—ধরা না হলে আতঙ্ক কমবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Dwellers Scared Ghost
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE