হাতে কাজ না থাকায় শোলাশিল্প ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন অনেকেই। নিজস্ব চিত্র।
একটা সময় ছিল দুর্গাপূজার আগে প্রতিমার অলঙ্কার তৈরি করতে ব্যস্ত থাকতেন কোচবিহারের ভেটাগুড়ির শোলাশিল্পীরা। বিভিন্ন পুজো কমিটির চাহিদা পূরণের জন্য রাতদিন কাজ করতে হত এই শোলাশিল্পীদের। বর্তমানে ভেটাগুড়ি সেই শোলাশিল্পীদের মধ্যে আর পুজোর আগে ব্যস্ততা লক্ষ করা যায় না। কারণ, বদলে যাওয়া সময়ের গতিতে হারিয়ে যেতে বসেছে শোলার কদর।
কোচবিহারের ভেটাগুড়ি এলাকায় প্রায় ১৫০টি পরিবার শোলার কাজের উপর নির্ভরশীল। শোলা দিয়ে প্রতিমার অলঙ্কারের পাশাপাশি বিয়ের মুকুট এবং পুজোর সামগ্রী তৈরি করে তারা। কিন্তু বর্তমানে প্রতিমার গয়নায় জরি এবং চুমকির কাজ চলে আসায় চাহিদা কমেছে শোলার। থিম পুজোর হিড়িকে এসেছে আরও নতুন নানা উপাদানও। তাই দুর্গাপূজা এলেও আর তেমন বরাত আসে না শোলার গয়না তৈরির।
ভেটাগুড়ি ঘুরে জানা গেল, আগে এক জন শিল্পী দুর্গাপূজায় যেখানে ১০০ থেকে ১৫০টি প্রতিমার গয়না তৈরি করতেন। সেখানে এ বার গড়ে অর্ডার পেয়েছেন চার-পাঁচটি করে। বড় প্রতিমার গয়নার দাম অনেকটাই বেশি পান তাঁরা। কিন্তু ছোট প্রতিমার অলঙ্কারে লাভের পরিমাণ যৎসামান্য। কিন্তু পরিশ্রম প্রায় একই রকম। তাই ক্রমশ উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন শোলাশিল্পীরা। বলছেন, রাজ্য সরকারের তরফে সক্রিয় সহযোগিতা না পেলে এই শিল্পের পুনরুজ্জীবন অসম্ভব।
হাতে কাজ না থাকায় শোলাশিল্প ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন অনেকেই। কোচবিহারের দেওয়ানহাটের শোলাশিল্পীদের তৈরি প্রতিমার অলঙ্কার এক সময় প্রতিবেশী রাজ্য আসাম থেকে শুরু করে শিলিগুড়ি পর্যন্ত যেত। দুর্গাপুজোর আয় থেকে পরবর্তী কয়েক মাসের সংসার খরচ উঠে আসত তাদের। এখন তা হয় না।
শোলাশিল্পী অশোক বর্মন বলেন, ‘‘যখন এই শোলার কাজ শিখেছিলাম সেই সময় প্রতি বছর দুর্গাপূজায় বহু প্রতিমার গয়না তৈরি করতাম।। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে সময় পাওয়া যেত না। কিন্তু ধীরে ধীরে চাহিদা কমতে শুরু করে। আমাদের এলাকায় ভালো মানের শোলা না থাকায় কলকাতা থেকে নিয়ে আসতে হয়। ফলে অলঙ্কার তৈরির খরচ একটু বেশি পড়ে যায়। প্রতিমা শিল্পীদের অনেকেই তাই কলকাতা থেকে অলঙ্কান নিয়ে আসেন। এ ছাড়া শোলার কাজের চেয়ে এখন জরি-চুমকির কাজের চাহিদা অনেক বেশি।’’
আর এক শোলাশিল্পী অবিনাশ বর্মনের কথায়, ‘‘আগে আমরা, শোলাশিল্পীরা অপেক্ষা করে থাকতাম এই পূজার মরসুমের। কিন্তু বর্তমানে কাজের অর্ডার না থাকায় আর উৎসাহ নেই। অনেক শোলাশিল্পী ইতিমধ্যে পেশা বদল করে ফেলেছেন। আবার অনেকে বিয়ের মুকুট, শোলার মালা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy