Yogita Bhayana: Woman who left aviation job to work for rape victims and other social reforms dgtl
Yogita Bhayana
ছিলেন বিমান সংস্থার কর্মী, একটি ঘটনা বদলে দেয় জীবন, যোগিতা এখন লড়াইয়ের অন্য নাম
ছোটবেলা থেকেই তাঁর থেকে কমবয়সিদের পড়ানোর শখ ছিল যোগিতার। তিনি যখন দশম শ্রেণিতে পড়তেন, তখন তাঁর বাড়ির বাইরে একটি গাছের নীচে বাচ্চাদের পড়াতেন তিনি।
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১১:৩৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
যোগিতা ভায়ানা। ১৪ বছর ধরে সামাজিক কাজ, নারীকল্যাণ এবং মহিলাদের অধিকার রক্ষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে এই নাম অত্যন্ত পরিচিত। ভারতে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন এবং বিভিন্ন ভাবে অত্যাচারিত মহিলাদের বিচারের জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই চালান যোগিতা। কিন্তু এই লড়াইয়ে সামিল হওয়ার আগে অন্য জীবন ছিল যোগিতার। বিমান চালনাকেই পেশা হিসাবে বেছে নেবেন বলে ঠিক করেছিলেন।
০২১৯
ছোটবেলা থেকেই তাঁর থেকে কমবয়সিদের পড়ানোর শখ ছিল যোগিতার। তিনি যখন দশম শ্রেণিতে পড়তেন, তখন বাড়ির বাইরে একটি গাছের নীচে বাচ্চাদের পড়াতেন তিনি।
০৩১৯
স্কুলে পড়ার সময় বৃদ্ধদের সাহায্য করার জন্য তহবিলও সংগ্রহ করতেন যোগিতা।
০৪১৯
পড়াশোনা শেষ করে সঠিক প্রশিক্ষণের পর যোগিতা একটি বহুজাতিক বিমান সংস্থায় মোটা বেতনের চাকরি পান। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে একটি বিশেষ ঘটনার পর তাঁর জীবনের দিশা বদলে যায়।
০৫১৯
২০০২ সালে এক পথদুর্ঘটনার সাক্ষী হন যোগিতা। তিনি দেখেন, এক জন পথচারীকে ধাক্কা মেরে ঘটনাস্থল থেকে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন অভিযুক্ত। দুর্ঘটনায় আহত রাস্তায় পড়ে কাতরালেও তাঁকে সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসেননি।
০৬১৯
যোগিতাই কয়েক বন্ধুদের সাহায্যে ওই আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। আহতের পরিবারের সদস্যদের ফোন করে বিষয়টি জানান তিনি।
০৭১৯
আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করতে নিয়ে গিয়ে যোগিতা প্রত্যক্ষ করেন সরকারি হাসপাতালের বেহাল অবস্থা। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করে আহতের চিকিৎসা শুরু হতে হতে আরও কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। কিছু ক্ষণ পর চিকিৎসকরা যোগিতাকে এসে জানান, ওই ব্যক্তি মারা গিয়েছেন।
০৮১৯
এই ঘটনার পর যোগিতা সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েন। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে এর আগে এ রকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। আমার বয়স তখন অনেক কম। রাতের পর রাত ওই ঘটনার কথা মনে করে আমি ঘুমোতে পারিনি। আমি ভাবতাম এ দেশে গরিব মানুষের জীবন কি এতটাই সস্তা?’’
০৯১৯
এই ঘটনার পরই যোগিতার জীবন একেবারে বদলে যায়। সচেতনতামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে শুরু করেন তিনি। ওই দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ান যোগিতা। আদালতে সাক্ষী হিসাবেও দাঁড়ান। নিহতের স্ত্রী এবং সন্তানদের ক্ষতিপূরণ চেয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
১০১৯
এর পর সমাজসেবার কাজে ব্রতী হতে যোগিতা বিমান সংস্থার চাকরি ছেড়ে দেন। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার চাকরি ছেড়ে দেওয়া জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত ছিল। আমি অনেক আগেই চাকরি ছাড়তে পারতাম।’’
১১১৯
২০০৭ সালে যোগিতা এক অসরকারি সংস্থার শুরু করেন। এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পথদুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করা।
১২১৯
পাশাপাশি মহিলাদের কর্মসংস্থান জোগাড় করতেও সক্রিয় ভাবে কাজ করতে থাকে যোগিতার সংস্থা।
১৩১৯
২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ড সারা দেশের মতো যোগিতাকেও নাড়িয়ে দিয়েছিল।
১৪১৯
এই সময় নির্যাতিতার বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন যোগিতা। মাসের পর মাস দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেন তিনি। যোগিতার প্রতিবাদের আওয়াজ পৌঁছেছিল সরকারের কানেও।
১৫১৯
যোগিতা এক বার উল্লেখ করেন, ‘‘যখন আমি নির্ভয়ার বিচারের আশায় লড়ছিলাম, তখন আমি ধর্ষণের আরও আট-ন’টি ঘটনার প্রতিবাদেও লড়াই করছিলাম। দিনের পর দিন আদালতে কাটাচ্ছিলাম। এক শুনানি থেকে অন্য শুনানিতে যাচ্ছিলাম। সারা বিশ্বের মনোযোগ নির্ভয়া-কাণ্ডের দিকে থাকলেও, আরও অনেকে ছিলেন যাঁদের দিকে মানুষ তাকাচ্ছিল না। তাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি। তাঁদের ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি না দিতে পারলেও, প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আমি তাঁদের সঙ্গে থাকব।’’
১৬১৯
নির্ভয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর, যোগিতা আরও একটি সংগঠন শুরু করেন। এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য ছিল ধর্ষিতাদের ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করা এবং তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। ওই পরিবারগুলিকে নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টাও করত যোগিতার এই সংগঠন।
১৭১৯
যোগিতাদের আরও একটি প্রকল্প আছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য মহিলাদের সুরক্ষা, লিঙ্গ সংবেদনশীলতা এবং আরও মহিলাদের সার্বিক উন্নতিতে পুরুষদের কাজে লাগানো। বাসচালকদের নিরাপত্তা এবং ট্রাফিক নিয়ম মেনে কাজ করা নিয়েও কাজ করে যোগিতাদের সংগঠন।
১৮১৯
অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল হাজারেরও বেশি মহিলাকে গাড়িচালক, গৃহস্থালির কর্মী এবং গাড়ি সাফাইকর্মী হিসাবে নিয়োগ করেছেন যোগিতারা।
১৯১৯
ধর্ষিতাদের আইনি সহায়তা, ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং ন্যায়বিচারের জন্যও কাজ করে যোগিতার সংস্থা।