সেই লকডাউন থেকে বাসস্ট্যান্ড খাঁ খাঁ করছে।
ওখানেই কাজ করতেন তাঁর স্বামী মৃণাল বসাক। বেসরকারি বাসের ‘স্টার্টার’। কোন বাস কখন বার হবে, ঘড়ি ধরে সেটাই করতেন মৃণালবাবু। লকডাউনে বাস বন্ধ। কাজও নেই। এ দিকে পঞ্চাশ পেরনো মানুষটার শরীরে বাসা বেঁধেছে রোগ। এ অবস্থায় সংসারের হাল নিজের হাতে নিলেন শান্তিদেবী। শান্তি বসাক দত্ত। তিনি মৃণালবাবুর স্ত্রী। এত দিন গৃহস্থের বাড়িতে কাজ করতেন। কিন্তু স্বামীর কাজ চলে যাওয়ার পরে আর সেই টাকায় চলছিল না। তাই শান্তিদেবী হাতাখুন্তিকে সম্বল করেই হোটেল বা ব্যবসায়িক রান্নার সংস্থায় যোগ দেওয়ার জন্য হন্যে হয়ে পড়লেন।
এখন শান্তিদেবী বলেন, ‘‘সেই সময়টায় খুব কষ্ট গিয়েছে। ওঁর কাজ চলে গেল। আমারও সামান্য উপার্জন। এ দিয়ে সংসার চলবে কী করে আর ওষুধ কিনব কোথা থেকে! কাজ খুঁজতে লাগলাম।’’ এক হোটেলে কাজ মিলল। কিছুটা হলেও বাঁচানো গেল সংসার তরণী। সেখানে মেলে তিন হাজার টাকা। বাড়ি বাড়ি কাজে আরও দু’হাজার। মালবাজারের নেতাজি কলোনির বাসিন্দা শান্তিদেবী বলেন, ‘‘এ ভাবেই তো বেঁচে আছি।’’
এরই মাঝে কাশফুলে ভরেছে শহরের আনাচকানাচ। কাজে যাওয়ার পথে শিউলি ঝরা পথ দেখে হয়তো তাঁর মনও একটু পুজো পুজো করে ওঠে। তাই রাতে যখন বাড়ির কাজ মেটে, পাড়ার একমাত্র মৃৎশিল্পী স্বপন ভাদুড়ির মূর্তি তৈরির কাজ কতটা হল, তা দেখতে যান তিনি। দিনাবসানে একজন নারী ক্লান্ত, শ্রান্ত হয়ে আরেক নারীর গড়ে ওঠা দেখেন। ‘‘মায়ের রূপ ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে, দেখতে খুব ভাল লাগে,’’ বলেন শান্তিদেবী।
মাছ খেতে খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু এখন অবস্থা এতটাই সঙ্গিন যে, খুব কষ্টে পোনা মাছটুকু শুধু জোটানোর চেষ্টা করছেন। আর পুজোর নতুন শাড়ি, স্বামীর জন্যে নতুন কাপড়? ‘‘না, এ বার তা জুটবে বলে মনে হয় না,’’ হাসিমুখেই বলেন তিনি। তবে আশা আছে। সেটাও পুজোকে ঘিরেই। যদি পুজোর দিনগুলিতে পর্যটকেরা আসেন ডুয়ার্সে বেড়াতে, তা হলে ব্যবসা বাড়বে, আর কাজও বাড়বে। সেই বাড়তি কাজের জেরে যদি কিছু বাড়তি টাকা আসে, তা হলে একটা হলেও নতুন কাপড় জুটে যেতেই পারে। পুজো তো প্রায় এসেই গেল। ‘‘দেখা যাক,’’ একটু হেসে বলেন শান্তিদেবী।
হ্যাঁ, এখনও তিনি হাসতে পারেন। হাসতে হাসতেই বলেন শান্তি, ‘‘ওটা ভুলে গেলে তো বেঁচে থাকাই অর্থহীন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy