অবাধ: বালুরঘাটের সুভাষ কর্নার এলাকায় কনটেনমেন্ট জ়োনে ব্যারিকেড পেরিয়ে। ছবি: অমিত মোহান্ত
নবাব আমলে প্লেগে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল তৎকালীন বাংলার রাজধানী গৌড়। এখন অতিমারি করোনা নিয়ে কতটা সচেতন গৌড়বঙ্গের তিন জেলা—কন্টেনমেন্ট জ়োনে গিয়ে খোঁজ নিল আনন্দবাজার পত্রিকা
মালদহ
কন্টেনমেন্ট জ়োন ‘ঘুরে দেখতে’ হাতিয়ার প্রেসক্রিপশন:
লকডাউনের মেঘলা বিকেলে সুনসান ইংরেজবাজার ফোয়ারা মোড়। নেতাজি মোড় থেকে মোটরবাইক নিয়ে এক যুবককে আসতে দেখে পথ আটকান ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মী। কোথায় যাচ্ছেন? পুলিশের হাতে যুবক ধরিয়ে দিলেন একটি ‘প্রেসক্রিপশন’। চোখ বোলাতেই দেখা গেল প্রেসক্রিপশনটি ২০১৭ সালের! মোটরবাইক ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে উধাও যুবকও। মুখে মুচকি হাসি ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মীর।
ফাঁকা রাস্তায় সান্ধ্যভ্রমণ:
পরনে টি-শার্ট, হাফ প্যান্ট। পায়ে স্নিকার জুতো। মেঘ-বৃষ্টির সন্ধেয় রথবাড়ি রবীন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের দিকে হেঁটে আসছেন চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তি। গার্ডরেলের ফাঁক গলতেই পেছন থেকে ডাক, ‘একটু থামুন’। মুখ ঘুরিয়ে ব্যক্তি দেখলেন পিছনে দাঁড়িয়ে উর্দিধারী। তাঁর প্রশ্নের মুখে সটান উত্তর, ‘‘একটু হাঁটতে বেড়িয়েছি। শহরে এমন মনোরম পরিবেশ আর মিলবে না।’’ বাইরে বেরনো তো নিষেধ। ‘‘আজ ছেড়ে দিন, কাল থেকে নিয়ম মেনে চলব’’, বলেই হাঁটতে শুরু করলেন ব্যক্তি।
রকমারি মাস্ক দোকানেই, মুখে নেই:
‘মুখ ঢাকুন মাস্কে, দূরে রাখুন করোনাকে’—এক নাগাড়ে বলে চলেছেন ফোয়ারা মোড়ের ব্যবসায়ী। ফুটপাতে টেবিলের উপরে রকমারি মাস্ক, স্যানিটাইজ়ারের পসরা। তবে তাঁর নিজের মাস্ক মুখের বদলে ঝুলছে গলায়। সে কথা বলতেই গলা থেকে টেনে মুখে তোলার চেষ্টা শুরু করলেন তিনি। দীর্ঘ চেষ্টার পরে মাস্ক মুখে উঠলেও উন্মুক্ত রইল নাক। ব্যবসায়ীর সাফাই, ‘‘ভুল করে ছোটদের মাস্ক পরে ফেলেছি। এমন আর হবে না।’’
দক্ষিণ দিনাজপুর
ছুটছে টোটো, ই-রিকশা:
বালুরঘাট শহরের রঘুনাথপুর মোড় দিয়ে চার যাত্রী নিয়ে ছুটছে টোটো। সবার মাস্ক রয়েছে, তবে কারও ঝুলছে থুতনিতে, কারও বাজারের থলিতে। কন্টেনমেন্ট জ়োনে টোটো নিয়ে কেন? গলা চড়িয়ে চালকের জবাব, ‘‘ঋণ নিয়ে টোটো কিনেছি। আধপেটা খেয়ে চলে যাবে। কিন্তু ঋণ তো শোধ করতে হবে। তাই বেরিয়েছি।’’
মাস্ক পকেটে রেখে বাজার:
বালুরঘাট শহরের তহবাজারে আনাজের পসরা সাজিয়ে বসে এক ব্যবসায়ী। আলু, পটল পরখ করে কিনছেন চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তি। কারওরই মুখে মাস্ক নেই। ক্রেতার সটান উত্তর, ‘‘মাস্ক সব সময়ই সঙ্গে থাকে। পুলিশ এলে পকেট থেকে বার করে ঠিক পরে নেব। আপনাদের ভাবতে হবে না।’’ পাশের দোকানে এক ক্রেতা বলে উঠলেন, ‘‘বাজারে আলু, পটল কিনতে নয়, মনে হচ্ছে করোনা নিতে এসেছি।’’
মাস্ক খুলে সুখটান:
কানে মাস্ক ঝুলছে আর সিগারেটে সুখটান দিচ্ছেন যুবক। ধোঁয়াময় বালুরঘাটের সাড়ে তিন নম্বর মোড়। যুবকের দাবি, মাস্ক পরতে পরতে মুখ, কান ব্যথা হয়ে যাচ্ছে, মাথার উপরে চাপ পড়ছে। তাই মগজ ঠিক রাখতে সিগারেটে টান। সে কথা শুনে মুচকি হেসে বিড়িতে টান দিতে দিতে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন পাশে দাঁড়ানো চালকও।
উত্তর দিনাজপুর
মুখ ঢাকতে ভরসা আঁচল:
বাঁশের ব্যারিকেডে আটকে দেওয়া হয়েছে রায়গঞ্জ শহরের কাঞ্চনপল্লি। তার ফাঁক গলে বেড়িয়ে কন্টেনমেন্ট জ়োনে ঢুকছেন এক মহিলা। মুখে মাস্ক নেই। তাঁর দাবি, আত্মীয়ের বাড়িতে ঘুরতে যাচ্ছি। তাড়াহুড়োয় মাস্ক আনতে ভুলে গিয়েছি। পুলিশ আটকালে শাড়ির আঁচল তো রয়েছেই। আমি তো সংক্রমিতের বাড়িতে যাচ্ছি না। আর আপনাকে এত প্রশ্নের উত্তরই বা দেব কেন, বলেই কন্টেনমেন্ট জ়োনে ঢুকে পড়লেন ওই মহিলা।
চলছে নির্মাণ কাজ:
রায়গঞ্জ শহরের পূর্ব নেতাজিপল্লি এলাকা কন্টেনমেন্ট জ়োন হলেও বাঁশের ব্যারিকেড নেই। কন্টেনমেন্ট জ়োনেই চলছে নির্মাণ কাজ। অধিকাংশ শ্রমিকেরই মাস্ক ঝুলছ গলায় বা থুতনিতে। শ্রমিকদের দাবি, মুখে মাস্ক থাকলে গরম লাগছে। কাজ করতে অসুবিধে হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, সংক্রমিত ব্যক্তি কোভিড হাসপাতালে ভর্তি। আর তাঁর পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের রিপোর্ট এসেছে নেগেটিভ। তাই আর ভয় নেই।
ঘুরে দেখলেন: অভিজিৎ সাহা, অনুপরতন মোহান্ত ও গৌর আচার্য
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy