শিলিগুড়ির সেবক রোড থেকে বিহার পার হয়ে উত্তরপ্রদেশের কুশীনগর। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান। শিলিগুড়ির থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৬০০ কিমি। গোয়েন্দারা মনে করছেন, নিখোঁজ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএ) কিসান আগরওয়াল রয়েছেন ওই জায়গারই কাছাকাছি।
গত মঙ্গলবার সকালে ‘ক্লায়েন্টদের’ সঙ্গে বৈঠক করার কথা বলে বাড়ি থেকে বার হন কিসান। তার পর থেকে তিনি নিখোঁজ। রাতে দুই দফায় বাড়িতে পাঁচ কোটি টাকা মুক্তিপণের ফোন আসে। পুলিশ রাত থেকেই তদন্তে নামে। বুধবার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলার পর কিসানের মোবাইল নম্বর এবং বাড়িতে আসা দু’টি মোবাইল নম্বরের তথ্য ঘেঁটে তদন্তকারীরা দেখেন, কিসানের ফোনটি শেষবার কুশীনগরে সক্রিয় ছিল। রাত ১১টা নাগাদ হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে মোবাইলটিও বন্ধ হয়ে যায়। তা হলে কি ওই সিএ-কে অপহরণ করে উত্তরপ্রদেশের কোথাও রাখা হয়েছে? নাকি সেখান থেকে পরে তাঁকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে? এটাই এখন খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার রাতে বিহার ও উত্তরপ্রদেশের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিলিগুড়ি পুলিশ। কমিশনারেট আলাদা তদন্তকারী দলও গঠন করেছে। বিহারের ভাগলপুরে কিছু সূত্র মেলায় সেখানেও খোঁজখবর শুরু হয়। বৃহস্পতিবারই একটি দল কিসান সেখানে খোঁজে গিয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি (পূর্ব) সুরিন্দর সিংহ বলেন, ‘‘পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে অপরহণের মামলা রুজু করা হয়েছে।’’
কমিশনারেট সূত্রের খবর, কিসানদের আদি বাড়ি ছিল শহরের মিলনপল্লি এলাকায়। কয়েক বছর আগে বাড়ি বেচে গোটা পরিবার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ফ্ল্যাট কেনেন। নিজের গাড়ি থাকলেও মোটরবাইকেই যাতায়াত করতেন তিনি। ক্লায়েন্টদের সংস্থার গোটা মাসের হিসেব খুঁটিনাটি তিনি প্রতিমাসে একবার করে সেই সংস্থায় গিয়ে দেখে আসতেন। এ ছাড়াও নিজের অফিসেও ফাইলপত্র এনে কাজ করতেন। কিছু দিন ধরে সিএ হিসেবে কাজ ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থায় লগ্নির পরামর্শও দিতেন তিনি। রবিবারই বেঙ্গালুরু থেকে স্ত্রীকে নিয়ে ফেরেন। সেখানে ওজন কমানোর জন্য চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন।
শিলিগুড়ির ফিরে সোমবার থেকে তিনি কাজে যোগ দেন। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিখোঁজ হন কিসান। তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, হিসেব সংক্রান্ত ব্যবসা ছাড়াও লগ্নির সংক্রান্ত কোনও লেনদেনের জেরে সমস্যা হয়েছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে, কোনও গ্রাহক বা সংস্থার সঙ্গে টাকাপয়সা সংক্রান্ত লেনদেন নিয়ে কিছু হয়েছে কি না, তা দেখতে তাঁর পরিবার এবং অফিসের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। বেঙ্গালুরু থেকে ফেরার পর তিনি কিছুটা মানসিকভাবে অস্থির ছিলেন বলে গোয়েন্দারা খবর পেয়েছেন। নিখোঁজ হওয়ার দিন প্রথম ফোন করে তিনি স্ত্রীকে ১২ লক্ষ টাকা তৈরি রাখার জন্য বলেছিলেন। একজন গিয়ে সেই টাকা নিয়ে আসবে বলেও জানিয়েছিলেন। সেই জায়গা থেকে টাকা লেনদেনের জেরেই ঘটনাটি কি না খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy