খুচরোর সমস্যায় মালদহ জেলা জুড়ে প্রায় সমস্ত চাষির মাথায় হাত পড়েছে। আলু চাষের মরসুম শুরু হলেও খুচরো টাকার অভাবে হিমঘর থেকে আলুবীজ ছাড়াতে পারছেন না চাষিরা। পাশাপাশি সমবায় সমিতিগুলো পুরনো ৫০০, ১০০০ টাকার নোট নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় সর্ষে, গম, দানাশস্যের বীজসহ কম দামে সারও কিনতে পারছেন না চাষিরা। ফলে জেলায় এ বছর আলু, সর্ষে, গম চাষে চাষিদের মার খাওয়ার আশঙ্কার পাশাপাশি সমবায় সমিতিগুলোরও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সমবায় সমিতিগুলো ওই নোট নিতে পারবে না বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নির্দেশ দেওয়ায় ওই সমস্যা তৈরি হয়েছে। জেলায় দু’শোরও বেশি সমবায় সমিতি রয়েছে। ফলে সমস্যা এতটাই প্রকট যে বুধবার বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের তরফে জরুরি বৈঠকও ডাকা হয়।
মালদহের জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী বলেন, এটা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ। তবু সমস্যা মেটাতে আমরা অগ্রণী ব্যাঙ্কগুলোর কাছে আবেদন জানিয়েছি, যাতে তারা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নজরে বিষয়টি নিয়ে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।
প্রশাসন ও জেলা সমবায় দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহে ২২০টি সমবায় সমিতি রয়েছে। চাষিরাই ওই সমিতিগুলোর সদস্য। এ ছাড়া আদিনা ও সামসিতে দু’টি সমবায় হিমঘর রয়েছে। ওই দুই হিমঘরে এখনও প্রায় ৪৫ হাজার প্যাকেট আলুবীজ পড়ে রয়েছে।
প্রতিটি পঞ্চাশ কিলোগ্রামের ওই প্যাকেটগুলি গত মার্চ মাসে চাষিরা রেখেছিলেন। আলু চাষের মরসুম পর্যন্ত যার ভাড়া প্যকেট প্রতি ৭১.৫০ পয়সা। প্রথম দিকে বেশ কিছু চাষি বীজ নিলেও এখন হিমঘর কর্তৃপক্ষ পুরনো টাকা না নেওয়ায়, তা নিতে পারছেন না চাষিরা। ফলে আলু চাষের মরসুম শুরু হলেও বীজের অভাবে মার খেতে বসেছে আলুচাষ। এ ছাড়া সর্ষে, গম, দানাশস্য চাষের মরসুম শুরু হয়েছে। কম দাম ও ঠকবার ভয় না থাকায় সেই বীজের পাশাপাশি ইফকো সারও সমিতিগুলো থেকে নিয়ে থাকেন চাষিরা।
মালদহের এআরসিএস (অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার অব কো-অপারেটিভ সোসাইটি) সুবীর দত্ত বলেন, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশে পুরনো ৫০০, ১০০০ এখন আমাদের কাছে অচল টাকা। আর এতে সমবায়গুলি দ্বিমুখী ক্ষতির সন্মুখীন। এক দিকে হিমঘরে আলুবীজ পচে নষ্ট হবে। সার, বীজ কিনতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেন চাষিরা। আর মরসুম ফুরিয়ে গেলে সমবায়গুলিতে মজুত বীজ, সার পড়ে থাকবে। ফলে সমবায়গুলোকেও বিপুল ক্ষতির মুখে পড়তে হল।’’
এই পরিস্থিতিতে দিশেহারা অবস্থা চাষিদের। চাঁচলের আসকাপাড়ার চাষি এনামুল হক বলেন, ছয় প্যাকেট আলুবীজ রেখেছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পাঁচশো টাকা নিতে না চাওয়ায় বীজ নিতে পারিনি। ভগবানপুরের চাষি সাজাহান আলি বলেন, ‘‘খুচরো একশো, পঞ্চাশ টাকা আর কত থাকে। চাষের জন্য বড় নোট জোগাড় করে রাখি। কিন্তু ব্যাঙ্কে যা অবস্থা তাতে টাকা জমা দিয়ে তুলতে হলে মরসুম ফুরিয়ে যাবে। কেননা ব্যাঙ্কগুলির অধিকাংশই কেউ পাঁচশো, কেউ এক হাজার টাকার বেশি দিচ্ছে না।’’
হরিশ্চন্দ্রপুর লার্জ স্কেল মার্কেটিং কো-অপারেটিভ সমিতির চেয়ারম্যান অনুপ জয়াসবাল বলেন, ‘‘সার, বীজ সব পড়ে রয়েছে। এ বার আমাদের বিপুল ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy