Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
নোটবন্দির তিন বছর

ধাক্কা চাষ, ছোট ব্যবসা চা বাগানে

পরপর তিন বছর উত্তরবঙ্গের খেতে হওয়া আলুর দাম তলানিতে

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:৫৫
Share: Save:

ভুটান আলুর দাম কেজি প্রতি প্রায় চল্লিশ টাকা ছুঁইছুঁই। তবু বাজারের কোনও ব্যবসায়ীর কাছেই দিনশেষে ভুটান আলু পড়ে থাকে না। স্থানীয় আলুও বাজারে আসছে। তার দর কেজি প্রতি পনেরো থেকে কুড়ি টাকা। চাহিদা না থাকায় তার দাম প্রতিদিনই কমছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, ভুটান আলুর গুণগত মান ভাল, সে কারণেই চাহিদা বেশি। এ দিকে স্থানীয় আলুর দাম কম হলেও, বাজারে চাহিদা তেমন নেই। তিন বছর ধরেই এই অবস্থা চলছে। পরপর তিন বছর উত্তরবঙ্গের খেতে হওয়া আলুর দাম তলানিতে যাওয়ার কারণ হিসেবে নোটবন্দি এবং তার পরপর জিএসটি চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকেই দায়ী করলেন কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে যুক্তরা।

কৃষি ব্যবসায়ীদের দাবি, এক সময়ে ভুটান বা বর্ধমানের আলুর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করত স্থানীয় আলু। স্থানীয় বাজারের আলু অসম-বিহারেও যেত। গুণগত মান ভাল ছিল। কোচবিহারের দিনহাটার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামীর পাল্টা প্রশ্ন, “ভাল সার দেবেন, পরিচর্যা করবেন, সেই টাকা কৃষকদের হাতে কোথায়? নোটবন্দির সময় হাতে নগদ পেতে এবং ধার শুধতে দলের দরে ফসল বিক্রি করেছিল কৃষকেরা।” জলপাইগুড়ি-কোচবিহার-আলিপুরদুয়ার তিন জেলাই কৃষি অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। জিএসটির জেরে খোলাবাজারের সারের দাম বেড়েছে বলে দাবি। ভাল সার সাধারণ কৃষকদের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে বলে দাবি। যার জেরে গুণমানে টক্কর দিয়ে বাইরের আলু বিকোচ্ছে বেশি, মার খাচ্ছেন ঘরের কৃষকেরা।

কেবল চাষই নয়, ধাক্কা লেগেছে অর্থনীতির অন্য ক্ষেত্রেও। জলপাইগুড়ির সেনপাড়ায় একটি বেকারি খুলেছিলেন শাহজাহান আলম। নোটবন্দিতে ব্যাঙ্কে টাকা আটকে যাওয়ায় টানা দেড় মাস বন্ধ রাখতে হয়েছিল বেকারি। নিয়মিত বরাতের বেশিরভাগটাই হাতছাড়া হয়ে যায়। তারপরে জিএসটির ধাক্কা। শাহজাহানের কথায়, “জিএসটির ফাইল তৈরি করতে এবং খাতাপত্র নিয়মিত ঠিকঠাক রাখতে প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা বাড়তি চেপে বসে।” বছরখানেক আগে বেকারি বন্ধ করে দিয়েছে। সদাহাস্যময় শাহজাহানকে খুব একটা হাসতেও দেখা যায় না বলে জানাচ্ছেন বন্ধুরা। জলপাইগুড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য সুদীপ সিংহের কথায়, “নোটবন্দি এবং জিএসটির ধাক্কায় স্থানীয় অর্থনীতির হাসিটাই উধাও হয়ে গিয়েছে।”

নোটবন্দির আঘাত এসেছিল চা শিল্পে। বহু শ্রমিক মজুরি না পেয়ে বাগান ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। তাতে উৎপাদনে প্রভাব পড়েছিল। লোকের হাতে নগদ কমে যাওয়ায় বিক্রিও কমেছিল। ক্ষতি সামলাতে চা বাগানগুলিতে বহু অস্থায়ী শ্রমিক ছাটাই করে। চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত তথা নর্থ বেঙ্গল চেম্বার অব কর্মাসের পুরজিত বক্সী গুপ্তের কথায়, “নোটবন্দি ও জিএসটি-র মাঝে অন্তত পাঁচ বছর সময় থাকা উচিত ছিল। এখনও কিন্তু অর্থনীতি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেনি।”
তার উদাহরণ মিলেছে নির্মাণ শিল্পেও। গত দু’বছরে জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে ফ্ল্যাট বা বাড়ির দাম কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। যার ফলে বিক্রি কমেছে। বিক্রি কমায় নির্মাণের সংখ্যা কমেছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে শ্রম দিবস তৈরিতে। কম শ্রমিক কাজ পেয়েছেন। মজুরিও কমেছে। সমাজের নীচের স্তরে অর্থনীতি দুর্বল হয়েছে। নির্মাণ শিল্পে জড়িত জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “বহুতল করতে গেলে আগে ভিত মজবুত করতে হয়। পরপর নোটবন্দি ও জিএসটি অর্থনীতির ভিতেই আঘাত করেছে। যার জেরে অর্থনীতির উপরতলাতেও কাঁপুনি চলছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

demonetisation agriculture teaestate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy