ধনতেরসে। নিজস্ব চিত্র
সোনার চেনের বদলে রূপোর কয়েন তবু মানা যায়, তাই বলে স্টিলের বাটি! প্রবল আক্ষেপ জলপাইগুড়ির ডিবিসি রোডের এক গয়না ব্যবসায়ীর। পারিবারিক ব্যবসা তাঁর। প্রায় দু’দশক আগে কলেজ পাশ করে নিয়মিত সোনার দোকানে বসছেন প্রসেনজিৎ তালুকদার। তাঁর কথায়, “এমন মন্দার ধনতেরস আগে দেখিনি। গতবারের থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ বিক্রি কম। কিন্তু অবাক করা বিষয়, বাজারে ভিড় কিন্তু কমেনি।”
শুক্রবার সকাল থেকেই জলপাইগুড়ির তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি কম। আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা আর সঙ্গে কনকনে হাওয়া। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিও হয়েছে। দিনের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রির নীচেও নেমেছে। তবে ধনতেরাসের বাজার ফাঁকা হয়নি। শুধুমাত্র ভিড়ের জায়গাটা পাল্টে গিয়েছে। অন্য বছর ডিবিসি রোডের দু’পাশে সার দিয়ে থাকা সোনার দোকানগুলি ভিড়ে ঠাসা থাকত। এ বার ভিড় সরে গিয়েছে মার্চেন্ট রোড, দিনবাজারের বাসনের দোকানে। এ বছর সন্ধে সাতটা কুড়ি মিনিট পর্যন্ত ধনতেরাসের কেনাকাটা করার শুভ মুহূর্ত ছিল। দুপুরেও দেখা গিয়েছে সোনার দোকানে ভিড় কম কিন্তু বাসনের দোকানে পা ফেলার জায়গা নেই।
প্রথা অনুযায়ী ধনতেরাসের দিন সোনা-রুপোর জিনিস কিনতে হয়। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, এত দিন লক্ষ্মী-গণেশের ছবি খোদাই করা সোনার কয়েনই চাহিদায় এগিয়ে ছিল। এ বছর চাহিদা বদলে গিয়েছে পরিচিত ক্রেতাদেরও। শহরের একটি প্রতিষ্ঠিত অলঙ্কার বিপণির কর্ণধার নীলাঞ্জন রায় কর্মকার বললেন, “বাঁধাধরা ক্রেতারা প্রায় সকলেই এসেছেন। কিন্তু যিনি প্রতিবার সোনার কয়েন নিতেন, এ বার রূপোর নিয়েছেন। যিনি সোনার চেন নিতেন, তিনি কানের দুল নিয়েছেন। ফলে বিক্রি কমেছে।” শহরের একাধিক ব্যবসায়ী জানাচ্ছেন, এ বার সোনার চাহিদা তেমন ছিল না।
কেন এমন হল? স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দাবি, সারা দেশে মন্দা নিয়ে যে শোরগোল চলছে তার জেরেই ধাক্কা এসেছে। সোনার দাম বেড়ে যাওয়াও একটা কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। প্রসেনজিতের কথায়, “অনেকের হাতেই নগদের জোগান কমেছে এটা ঠিক। যাঁদের আছে তাঁরাও হয়ত খরচ করতে ভয় পাচ্ছেন।” এ দিন দোকানে এসেছিলেন একটি ঠিকাদারি সংস্থার কর্ণধার জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। প্রতিবার সোনার জিনিস কিনলেও এ বার রুপোর কিনেছেন। নিয়মরক্ষার জন্য অবশ্য সোনার একটা ছোট্ট টিপ কিনেছেন। জয়দীপের কথায়, “পুজোর দু’মাস আগে থেকে সরকারি-বেসরকারি দু’ক্ষেত্রেই নতুন নির্মাণ কাজ হয়নি। যে কাজগুলি চলছে তার পাওনাও বকেয়া।’’
সোনা-রূপোর চাহিদা কমলেও স্টিলের বাটি, পিতলের বাসন বিক্রি হয়েছে দেদার। প্রথা মানতে তুলনায় সস্তা জিনিসের চাহিদা বেড়ে যাওয়াই মন্দার লক্ষণ বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy