কালিয়াগঞ্জে পুরভোটের প্রচারে দীপা দাশমুন্সি। শুক্রবার গৌর আচার্যের তোলা ছবি।
পুরনির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পরে একদিন বুড়ি ছোঁয়ার মতো করে এসেছিলেন। তারপরে ফের এলেন ভোটের মুখে। তবে রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সি জানিয়েছেন, ভোট পর্যন্ত তিনি এ বার এলাকাতেই থাকবেন। কিন্তু তাতেও কালিয়াগঞ্জ পুরসভা কংগ্রেস ধরে রাখতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে দলের মধ্যেই। কংগ্রেসেরই একাংশের দাবি, এই এলাকায় বিজেপি-র সংগঠন শক্তিশালী হয়েছে। গত লোকসভা ভোটে দুটি ওয়ার্ডে তারা এগিয়েও ছিল। পাশাপাশি তৃণমূলও শক্তিবৃদ্ধি করেছে। কংগ্রেসের স্থানীয় নেতারা জানাচ্ছেন, পুরভোটের প্রচার জমে উঠলেও দলের জেলা স্তরের বড় নেতাদেরও প্রায় দেখাই যায় না। যেখানে গত দু’সপ্তাহ ধরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অমল আচার্য কালিয়াগঞ্জতকই ঘাঁটি করে পড়ে রয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে দীপাদেবী এ বার ভোট পর্যন্ত এখানেই প্রচার করবেন শুনে দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা খুশি। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দলের শতাধিক কর্মী সমর্থকদের নিয়ে কালিয়াগঞ্জ পুরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ১৩ কিলোমিটার এলাকা পদযাত্রা করে নির্বাচনী প্রচার চালান দীপাদেবী। এরপর শ্রীকলোনি এলাকায় নিজের বাড়িতে কালিয়াগঞ্জ পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী অরুণ দে সরকার, উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা দলের কালিয়াগঞ্জের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পবিত্র চন্দ সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন দীপাদেবী। ওই বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনে বিশেষ কোনও দলকে গুরুত্ব না দিয়ে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলকে প্রতিপক্ষ ধরে নিয়ে শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী প্রচার শুরু করুন।’’ হাটে, বাজারে, চায়ের দোকান সহ বাড়ি বাড়ি পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে গত দু’দশকের পুরসভার উন্নয়নমূলক কাজকর্ম তুলে ধরে কংগ্রেস প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানান তিনি।
আগামী ২৫ এপ্রিল কালিয়াগঞ্জ পুরসভার নির্বাচন। ১৯৯৪ সাল থেকে কংগ্রেস পুরসভার ক্ষমতায় রয়েছে। পুরসভার মোট ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০০৯ সালে কংগ্রেস ১৩টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়ে পর পর চারবার পুরসভার ক্ষমতা দখল করে। দলীয় সূত্রের খবর, এদিন দীপাদেবী দলীয় নেতা ও প্রার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও আত্মতুষ্টিতে না ভোগার জন্য সতর্ক করে দেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতি ও নির্বাচনকে একসঙ্গে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনে আমি ও আমার স্বামী সবসময়ই বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিপক্ষ ধরে নিয়ে প্রচার চালিয়ে দলগত সাফল্য পেয়েছি। তাই পুরসভা নির্বাচনেও দলকে তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপিকে সমানভাবে প্রতিপক্ষ মনে করতে হবে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এ বছর পুরসভা নির্বাচনে চতুর্মুখী লড়াই হবে।’’
প্রসঙ্গত, দীপাদেবীর স্বামী রায়গঞ্জের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি গত প্রায় সাত বছর ধরে অসুস্থ হয়ে দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছেন।
এদিন অরুণবাবু ও পবিত্রবাবুকে সঙ্গে নিয়ে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত দীপাদেবী কালিয়াগঞ্জের ২,৩,৪,৫,৬,৭,১৪,১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজপাড়া, পুরনো রেজিস্ট্রি অফিসপাড়া, মজলিসপুর, মসলপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, বাঁশতলা, নেতাজি সুভাষ রোড, নদীরপাড়া, শ্মশানকলোনি, নেপালিপাড়া, পীরতলা, বজরংবলি রোড হয়ে ধনকলমোড় পর্যন্ত পদযাত্রা করেন। প্রতিটি ওয়ার্ডেই দীপাদেবীর সঙ্গে পদযাত্রায় যোগ দেন দলের অসংখ্য কর্মী সমর্থক। তার মধ্যে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পথচারী, ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের দিকে কখনও তিনি হাত নাড়িয়ে আবার কখনও হাতজোড় করে হাসিমুখে দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়ী করার আর্জি জানান। বিভিন্ন ওয়ার্ডে মহিলা বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বার হয়ে দীপাদেবীর সঙ্গে হাত মেলাতে ও তাঁকে জড়িয়ে ধরতেও দেখা যায়। অনেকে আবার তাঁর পা ছুঁয়েও প্রণাম করেন। পদযাত্রা চলাকালীন দীপাদেবী অভিযোগ করেন, তৃণমূল বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ও ধর্মের নামে শপথ করিয়ে ভোটে জেতার চেষ্টা করছে।
জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য অবশ্য সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা দাবি করেন, ‘‘গত দুই দশকের কংগ্রেস পরিচালিত কালিয়াগঞ্জ পুরসভার অনুন্নয়নের প্রতিবাদে ও উন্নয়নের স্বার্থে এবছর বাসিন্দারা তৃণমূল প্রার্থীদের সমর্থন করবেন। দীপাদেবীরা এটা বুঝে গিয়ে বাসিন্দাদের বিভ্রান্ত করতে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পালের অভিযোগ, ‘‘কংগ্রেস দু’দশক কালিয়াগঞ্জ পুরসভার ক্ষমতায় থাকলেও বাসিন্দাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী রাস্তাঘাট, নিকাশি, আলো সহ বিভিন্ন নাগরিক পরিষেবার উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহের কাজ শুরু হয়নি। তাঁর কটাক্ষ, পুরসভা নির্বাচনের লড়াইটা এ বছর কংগ্রেসের কাছে অত্যন্ত কঠিন। দীপাদেবী তা বুঝতে পেরেই সিপিএম সহ সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।’’
বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘দুই দশকের কংগ্রেস পরিচালিত কালিয়াগঞ্জ পুরসভার ধারাবাহিক অনুন্নয়ন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে কালিয়াগঞ্জ শহরের মানুষ এ বছর পুরসভা নির্বাচনে রায় দিতে চলেছেন। দীপাদেবী সেটা বুঝতে পেরেই বিরোধীদের গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy