Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Siliguri

বন্ধ ঘরে সালিশি সভায় ‘কুকথা’, বিষ খেয়ে আত্মহত্যা আদিবাসী বিধবা মহিলার! উত্তাল ফাঁসিদেওয়া

বন্ধ ঘরে সালিশি সভা ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের অপমান সইতে না পেরেই মহিলা আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করে গ্রামের মাতব্বরদের গ্রেফতারির তুললেন পড়শিরা।

ফাঁসিদেওয়া থানা

ফাঁসিদেওয়া থানা

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:০৮
Share: Save:

বিষ খেয়ে আদিবাসী বিধবা মহিলার আত্মহত্যার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়াল শিলিগুড়ির মহকুমা পরিষদের ফাঁসিদেওয়া এলাকায়। বন্ধ ঘরে সালিশি সভা ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের অপমান সইতে না পেরেই মহিলা আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করে গ্রামের মাতব্বরদের গ্রেফতারির তুললেন পড়শিরা। গ্রামবাসীদের দাবি, অভিযুক্তেরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত মৃতদেহ সৎকার করবেন না তাঁরা।

ঘটনার সূত্রপাত কয়েক মাস আগে। লিম্বুটারি এলাকার বাসিন্দা রেশমিতা লাকড়া তিরকে নামে ওই আদিবাসী মহিলার স্বামী একটি পথ দুর্ঘটনায় যান। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। কখনও চাষের কাজ করে, কখনও আবার দিনমজুরি করে ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। পরিবারের অভিযোগ, স্বামীর মৃত্যুর পর নির্মল গোপ নামে এক ব্যক্তি বিভিন্ন সময় রাস্তাঘাটে, এমনকি গভীর রাতে মত্ত অবস্থায় বাড়িতে হানা দিয়ে রেশমিতার উপর মানসিক ও শারীরিক ভাবে অত্যাচার চালাতেন। বেশ কয়েক দিন ধরে এই ঘটনা ঘটতে থাকায় শেষমেশ ফাঁসিদেওয়া থানার দ্বারস্থ হন রেশমিতা ও তাঁর পরিবার। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ নির্মলকে আটক করলেও তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে দাবি করে রেশমিতার পরিবার।

পড়শিদের দাবি, ওই ঘটনার পর চলতি মাসের ২০ তারিখ প্রাথমিক শিক্ষক রবিন গোপের বাড়িতে একটি সালিশি সভা ডাকা হয়। রবিন ছাড়াও সেখানে ছিলেন ফাঁসিদেওয়ার তৃণমূল নেত্রী ভারতী সিংহ-সহ কয়েক জন মাতব্বর। ওই সভায় মহিলাকে ডেকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করা হয়। শুধু তাই নয়, পরিবারের অভিযোগ, বেশ কিছু কাগজে সইও করিয়ে নেওয়া হয় তাঁকে দিয়ে। এর পর বাড়ি ফিরে ওই রাতেই বিষ খান রেশমিতা। পড়শিরা জানান, তাঁকে প্রথমে ফাঁসিদেওয়া প্রাথমিক হাসপাতালে পরে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। শুক্রবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।

রেশমিতার বোন সঞ্জনা ওরাঁও বলেন, ‘‘দিদিকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। আমরা যাঁর (নির্মল গোপ) বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলাম, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই করল না পুলিশ। উল্টে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হল। গ্রামের প্রত্যেকেই জানে। দিনের পর দিন লোকটি দিদির উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালিয়েছে। এখন ওঁর ছেলেমেয়েকে কে দেখবে? আর সালিশি সভায় কী এমন হল যে ওঁকে বিষ খেতে হল।’’ মা রাজকুমারী লাকড়া বলেন, ‘‘আমরা কেউই জানি না যে সালিশি সভা ডাকা হয়েছে। আমাদের জানানোও হয়নি। শুধুমাত্র আমার মেয়েকে ডাকা হয়েছিল। এর পর যখন বিষ খেয়েছে, তখন পাড়ার লোকেরা খবর দিয়েছে আমাদের। দোষীদের শান্তি চাই।’’ বন্ধ ঘরে কেন সালিশি সভা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন গ্রামবাসীরা। উজালা মিঞ্চ নামে পড়শি বলেন, ‘‘কী কারণে এক জন মহিলাক নিয়ে বন্ধ ঘরে ডেকে সালিশি সভা করা হল? রবিন গোপের বাড়িতে মিটিং হয়েছিল। রেশমিতা হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন আমাদের জানিয়েছে, সালিশি সভায় ওঁকে দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সই করানো হয়েছে। নোংরা কথা বলা হয়েছে। আমরা মৃতদেহ নিয়ে থানায় থাকব। রবিন গোপ, নির্মল গোপ ও ভারতী সিংহ গ্রেফতার না-হওয়া পর্যন্ত আমরা মৃতদেহ সৎকার করব না।’’ ওই সালিশি সভা নিয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান বসন্ত মিঞ্চ। তাঁর কথায়, ‘‘এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান হিসেবে আমাকে ওই সভায় ডাকা হয়নি। সেখানে কী হয়েছে, তা আমি জানি না। তবে দোষীদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া দরকার।’’

গ্রামবাসীদের সূত্রে খবর, রেশমিকার মৃত্যুর পর থেকেই তিন অভিযুক্তের দেখা মিলছে না। তাঁদের মধ্যে রবিন ও ভারতীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি। নির্মলের সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পড়শিদের দাবি, তিনি পলাতক।

অন্য বিষয়গুলি:

Siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy