Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

চাকা গড়িয়েই ওপারে পাচার সাইকেল

সীমান্তে পাচারের তালিকায় সাইকেলও। এপারের পুরনো সাইকেল চড়া দামে বিকোচ্ছে ওপারের বাজারে। কুয়াশার আড়ালে কীভাবে চোরাচালান বাড়ছে, তারই অন্তর্তদন্তের আজ দ্বিতীয় কিস্তি।সীমান্তে পাচারের তালিকায় সাইকেলও। এপারের পুরনো সাইকেল চড়া দামে বিকোচ্ছে ওপারের বাজারে। কুয়াশার আড়ালে কীভাবে চোরাচালান বাড়ছে, তারই অন্তর্তদন্তের আজ দ্বিতীয় কিস্তি।

নতুন সাইকেলে লাভের পরিমাণ কম এবং ঝুঁকি বেশি থাকায় এই কারবারে যুক্তদের কাছে পুরনো সাইকেলের চাহিদাই বেশি। ছবি: শাটারস্টক।

নতুন সাইকেলে লাভের পরিমাণ কম এবং ঝুঁকি বেশি থাকায় এই কারবারে যুক্তদের কাছে পুরনো সাইকেলের চাহিদাই বেশি। ছবি: শাটারস্টক।

সজল দে
মেখলিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:০৬
Share: Save:

শীতের বিকেলে চারিদিক কুয়াশায় ঢাকা। গ্রামের রাস্তায় দেখা গেল, চাষের মাঠ হয়ে সীমান্তের দিকে সাইকেল চালিয়ে গল্প করতে করতে চলে গেল কয়েকজন অল্পবয়সী ছেলে। আপাতসাধারণ সহজ এই দৃশ্যে কোনও সন্দেহের অবকাশ থাকার কথা নয় কারও। কিন্তু সীমান্তের গ্রামগুলোয় এই দৃশ্যই এখন চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর। কারণ ওই ভাবে গল্প করতে করতেই কুয়াশার আড়ালে, রাতের অন্ধকারে ওপারে পাচার হয়ে যায় সাইকেল।

বাংলাদেশে ভারতীয় সাইকেলের খুব চাহিদা। তবে নতুন নয়, পুরনো সাইকেলেরই বেশি চাহিদা ওপারে। এখান থেকে চোরাকারবারিরা সাইকেল পুরনো দামে কিনে নিয়ে ওখানকার বাজারে কয়েকশো টাকা বেশি দামে বিক্রি করে। এই কারবারের মধ্যে থাকে আরও কিছু লোকজন। সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রামের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সারা বছর চোরাপথে বাংলাদেশে যে পরিমাণ সাইকেল যায় শীতের মরসুমে সেই সংখ্যাটা অনেকটাই বেড়ে যায়। তাঁরাই জানালেন, নতুন সাইকেলের যে চাহিদা নেই তা নয়। কিন্তু নতুন সাইকেলে লাভের পরিমাণ কম এবং ঝুঁকি বেশি থাকায় এই কারবারে যুক্তদের কাছে পুরনো সাইকেলের চাহিদাই বেশি। ফলে সাইকেল চুরির ঘটনাও বাড়ছে।

একটা সময় মেখলিগঞ্জ ব্লকে পুরনো একটি সাইকেল বিক্রির বাজার ছিল। বেশ কয়েকজন সাইকেল ব্যবসায়ী জানালেন, বাজারে যে পুরনো সাইকেলগুলো বিক্রি হত তার বেশিরভাগই চোরাই ও অভাবের তাড়নায় বিক্রি করা সাইকেল। বর্তমানে সেই সাইকেলের বাজার না থাকলেও কারবারে যুক্তরা কিন্তু থেকেই গিয়েছে। বাজারের বদলে এখন বিভিন্ন ঘাঁটি তৈরি হয়েছে, যেখানে মজুত থাকে পুরনো সাইকেল। এত পুরনো সাইকেল আসে কোথা থেকে? নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গিয়েছে, মেখলিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা, ধূপগুড়ি, ফালাকাটা, মালবাজার, ময়নাগুড়ি থেকে চোরাই সাইকেল বিভিন্ন হাত ঘুরে ওই কারবারিদের কাছে পৌঁছয়। আর ওই কারবারিদের কাছ থেকে সরাসরি সাইকেল কিনে সীমান্তের চোরাচালান কারবারিরা মেখলিগঞ্জ ব্লকের কুচলিবাড়ি ও বাগডোকরা-ফুলকাডাবরি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাংলাদেশ সীমান্তের নির্দিষ্ট কিছু জায়গা দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।

পুলিশকে ফাঁকি দিতে সাইকেল নিয়ে আসার পদ্ধতিরও বদল হয়েছে। কারণ, একটা সময় ছোট বা বড় গাড়ির ছাদে করেই মেখলিগঞ্জ পর্যন্ত নিয়ে আসা হত সাইকেল। যার ফলে এক একজন কারবারি দু’তিনটে করে সাইকেল নিয়ে আসত। কিন্তু এখন পুলিশের নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় সাইকেল চালিয়ে আনা হয়। এই কাজে স্থানীয় ছেলেদের কাজে লাগানো হয়। সাইকেলটি চালিয়ে নিয়ে সীমান্তের নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌছে দিলেই হাতে মেলে একশো-দেড়শো টাকা।

জানা গিয়েছে, ২৩০০ থেকে ২৫০০ টাকায় সাইকেল কিনে বাংলাদেশে বিক্রি হয় ২৮০০ থেকে ৩২০০ টাকায়। এখন সাইকেল বাংলাদেশে পাঠাতেও হয় না। সাইকেল এনে নির্দিষ্ট ঘাঁটিতে মজুত রাখলেই কারবারিরা খোলা সীমান্ত দিয়ে এপারে এসে দাম মিটিয়ে সাইকেল নিয়ে
যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh India Border Cycle Smuggling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy