Advertisement
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Coupon for Water

জল নিতে ঠেলাঠেলি, ভিড় সামলাতে কুপন

বিভিন্ন জায়গায় ট্যাঙ্ক পাঠানো দরকার। তা সম্ভব হচ্ছে না। তাতে এক-এক দিন ওয়ার্ডের এক-এক জায়গায় জলের ট্যাঙ্ক পাঠানোর চেষ্টা করছেন পুরপ্রতিনিধিদের একাংশ।

শিলিগুড়ি পুর নিগমের পক্ষ থেকে পঁচিশ নম্বর ওয়ার্ডে জলের পাউচ ও ট্যাঙ্ক দিয়ে পানীয় জল সরবরাহ।

শিলিগুড়ি পুর নিগমের পক্ষ থেকে পঁচিশ নম্বর ওয়ার্ডে জলের পাউচ ও ট্যাঙ্ক দিয়ে পানীয় জল সরবরাহ। ছবি:বিনোদ দাস।

সৌমিত্র কুন্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৪ ০৮:২৪
Share: Save:

দোকান খোলার পর থেকেই শিলিগুড়ি শহরের গোপাল মোড়ের একটি জলের দোকানে জল কিনতে ভিড়। পানীয় জল কিনতে ঠেলাঠেলি। একই পরিস্থিতি তিলক রোডে একটি জলের দোকানেও। যাদের জল কেনার সামর্থ্য নেই, পুরসভার জলের ট্যাঙ্কের জন্য তাঁরা অপেক্ষা করছেন। বেলা ১২টার সময়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কুরেশি মহল্লায় পানীয় জলের ট্যাঙ্ক থেকে জল নিতে ভিড় করেছে অন্তত ৩০ জন। তার আগে ১০০ জন জল নিয়েছেন। ভিড় সামলাতে ওয়ার্ড কমিটির তরফে কুপন বিলি করা হচ্ছে।

ফাতমা খাতুন, বেহানা খাতুন, মহম্মদ আখতার, প্রেম পাণ্ডেরা। কারও হাতে জার, কারও হাতে বালতি, কারও হাতে একাদিক বালতি, জার। প্রেম বলেন, ‘‘কলের জল খারাপ। গন্ধ আসছে। ওই জল কয়েক দিন ধরেই খেতে পারছি না। পুরসভার জলের ট্যাঙ্ক থেকে জল নিচ্ছি।’’ পুর কর্তৃপক্ষ বুধবার মহানন্দার জলপানে নিষেধ করেছে। কারণ, পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে জল দূষিত। বিকল্প ব্যবস্থা করতে ২৬টি ট্যাঙ্ক পাঠানো হচ্ছে। ওয়ার্ড রয়েছে ৪৭টি। সে কারণে প্রতিটি ওয়ার্ডে এক বেলা করে জলের ট্যাঙ্ক পাঠানো হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, একটি ওয়ার্ডের জন্য একটি ট্যাঙ্ক পাঠালেও পরিস্থিতি সামলানো মুশকিল। কারণ, ওয়ার্ডের সব জায়গার লোক সেখানে গিয়ে জল নিতে পারবেন না। বিভিন্ন জায়গায় ট্যাঙ্ক পাঠানো দরকার। তা সম্ভব হচ্ছে না। তাতে এক-এক দিন ওয়ার্ডের এক-এক জায়গায় জলের ট্যাঙ্ক পাঠানোর চেষ্টা করছেন পুরপ্রতিনিধিদের একাংশ। বরো চেয়ারম্যানদের সকাল থেকে এ কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে। তবে পুরসভার কর্মীদের পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ।

মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘‘কোথাও যাতে জলের কালোবাজারি না হয়, সে জন্য পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুরসভাও নজরদারি রাখছে। পানীয় জলের ট্যাঙ্কি সব ওয়ার্ডের ভাগ করে পাঠানো হচ্ছে। বড় ওয়ার্ডে একাধিক গাড়ি পাঠানো হচ্ছে।’’ পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, ভূগর্ভস্থ জল পাম্প করে তুলে সেই জল ট্যাঙ্কে পাঠানো হচ্ছে। অভিযোগ, ঝঙ্কার মোড়ে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলাধার রয়েছে। সেখান থেকে যে জল সকালে ভরা হচ্ছিল, তা ভাল নয়। পরে, তা নিয়ে খোঁজ বর নেওয়া হয়। শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ তার মধ্যে অভিযোগ তুলেছেন, মেয়র যে ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন, সেই ওয়ার্ডে দিনভর জলের ট্যাঙ্কের ব্যবস্থা করেছে পুরসভা। আর অন্য ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের আধ বেলার জন্য জল পাঠানো হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য এবং করিগরি দফতরের সাহায্য নিয়ে প্রতিদিন এক লক্ষ জলের পাউচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই মতো পাঁচটি বরোতে গড়ে ২০ হাজার করে, প্রতিদিন পাউচ বিলির কথা ঠিক হয়। তাতে সকলকে জলের পাউচ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এ দিন রাজ্যের উদ্যোগে মালদহ, কোচবিহার এবং কলকাতা থেকে আরও তিনটি ‘মোবাইল ট্রিটমেন্ট ইউনিট’ পাঠানো হচ্ছে। তা দিয়ে বেশি করে জলের পাউচ যাতে সরবরাহ করা যায়, সে চেষ্টা চলছে। এ দিন দুপুরে বরোগুলোতে ঘুরে পাউচ বিলির খোঁজ নেন মেয়র গৌতম দেব, ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার, জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত। অনেক এলাকাতেই জলের গাড়ি পৌঁছয়নি। এ দিন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গঙ্গানগর এলাকার চায়ের দোকানি দিলীপ রায় বলেন, ‘‘জল নেই। কুয়োর জল দিয়ে চা বানাচ্ছি।’’ এলাকার বাসিন্দা বিনোদ রায় বলেন, ‘‘৩০ টাকার জার ৬০ টাকা ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উপায় না পেয়ে মানুষ তাই কিনছেন। আমাকেও কিনতে হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE