Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

লকডাউন চললেও পেট তো নিষেধ মানছে না

আমার তিন ছেলেমেয়ে। ছেলে ইসলামপুর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর দুই মেয়ের  একজন চলতি বছরের মাধ্যমিক ও আরেকজন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

সীমা গুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২০ ০৫:২৩
Share: Save:

অভাবের সঙ্গে লড়াই করেছি, কিন্তু এই পরিস্থিতিটা একদম আলাদা, একদম অচেনা। ২০১৩ সালে হঠাৎ করে স্বামী মারা গেলেন। তারপর থেকে শুরু অভাব আর আমার বোঝাপড়া। আয়ের উৎস বলতে স্বামী রেখে গিয়েছিলেন ইসলামপুর হাইস্কুলের মোড়ের মাথায় একটি ছোট্ট চায়ের দোকান। সেই দোকানের উপর নির্ভর করেই চলত পাঁচটা মানুষের থাকা, খাওয়া, পড়াশোনা— সব।

আমার তিন ছেলেমেয়ে। ছেলে ইসলামপুর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর দুই মেয়ের একজন চলতি বছরের মাধ্যমিক ও আরেকজন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। আমাদের সঙ্গে থাকেন বৃদ্ধা মা-ও।

ওই দোকান থেকে প্রতিদিন দেড়শো-দু'শো টাকামতো আয় হত। চায়ের দোকান, কিন্তু মাঝে মাঝে লুচি-তরকারিও বানাতাম। স্কুলের ছাত্র-শিক্ষকেরাও টিফিন করতেন। দোকান ছোট হলেও ভাল-মন্দ মিশিয়ে আমাদের কোনওরকমে চলে যাচ্ছিল।

আমার দোকানে তো অনেকে আসেন, তাঁদের কথাবার্তাও কানে আসত। কিছুদিন আগে থেকেই শুনছিলাম করোনাভাইরাসের কথা। তখন তো ভাবিনি আমার দেশেও এই মারণ ভাইরাস থাবা বসাবে। লকডাউনের আগে থেকেই ভিড় কমতে শুরু করল। পরীক্ষা চলছিল তাই ছাত্রদেরও ভিড় ছিল না। পরে সরকারি নির্দেশে হাইস্কুলও ছুটি হয়ে গেল। তখনও বুঝতে পারিনি কী হতে চলেছে।

তার পরে হঠাৎ শুনি পুরো দেশ বন্ধ, লকডাউন চলবে। মাথায় হাত পড়ল। আমার দিকে তাকিয়ে আছে আরও চার জন। ঘর থেকে বেরোনো নিষেধ। দোকান খোলা তো দূরের কথা। তারপর বলা হল খাবার মজুত করে নিতে। কিন্তু আমরা তো দিন-আনা দিন-খাওয়া মানুষ। খাবার মজুত করব কী করে! একদিনের যা আয় হত, সেটা দিয়ে পরের দিনের ব্যবসার জিনিস কিনতাম। কী মজুত করব? কী ভাবে?

আর এ সময় তো বিকল্প কাজের সন্ধানও করতে পারছি না। কারণ যা বুঝলাম সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে, না হলে এই সমস্যা মিটবে না। আর সমস্যা না মিটলে তো আমার দোকানও খুলবে না। তাই সব মেনে চলছি। কিন্তু পেট তো সে কথা শুনতেও চাইছে না, বুঝছেও না।

পাড়াপড়শি, এদিক-ওদিক থেকে সহৃদয় ব্যক্তিদের সাহায্যেই দিন কাটছে। কেউ কিছু চাল, কেউ আলু দিয়ে সাহায্য করছেন। হাতে কানাকড়ি সম্বল নেই। এ ভাবে কতদিন চলবে জানি না।

এখন সব সময় শুধু একটাই কথা বলি, হে ঈশ্বর! সবাইকে সুস্থ করে দাও, সবাইকে ভাল রাখ। সব কিছু যেন আগের মতো হয়ে যায়।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy