প্রতীকী ছবি
দমদমের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে গোলমাল এড়াল জলপাইগুড়ি।
অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতির জেরে প্যারোলে মুক্তি চেয়ে মূলত বিচারাধীন বন্দিরা তাণ্ডব চালিয়েছি দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। সেই বিক্ষোভ থামাতে গুলিও চালাতে হয় বলে দাবি। শনিবার একই দাবিতে ভাঙচুর চালিয়ে মূলত বিচারাধীন বন্দিদের তুমুল বিক্ষোভ হয় জলপাইগুড়ি জেলেও। জেলের একটি অংশের দখল চলে যায় বন্দিদের হাতে। ৬ কারারক্ষীকে ‘বন্দি’ বানিয়ে নেয় বিক্ষোভকারীরা। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার চেষ্টায় জেলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বিক্ষোভ থামাতে খরচ হয়নি একটিও গুলি, চালাতে হয়নি লাঠিও। দমদম থেকে শিক্ষা নিয়ে ধৈর্য ধরেই সাফল্য, বলছে কারা দফতর।
বিক্ষোভ যখন শুরু হয়ছে তখন দুপুর বারোটা। জামিন এবং প্যারোলে মুক্তির দাবিতে বন্দিদের মনে যে ক্ষোভ জমছিল, তার আঁচ ছিল বলে জেল সূত্রের দাবি। কিন্তু বন্দিরা যে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছেন, সে খবর ছিল না। দু’টি ভাগ রয়েছে জেলে। পুরনো কম্পাউন্ড এবং পিছন দিকে নতুন কম্পাউন্ড। জেল সূত্রের দাবি, এ দিনই দুপুরে হঠাৎই জনা ত্রিশেক বন্দি পাথর ছুড়তে শুরু করেন। কারারক্ষীরা ছুটে যেতেই তাঁদের উপর হামলা শুরু হয়। ঠিক কী হতে চলেছে, তা জেল কর্তৃপক্ষ বোঝার আগেই বন্দিরা নতুন কম্পাউন্ডে ঢোকার সব ক’টি দরজা বন্ধ করে মূল দরজার সামনে কালভার্টও উপড়ে দেন। ফলে জেল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এই অংশ। জেলের হিসেবে নতুন কম্পাউন্ডে অন্তত পাঁচশো বন্দি জড়ো হয়েছিলেন তখন। গোটা জেলে ছিল চোদ্দোশোর কাছাকাছি বন্দি। বন্দিদের একাংশ সব আলো, সিসি ক্যামেরাও ভেঙে দেন বলে অভিযোগ। ততক্ষণে জেলের সাইরেন বাজতে শুরু করেছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শহরের একাংশে। হঠাৎই জেল কর্তৃপক্ষের কাছে খবর আসে, ৬ কারারক্ষী এবং সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে আসা ৮ কর্মীও নতুন কম্পাউডে আটকে। বন্দিদের তখন দাবি, তাঁদের কথা মানা না হলে কারারক্ষী এবং সাফাইকর্মীদের ছাড়া হবে না।
পুলিশ বাহিনী থেকে দমকল, সবাই ততক্ষণে জড়ো হয়েছে জেলের বাইরে। জেল ঘিরে ফেলা হয়েছে। কিন্তু আশঙ্কা ছিল, বন্দিদের হাতে আটকে থাকা কারারক্ষী এবং কর্মীদের কী হবে? জেলের নজরমিনার এবং আশেপাশের উঁচু ভবন থেকে পুলিশ দেখে, বন্দিরা ভেতরে রড, লাঠি, প্রচুর ইট নিয়ে তৈরি রয়েছে। পুলিশ জোর করে ঢুকলে বন্দিদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়তো সম্ভব হবে, কিন্তু হতাহতের ঘটনা ঘটবেই বলে ধরেই নেন পুলিশকর্তারা। অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েও তাই অপেক্ষা করতে থাকে পুলিশ।
দুপুর দেড়টা পর বন্দিদের ভাঙচুর বন্ধ হয়। বেলা গড়াতে থাকে। বিক্ষোভকারীদের অনেকে ক্লান্ত হয়ে নিজেদের ঘরে ঢুকে যান। কেউ কেউ মাঠে বসে পড়েন। তখন জেলা পুলিশ সুপার অভিষেক মোদী হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে বন্দিদের আলোচনার প্রস্তাব দেন। দূর থেকে বোঝাতে শুরু করেন জেলের আধিকারিকরাও।
ক্লান্ত বন্দিরা রাজি হতে বেশি সময় নেননি বলে জেল কর্তৃপক্ষের দাবি। বন্দিরা নিজেদের দাবি লিখে পুলিশ সুপারের হাতে দেন। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ বন্দিরা নিজেরাই ফের কালভার্ট পেতে দরজা খুলে দেন। আইসি কোতোয়ালি বিশ্বাশ্রয় সরকার মাইক হাতে ভেতরে ঢুকে বন্দিদের, ‘ভাই’, ‘বাবু’ সম্বোধন করে বলেন, “এসো, আমরা একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করি।” পুলিশের অনুরোধে এ দিন সকলকে ঘরেই খাবার পাঠানো হয়। বিকেল পাঁচটা নাগাদ এসপি বলেন, “পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy