Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

বিয়ের খরচ কমিয়ে গরিবকে খাবার

রোজ প্রায় ৪৫ কুইন্টাল করে আনাজ বিলোচ্ছেন তাঁরা সাধারণ মানুষের মধ্যে, গত ৪০ দিন ধরে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

অনুপরতন মোহান্ত
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২০ ০১:১৯
Share: Save:

ভোর ৫টায় তিনটে টোটো নিয়ে বালুরঘাটের কামারপাড়া হাটে হাজির শহরের জটালি মোড়ের দশ যুবক। পাইকারি দামে আলু, পটল, টোম্যাটোর মতো আনাজপাতি কিনে টোটোয় ভরে সকাল ৮টার মধ্যে পৌঁছে গেলেন নির্ধারিত জায়গায়। তার আগে থেকে সেখানে প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে রাস্তায় থলি হাতে শতাধিক মানুষের লম্বা লাইন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এরপর একে একে শুরু বিনামূল্যে আনাজ বিতরণ।

লকডাউনে কর্মহীন গরিব মানুষের মধ্যে আনাজ বিতরণে ‘সব্জি এটিএম’ নাম দিয়ে বেসরকারি উদ্যোগে ওই ত্রাণ বিলি শুরু করেন স্হানীয় ছোট ব্যবসায়ী প্রেমানন্দ শীল ও বিরাজ বিশ্বাস। রোজ প্রায় ৪৫ কুইন্টাল করে আনাজ বিলোচ্ছেন তাঁরা সাধারণ মানুষের মধ্যে, গত ৪০ দিন ধরে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে সমাজসেবার ওই কর্মযজ্ঞে এখন শামিল অনেক শহরবাসী। প্রেমানন্দ জানান, এখন আনাজের পাশাপাশি শিশুদের দুধ, বিস্কুটও দেওয়া হচ্ছে।

বালুরঘাটের চকভৃগুর সরোজরঞ্জন সেতুর মোড়ে ভবঘুরেদের রান্না করা খাওয়ানো শুরু হয়েছিল এক শনিবার। এখন সপ্তাহে সাত দিনই লকডাউনের আপাত নিস্তব্ধতার মধ্যে এক অন্নপূর্ণার হোটেল বনে গিয়েছে বালুরঘাট শহরের ওই চকভৃগুর মোড়। সেখানে নিঃশব্দে পাতা হাতে নিয়ে টুলে বসে পড়ে খেয়ে যাচ্ছেন ভবঘুরে থেকে সহায় সম্বলহীন অভুক্ত মানুষেরা। ওই খয়রাতি সেবার অন্যতম উদ্যোক্তা যুবক নীতীন দাসের কথায়, লকডাউনের মধ্যে রোজই এখন ৭-৮ কেজি চাল বেশি রান্না করতে হচ্ছে। রোজ সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যে ৬টার মধ্যে ৫০-৬০ জন দুঃস্হ মানুষ এসে চুপচাপ খেয়ে চলে যান। এলাকার যুবক নীতীন দাস, কলেজ পড়ুয়া জয় সূত্রধর, কৌশিক চক্রবর্তী, মনোজ দাস, রিন্টু দে-র মতো জনা আটেক যুবক সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে নিরন্ন মনুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন।

সমবেত প্রচেষ্টার পাশাপাশি বালুরঘাটে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন একাধিক মানুষ। তাঁদের একজন শহরের মণিমেলা পাড়ার যুবক রজত কর্মকার। লকডাউনের শুরু থেকে স্কুটি ভর্তি করে খাদ্যসামগ্রী প্যাকেট করে নিয়ে রজত প্রত্যন্ত গ্রামে দুঃস্হদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন। শহরের একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালান রজত। লকডাউন উঠলেই বিয়ে। ওঁর কথায়, "বিয়ের প্রীতিভোজের খরচ কমিয়ে দুঃস্হ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।" আবার শহরের প্রাচ্যভারতী এলাকার দেবজ্যোতি সাহা, প্রকাশ সূত্রধর, বিশ্ব চৌধুরীর মতো ১৮ জন স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া নিজেদের মধ্যে ১০০-২০০ টাকা চাঁদা তুলে গত বুধবার আড়াইশো জন কর্মহীন মানুষের মধ্যে আনাজ বিলি করে।

আনাজ এটিএমের প্রেমানন্দ, চকভৃগু মোড়ের নীতীন, রজত কিংবা প্রকাশ, বিশ্বদের মতো এক ঝাঁক পড়ুয়াই শুধু নন, দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি, গঙ্গারামপুর, বুনিয়াদপুর, হরিরামপুর এলাকার কত মানুষ কোথাও সমবেতভাবে, আবার কোথাও ক্লাব এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসহায় দুঃস্হ ও নিরন্ন মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার তাগিদে পথে নেমেছেন। নিজে থেকে অনুভব করে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেকেই বলছেন, গত ২০১৭ সালের বিধ্বংসী বন্যার সময় বালুরঘাটে ঠিক এমনটাই দেখা গিয়েছিল। দুর্যোগ, মহামারীতে বালুরঘাট এই ভাবেই এক হয়ে যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Relief
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy