Advertisement
২০ জানুয়ারি ২০২৫
Coronavirus

ভাবছি, কবে টোটো চালিয়ে স্ত্রীর ওষুধটা আনব

এখন বাড়িতে বসে বসে ভাবি, ভাগ্য কীভাবে আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশের ভিতরে ভারতীয় সাবেক ছিট ৪২ নম্বর নাজিরগঞ্জ থেকে ২০১৫ সালে এ দেশের মূল ভূখণ্ডে আসি।

নৃপেন রায় (টোটোচালক) সাবেক ছিটে স্থায়ী শিবিরের বাসিন্দা

নৃপেন রায় (টোটোচালক) সাবেক ছিটে স্থায়ী শিবিরের বাসিন্দা

নৃপেন রায় (টোটোচালক)
শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২০ ০৯:৪৩
Share: Save:

টোটো চালিয়ে আমার সংসার চলে কোনওরকমে। এই করোনাভাইরাস আতঙ্ক আর লকডাউনের বাজারে সংসারের একমাত্র আয়ের উপায়টুকুও বন্ধ। ফলে এখন প্রতিবন্ধী স্ত্রী আর সন্তানকে নিয়ে কী পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা, সেটা নিশ্চয় কাউকে বলে দিতে হবে না।

আমি আর স্ত্রী মিলে না-হয় কোনও ভাবে কষ্টেসৃষ্টে কাটিয়ে দিলাম। কিন্তু ছেলেকে তো আর না খাইয়ে রাখতে পারব না। আর অসুস্থ স্ত্রীর ওষুধও নিয়মিত দরকার। সেই টাকা জোগাড় কীভাবে হবে সেই চিন্তাতেই মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। ঘরবন্দি সকলেই। তার উপর লকডাউনের বিধিনিষেধ। কে উঠবে টোটোয়? তাই টোটো নিয়ে রাস্তায় বেরনোও বন্ধ। পুলিশ দেখলেই সোজা হাজতে ভরে দেবে। প্রায় মাসখানেক ধরে কোনও আয় নেই। সরকারি রেশন দিয়ে এতদিন চলছিল সংসার। পাশাপাশি, টোটো চালিয়ে যা আয় করতাম সেটা স্ত্রীর ওষুধ কিনতে ও ছেলের পড়াশোনার জন্য খরচ করতাম। এখন সব বন্ধ।

এখন বাড়িতে বসে বসে ভাবি, ভাগ্য কীভাবে আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশের ভিতরে ভারতীয় সাবেক ছিট ৪২ নম্বর নাজিরগঞ্জ থেকে ২০১৫ সালে এ দেশের মূল ভূখণ্ডে আসি। জমিজমা ফেলেই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এপারে এসেছি। সংসার চালাতে পেশা বদল করে কৃষিকাজ ছেড়ে থেকে টোটো চালাতে শুরু করি। কাঁটাতারের ওপারে ছিল আমাদের জমি। সেই জমিতে আগে চাষ-আবাদ করতাম। এখানে কোনও জমি করতে পারিনি। অন্যের জমিতে যে কাজ করব, তারও কোনও ঠিক নেই। গৃহস্থেরা এখন কোনও কাজের লোকও নিতে চাইছেন না। দিনকয়েক আগে সংসার চালানোর কিছু টাকা জোগাড় করতে টোটো নিয়ে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশের বাধায় সেখানে পৌঁছনোর আগেই যাত্রীদের রাস্তায় নামিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়েছে। এখন রাস্তায় বের হতেই ভয় করে। কারণ, যদি পুলিশ কিছু করে, তাহলে সংসারে সবাই পথে বসবে। কিন্তু এখন বাড়িতে বসে থাকতে খুবই খারাপ লাগছে। কতদিন আর এই ভাবে বসে থাকব? সরকার থেকে যা রেশন দিয়েছিল, তাও শেষের পথে। এবার তো উপোস করে থাকতে হবে মনে হচ্ছে। গত শুক্রবার গাড়িতে আলু লোড করে কিছু টাকা পেয়েছি। এটাই এখন শেষ সম্বল। এটা শেষ হলেই মানুষের কাছে হাত পাতা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।

ঘরের মধ্যে প্রতিবন্ধী স্ত্রীর অসহায় চাহনি আর যেন সহ্য করতে পারছি না। শুধু ভাবছি, কবে এই সঙ্কট থেকে মুক্তি পাব। কবে টোটো নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে স্ত্রীর জন্য ওষুধটা আনতে পারব।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy