ফাইল চিত্র।
২০১৭ সালের জুন মাসে। ভরা পর্যটন মরসুম। তার মধ্যে লাগাতার বন্ধের ডাক দিলেন বিমল গুরুং। ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেল হোটেল, দোকানের। পর্যটকদের সমতলে নেমে যাওয়ার জন্য হাতে গোনা কয়েক ঘণ্টা সময় দিলেন গুরুং। তিন বছর পরে ফের দার্জিলিং ঘুরতে যাওয়া কলকাতার এক পর্যটকের কথায়, ‘‘সে দিন কী ভাবে রাতারাতি বউ-বাচ্চা নিয়ে পাহাড় থেকে নেমেছিলাম, সেটা আমরাই জানি। এ বারে পাহাড়ে যাওয়ার সময়েও ভয় ভয় করছিল!’’
পর্যটন ব্যবসায়ীদের একটি হিসেব থেকে জানা যায়, সে বারে চায়ের সঙ্গে সব থেকে বেশি ধাক্কা লেগেছিল পর্যটনে। এক পর্যটন ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত টি আর টুরিজ়ম, দুই-ই সে বারে ধসে পড়েছিল।’’ এখনও তাঁরা বলেন, সে বারে ক্ষতির বহর পাঁচশো কোটি টাকার কম ছিল না।
তার পরে অবশ্য পাহাড়ে স্থিতি এসেছে। উত্তরবঙ্গের অন্য জায়গার সঙ্গে পাহাড়েও বইতে শুরু করেছে পর্যটকদের স্রোত। এক বছরের মধ্যে সিকিমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বুকিং পেয়েছে হোটেলগুলি। আসতে শুরু করেছে বিদেশি পর্যটক। গত এক বছর ধরে যে ঝিমুনি চলছে দেশের অর্থনীতিতে, তার ধাক্কা খুব বেশি লাগেনি উত্তরবঙ্গের পর্যটনে। কিন্তু এই সব সামলিয়ে যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পর্যটন, তখনই লাগল করোনা ধাক্কা। দু-এক জন পর্যটন ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘পাহাড়ে ফার্স্ট ফ্লাশের পাতা তোলা হলেও হতে পারে, কিন্তু গরমে পর্যটক আসা দূর অস্ত্।’’
ধাক্কা কতটা? পর্যটন ব্যবসায়ীদের একটি অংশের হিসেব, গরমের মরসুমে পাহাড় বন্ধ থাকলে রোজ ২৫ কোটি টাকা লোকসান হবে। মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুন, দু’মাসের মরসুম ধরা হলে লোকসান দাঁড়াবে দেড় হাজার কোটি টাকায়।
ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশেন অব ট্যুর অপারেটরস বলছে, এ বারের ধাক্কা ৯/১১ বা ২০০৮-এর বিশ্বব্যাপী মন্দার থেকেও বেশি হওয়ার আশঙ্কা। গোটা বছর মিলিয়ে এই লোকসান ৭-৮ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের একাংশের বক্তব্য, এই শিল্পের সঙ্গে সরাসরি ৫০ হাজার এবং পরোক্ষ ভাবে আড়াই লক্ষ মানুষ জড়িত। অথচ এত বড় ক্ষেত্রের জন্য কোনও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বা চা পর্ষদের মতো কোনও বোর্ডও নেই।
সাহায্যের আবেদন করে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, জিটিএ চেয়ারম্যান এবং নানা সরকারি স্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পর্যটনের জন্য প্যাকেজ চেয়েছেন। দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তাও বিশেষ প্যাকেজের দাবি তুলেছেন। রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবও পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
উত্তরবঙ্গ, সিকিমের বিভিন্ন পর্যটন সংস্থার যৌথ মঞ্চ হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজ়ম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক। সংগঠনের উপদেষ্টা রাজ বসু জানান, ‘‘আমরা জিএসটি, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ব্যাঙ্কিং, ট্রেড লাইসেন্ড, পিএফ, ফুয়েল মিলিয়ে ১৪টি বিভাগে কোটি কোটি টাকা দিয়ে আসছি। এ বার সরকারকেও আমাদের কথা ভাবতে হবে।’’ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘আমাদেরও বাঁচতে হবে। কর্মীদের বেতন দিয়ে পরিবার চালাতে হবে। কর ছাড়, ঋণ শোধে বাড়তি সময় ও আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy