Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

রিপোর্ট না-থাক, উপসর্গ থাকলে ফেরানো বারণ

স্বাস্থ্য দফতর নতুন বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রিপোর্ট না-থাকলেও করোনার উপসর্গযুক্ত, বিশেষ করে শ্বাসকষ্টের রোগীকে হাসপাতাল থেকে ফেরানো যাবে না।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২১ ০৬:২২
Share: Save:

ঘটনা-১: আচমকাই প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল বৃদ্ধের। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা নেমে গিয়েছিল ৮৫ শতাংশে। পরিচিত চিকিৎসকের পরামর্শে স্বজনেরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু ভর্তি করানো যায়নি! কারণ ওই বৃদ্ধের কোভিড পরীক্ষা করা হয়নি। তাই রিপোর্ট ছিল না।

ঘটনা-২: কয়েক দিন ধরেই জ্বর ছিল এক প্রৌঢ়ার। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। চিকিৎসকের পরামর্শে কোভিড পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু তিন দিন পরেও রিপোর্ট আসেনি। বাড়িতেও আর অক্সিজেন দিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। অগত্যা আত্মীয়েরা প্রৌঢ়াকে নিয়ে ছুটলেন হাসপাতালে। কিন্তু কোভিড হাসপাতালের কর্মীরা সাফ জানালেন, করোনা রিপোর্ট না-থাকায় তাঁরা ভর্তি করতে পারবেন না। অ্যাম্বুল্যান্সে অক্সিজেন শেষ হয়ে আসছে দেখে প্রৌঢ়ার স্বজনেরা বার বার অনুরোধ করায় ওই কর্মীরা রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের ‘অ্যাডমিশন সেল’-এ জানানোর পরামর্শ দিলেন। সেখান থেকে বললে বা হাসপাতালের শীর্ষ কর্তাদের অনুমতি মিললে তবেই প্রৌঢ়াকে ভর্তি নেওয়া সম্ভব।

করোনা আগ্রাসনের আবহে রোজই এমন অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী থাকছে শহর ও জেলা। প্রবল উপসর্গ সত্ত্বেও শুধু কোভিড রিপোর্ট না-থাকায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যাচ্ছে না এবং ভর্তি হতে না-পেরে প্রাণহানিও ঘটছে। পরে আসা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, রোগী কোভিড পজ়িটিভ ছিলেন। এমন ঘটনা যাতে আর না-ঘটে, সেই জন্য কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্য দফতর নতুন বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রিপোর্ট না-থাকলেও করোনার উপসর্গযুক্ত, বিশেষ করে শ্বাসকষ্টের রোগীকে হাসপাতাল থেকে ফেরানো যাবে না। প্রয়োজন হলে ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস’ বা 'সারি'-শয্যায় ভর্তি নিয়ে রোগীর চিকিৎসা দ্রুত শুরু করে দিতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, সঙ্কটজনক রোগীকে স্থিতিশীল না-করে এবং শয্যার ব্যবস্থা না-করে ‘রেফার’ বা অন্য কোথাও পাঠানো যাবে না।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের সই করা ওই বিজ্ঞপ্তি জানাচ্ছে: স্বাস্থ্য দফতরের পর্যবেক্ষণ, বহু সম্ভাব্য করোনা রোগীই পরীক্ষার রিপোর্ট পাচ্ছেন অনেক দেরিতে। অথচ তাঁদের অনেকেরই অবস্থা এমন যে, জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরু করা দরকার। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়ে চরম ভোগান্তি হচ্ছে ওই সব রোগীর। দীর্ঘ দিন ধরেই সঙ্কটজনক রোগীর স্বজনদের একাংশ অভিযোগ করে আসছেন যে, জরুরি পরিস্থিতিতেও হাসপাতালে ভর্তি করাতে গেলে স্বাস্থ্য দফতরের অ্যাডমিশন সেলের মাধ্যমে আসতে বলা হচ্ছে। কিন্তু অনেক সময়েই সংশ্লিষ্ট হেল্পলাইনে যোগাযোগ করা সত্ত্বেও ভর্তির ব্যবস্থা করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। ‘‘রোগী অক্সিজেনের জন্য ছটফট করছে। অথচ কখন অ্যাডমিশন সেলের নম্বরে লাইন মিলবে, তার জন্য ফোনে অপেক্ষা করতে হবে অনন্ত কাল! এটা কি কারও পক্ষে সম্ভব’’ প্রশ্ন এক রোগীর আত্মীয়ের।

এই অবস্থায় জরুরি চিকিৎসা দ্রুত শুরু করার উপরে জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য ভবন। এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বললেন, ‘‘আচমকা কোনও রোগী সঙ্কটজনক হয়ে পড়লেন। কোভিড রিপোর্ট নেই বলে বা স্বজনেরা হেল্পলাইনে যোগাযোগ করতে পারেননি বলে তাঁর চিকিৎসা হবে না— এটা তো হতে পারে না।’’

নতুন বিজ্ঞপ্তিতে সব কোভিড হাসপাতালকে জানানো হয়েছে, রিপোর্ট নেই, অথচ শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বা অন্য উপসর্গ দেখে কোভিড রোগী বলে সন্দেহ হলে তাঁকে অবিলম্বে 'সারি' ওয়ার্ডে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চালু করতে হবে। সেই সময়েই সংশ্লিষ্ট রোগীর র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে, তিনি কোভিড পজ়িটিভ কি না। স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, রিপোর্ট পজ়িটিভ এলে রোগীকে কোভিড ওয়ার্ডে পাঠাতে হবে। নেগেটিভ এলে আরটিপিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগে পর্যন্ত সারি ওয়ার্ডেই তাঁর চিকিৎসা চলবে। যদি সেই পরীক্ষার রিপোর্টও নেগেটিভ আসে, তা হলে প্রয়োজনীয় আরও কয়েকটি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে রোগীকে সাধারণ ওয়ার্ডে পাঠানো যেতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Swasthya Bhawan Coronavirus in West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy