উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
বৃহস্পতিবার দুপুর। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে শেষ মুহূর্তের তোড়জোর চলছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নির্ণয় পরীক্ষা শুরুর। হঠাৎই স্বাস্থ্য শিক্ষা দফতরের এক কর্তার ফোন এল কলকাতা থেকে। অভিযোগ, তার পরেই স্থগিত হয়ে গেল যাবতীয় কাজকর্ম।
গোটা ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে পড়েন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কেন না, ওই দিন থেকে মেডিক্যালে পরীক্ষাটি চালু হওয়ার কথা ছিল। সে জন্য আইসোলেশনে করোনা সন্দেহে ভর্তি ৮ জনের সোয়াবের নমুনাও সংগ্রহ করে রাখা ছিল। আগের দিন আলিপুরদুয়ার থেকেও একজনের সোয়াবের নমুনা এখানে পাঠানো হয়েছিল। তৃণমূল এবং মেডিক্যালের একটি সূত্রেই খবর, স্বাস্থ্য শিক্ষা দফতরের ফোনের পর কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে অধ্যক্ষ এবং ডিন যান পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের বাড়িতে। পরীক্ষা যাতে চালু করা যায়, সে জন্য ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। পর্যটনমন্ত্রী কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তাতে তৎক্ষণাৎ কোনও জবাব মেলেনি বলেই তৃণমূলের একটি অংশের দাবি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই প্রশাসনের উদ্যোগে নমুনাগুলি গাড়ি করে কলকাতায় নাইসেডে পাঠানো হয়। শুক্রবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে সুপার, অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে পরীক্ষা ব্যবস্থা দ্রুত চালু করা নিয়ে দাবি তোলেন বেশ কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা। পরে শুক্রবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পরীক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে। তাতে অনেকে আশার আলো দেখছেন।
সম্প্রতি রাজ্যের কয়েকটি হাসপাতালে সোয়াবের নমুনা পরীক্ষা চালু হয়েছে এবং হচ্ছে। সেই তালিকায় যেমন আছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল, তেমনই রয়েছে এসএসকেএম। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল সূত্রে দাবি, এখানে এই ব্যবস্থা আগে থেকে চালু না থাকলেও পরিকাঠামো ছিলই। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে এখানে ভাইরাল রিসার্চ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি গড়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার থেকে সেখানেই পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের কর্মীদের একাংশের দাবি, এর মধ্যে দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা বিবৃতি দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কৃতিত্ব দাবি করেন। ওই কর্মীদের মতে, এটা নিয়ে এই ধরনের কৃতিত্ব দাবি করার আলাদা গুরুত্ব নেই। কারণ, ল্যাবরেটরিটি কেন্দ্রীয় সরকারেরই তৈরি করে দেওয়ার কথা। এখানে রাজ্যের কোনও ভূমিকা নেই বলেই তাঁদের বক্তব্য। রাজু কেন কৃতিত্ব দাবি করলেন, তা-ও অজানা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশের। তাঁদের বক্তব্য, এই উদ্যোগের পিছনে রাজুর কোনও অবদান নেই।
পর্যটনমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। যা বলার স্বাস্থ্য দফতর বলবে। টেকনিক্যাল কিছু কারণে পরীক্ষা করা যায়নি বলে শুনেছি।’’ রাজু বিস্তা বলেন, ‘‘আমি রাজনীতি করছি না। কেন্দ্র ওই ব্যাপারে উদ্যোগী, সেটাই বলেছি।’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য পরে বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে করোনা পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। দ্রুত এখানে পরীক্ষা শুরু হবে। রাজ্য সরকারের তৎপরতা নিয়ে কারও সংশয়ের কোনও সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। আমরা যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে কাজ করছি।’’
উত্তরবঙ্গে করোনা সন্দেহে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অনেকেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের আইসোলেশনে ভর্তি। পরিস্থিতি জটিল হলে কলকাতা থেকে পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে গেলে সমস্যা হবে। বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বা অধ্যক্ষ প্রবীরকুমার দেব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy