প্রতীকী ছবি।
ওঁরা হাতে হাত রেখে লড়াই করেছেন দীর্ঘসময়। কখনও বেআইনি মদের ঠেকে হামলা চালিয়েছেন। কখনও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন। এ বারে কোচবিহারের সেই সাজিদা পারভিন, জ্যোৎস্না ঘোষেরা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধেও এবার লড়াইয়ে নেমেছেন। কোনওদিন সচেতনতার পাঠ, তো কোনওদিন খাদ্যসামগ্রী বিলি। তাঁদের নিজেদের সংসারেই খাবার নিয়ে টানাটানি। তার পরেও তাঁরাই খাবার নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন অভুক্তদের ঘরে ঘরে। তাঁদের কথায়, ‘‘এই সময়ই যদি মানুষের পাশে না থাকতে পারি, থাকব কখন?’’ যদিও পয়সার টানে ইচ্ছে অনুযায়ী মানুষকে সাহায্য করতে পারছেন না বলে ওঁদের আফসোস হচ্ছে।
সাজিদার কথাই ধরা যাক। তিনি যে একটু প্রতিবাদী, সে-কথা গ্রামের মানুষ সবাই জানেন। তিনি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করেন। নামমাত্র সাম্মানিক পান। তাঁর স্বামীর দেওয়ানহাট কলেজের সামনে ফাস্ট ফুডের দোকান। ওই দোকানও এখন বন্ধ। দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে চারজনের সংসারে তাঁর নিত্য অনটন। তার পরেও সাজিদার প্রতিদিন মানুষের পাশে দাঁড়ানো চাই। তিনি বলেন, “সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করার সময়েই আমার বিয়ে হয়ে যায়। সেই থেকে মনে জেদ চেপেছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার। স্বাভাবিক ভাবেই কারও বিপদ চোখে দেখতে পারি না। তাই নিজেরা একবেলা কম খেয়ে মানুষের জন্য পয়সা রেখে দিচ্ছি।”
তাঁর সঙ্গেই দিনরাত ঘুরছেন দিনহাটার কলেজ পাড়ার জ্যোৎস্না ঘোষ। তিনি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। তাঁর স্বামীর মিষ্টির দোকান। কিছুটা স্বচ্ছল তাঁদের পরিবার। তার পরেও গ্রামে গ্রামে ছুটে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সবাই মিলে লড়াই করতে হবে। সে জন্যেই মানুষের দ্বারে যাচ্ছি।”
কিন্তু কী করে সাজিদা-জ্যোৎস্না এই লড়াই চালাচ্ছেন? তাঁরা জানান, দীর্ঘসময় ধরে প্রমীলা বাহিনী নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন তাঁরা। সেই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। সেই সব মহিলাদের কাজ গ্রামের গরিব মানুষের উপরে হওয়া নির্য়াতনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা। তাতে কিছু মানুষের সমর্থন তাঁরা বরাবর পাচ্ছেন। তাঁরাই বসে তালিকা তৈরি করছেন গরিব মানুষদের। ইতিমধ্যেই ৩৫০টি পরিবারের হাতে খাবার তুলে দিয়েছেন ওঁরা। আরও ৪৫০টি পরিবারের তালিকা তৈরি করেছেন। মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ারের বোতলও তুলে দিচ্ছেন তাঁরা।
সাজিদা বলেন, “অনেক মানুষের কাছেই আমরা গিয়ে সাহায্য চাই। কেউ কেউ কিছুটা করেন। আমাদের ঘরের সামগ্রীর সঙ্গে সে সব নিয়েই পৌঁছই মানুষের কাছে।” ওই দলেরই প্রবীণা আসমা বেওয়া বলেন, “জাতি-ধর্ম নয়, আমরা সবাই মিলেই সামান্য হলেও একটা লড়াই লড়ছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy