Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in North Bengal

মাস্ক তৈরি করে ফের উজ্জ্বল মহাদেবরা

একা হাতে প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়েছিলেন দেবাশিস। এখন সেই কেন্দ্র ঘিরে আশার আলো। দেবাশিস ভাবতে থাকেন, দেওয়ালের লেখাতে আরেকবার তুলি দিয়ে রং বুলিয়ে দেবেন। ওই যে দেওয়ালে সংস্থার নাম লেখা, ‘স্বপ্নতোরণ,’ তার এক পাশে লেখা ‘দয়া কিংবা করুণা চাই না’।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২০ ০২:৫২
Share: Save:

দেওয়ালে লাল রঙ দিয়ে লেখা আছে, ‘দয়া কিংবা করুণা চাই না।’ যতদিন দিন যাচ্ছে লেখার রং ফ্যাকাশে হচ্ছে। অক্ষরের গায়ে রোদ লাগে, বৃষ্টির ছিটে আসে, খর বাতাস সব শুকিয়ে দিয়ে যায়। অক্ষর আবছা হয়ে আসে।

অথচ আট বছর আগে জলপাইগুড়ির ভাটাখানায় এখানেই উদ্বোধন হয়েছিল প্রতিবন্ধীদের স্বাবলম্বী হওয়ার স্কুলের। জড়ো হওয়া লোকেদের সে দিন হাত নেড়ে আপ্যায়ন করেছিলেন মহাদেব, প্রবীর, কমলারা। তখনই দেওয়ালে লেখা হয়েছিল, ‘দয়া কিংবা করুণা চাই না।’

পরদিন থেকে মহাদেব, স্বপ্নারা ঘরে বসে কাঠ কেটে ছবি ফ্রেম বানাতেন, প্লাস্টিক জুড়ে জুড়ে ফুল, চট, কাপড়— কত কিছু। ওঁদের কারও মুখে শব্দ নেই, কেউ কানে শোনে না। কারও দৃষ্টি নেই, কারও কোমর থেকে নীচের অংশে সাড়া নেই। মেলায় সে সব জিনিস টুকটাক বিক্রি হত। তার পরে একদিন লকডাউন। সব বন্ধ। দোকানও। আশেপাশের বাসিন্দারা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা দেবাশিস চক্রবর্তীকে ডেকে দেখাতে চাইলেন সরকারি সাহায্যের পথ। ছোটখাট চেহারার দেবাশিস কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে দেখেন, ফ্যাকাশে হলেও দেওয়ালে লেখাটা রয়ে গেছে, ‘দয়া কিংবা করুণা চাই না।’

এরই মধ্যে সরকার ঘোষণা করল, মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। অন্ধকার আকাশে রুপোলি রেখা দেখলেন দেবাশিস। বাজার থেকে কিনে আনলেন কাপড়, সেলাই মেশিন। মহাদেব, কমলাদের ডেকে দেখালেন, কী ভাবে কাপড় ছেঁটেকেটে মাস্ক তৈরি করতে হয়। শুরু হয়ে গেল নতুন যুগ। বাজারে তখন মাস্কের প্রচুর চাহিদা। সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্কের দাম তখন ৪০ টাকা। সেই সময়ে মহাদেবদের মাস্ক বাজারে এল দশ টাকা দামে। অনেক এলাকায় বিনামূল্যেও বিলি করা হল সেই মাস্ক।

মাস্কের খোঁজে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এর পর আসতে লাগলেন বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের লোকেরা। মহাদেবদের মেশিন আর থামেনি। রোজ শয়ে শয়ে মাস্ক তৈরি হচ্ছে। দেবাশিস হিসেব করে বলেন, “এখনও পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ মাস্ক তৈরি করেছি আমরা।” মহাদেবরা এখন মাসে ছ’হাজার টাকা করে পাচ্ছেন। সংগঠনের আরেক সদস্য বিশ্বজিৎ মৈত্র বলেন, “শহরের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আমাদের মাস্ক তৈরির বরাত দিচ্ছে। তাঁদের প্রতি মাসে হাজার কুড়ি মাস্ক বানিয়ে দিতে হয়।”

পুজো আসছে। একা হাতে প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়েছিলেন দেবাশিস। এখন সেই কেন্দ্র ঘিরে আশার আলো। দেবাশিস ভাবতে থাকেন, দেওয়ালের লেখাতে আরেকবার তুলি দিয়ে রং বুলিয়ে দেবেন। ওই যে দেওয়ালে সংস্থার নাম লেখা, ‘স্বপ্নতোরণ,’ তার এক পাশে লেখা ‘দয়া কিংবা করুণা চাই না’।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in North Bengal Specially-abled Masks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE