প্রতীকী ছবি
সোম থেকে শনিবার— ছ’দিন ব্যবসায়িক কাজেই সকাল থেকে রাত ব্যস্ত থাকতে হয়। পাইকারি দোকান সামলানোর পাশাপাশি ব্যবসায়ী সংগঠনের কাজকর্মও করতে হয়। রবিবার সেই তুলনায় চাপ অনেক হালকা। সপ্তাহের বাকি দিন বাজার করার সময় পাওয়া যায় না। সে জন্য রবিবার ঘুম থেকে উঠে চা খেয়েই সকাল ৭টার মধ্যে ব্যাগ হাতে বেরিয়ে পড়তে হয় বাজারে। আনাজ থেকে শুরু করে মাছ, মাংস ও অন্যান্য সাংসারিক জিনিস তখনই করে নিই।
দু’ঘণ্টার মধ্যে বাড়িতে ফিরে প্রাতরাশ করে বেরিয়ে পড়তে হয় ব্যবসায়ী সংগঠনের কাজে। সোম থেকে শনি শহরেই থাকি, সে কারণে রবিবার জেলার গ্রামীণ এলাকার ব্যবসায়ী সংগঠনের পদাধিকারী থেকে শুরু করে সদস্যদের সঙ্গে দেখা করি। কোনও রবিবার যাই চাঁচলে, কোনও রবিবার গাজল, বামনগোলা, কালিয়াচক, মোথাবাড়ি বা রতুয়ায়। জেলা ব্যবসায়ী সংগঠনের অন্যান্য কর্মকর্তারাও সঙ্গে থাকেন। ব্লকে ব্লকে গিয়ে বৈঠক করা হয়। সংশ্লিষ্ট কোনও ব্যবসায়ীর কোনও ব্যবসা সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে তা নিয়ে সেখানে আলোচনা করা হয়। দুপুরের খাবার রবিবার বাড়িতে আর খাওয়া হয় না। যে ব্লকের সংগঠনের কাজে যাওয়া হয় সেখানেই খাওয়া হয়।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকেল সাড়ে চারটে। বাড়িতে ফিরে দুই নাতনিকে সময় দিতে হয়। তাদের নানা আবদার, বায়না থাকে। দু’ঘণ্টা তাদের সঙ্গেই সময় কাটাই। আমাদের জেলা সংগঠনের রয়েছে ১৮০টির মতো শাখা সংগঠন। তাদের জরুরি কোনও সমস্যা থাকলে রবিবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে ৯টা পর্যন্ত বাড়িতেই বসে ওই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলি। তার পরে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমোতে যাওয়া। এটাই আমার রুটিন, রোজনামচা।
কিন্তু এ দিন সব হিসেব ওলট-পালট করে দিল ‘জনতা কার্ফু’। দিন তিনেক আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন এই ডাক দিয়েছিলেন, তখন আমরা সংগঠনের সকলে মিলে সেই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে জেলার সমস্ত ব্যবসায়ীকে ‘জনতা কার্ফু’তে দোকানপাট বন্ধ রেখে বাড়িতে থাকার আহ্বান জানিয়েছিলাম। তাই নিজেও এ দিন সকাল থেকেই ছিলাম ঘরবন্দি। বাড়িতে বসেই মোবাইলে জেলার সমস্ত ব্যবসায়ী শাখা সংগঠনের লোকজনের সঙ্গে কথা বলি। দোকানপাট বন্ধ আছে কিনা খোঁজ নিই। যেহেতু ঘরবন্দি হয়ে থাকার অভ্যাস নেই, সেই কারণে এ দিন সকাল থেকে ঘরে একনাগাড়ে বসে থাকা কিছুটা হলেও অস্বস্তিকর মনে হয়েছিল। কিন্তু মানুষের জীবন অমূল্য, সে কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এ দিনের ‘জনতা কার্ফু’তে সামিল হয়ে দিনভর বাড়িতেই কাটিয়ে দিলাম।
এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। কিন্তু তাতে এই ভাইরাসকে যদি রোখা যায়, সেটাই হবে বড় প্রাপ্তি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy