প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের টেটের চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সাধারণ শ্রেণির ৪৫ জন চাকরিপ্রার্থীকে নিয়োগপত্র না দেওয়ার অভিযোগ উঠল উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। নিয়োগপত্র না পাওয়া ওই চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, সোমবার বিকেলে সংসদ কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাউন্সেলিং করার পর প্যারাটিচার (পার্শ্বশিক্ষক) ক্যাটাগরিতে নিয়োগপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন। তাঁদের দাবি, তাঁরা কেউই প্যারাটিচার নন। ফলে তাঁদের ওই কাজের অভিজ্ঞতার কোনও শংসাপত্রও না থাকায় কাউন্সেলিং আটকে যায়। ওই দিন রাত তিনটে নাগাদ সংসদ কর্তৃপক্ষ তাঁদের কলকাতায় রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কার্যালয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। পুলিশ এরপর তাঁদের রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় সংসদের জেলা কার্যালয় থেকে বার করে দেয় বলে অভিযোগ। নিয়োগপত্র দেওয়ার দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে তাঁরা ফের সংসদের কার্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বেলা দেড়টা নাগাদ পুলিশ সংসদের চেয়ারম্যানকে বাইরে বার করে দেন। এরপরেই পুলিশ চাকরিপ্রার্থীদের টেনে হেঁচড়ে সংসদ চত্বর থেকে বাইরে বার করে দেয় বলে অভিযোগ। ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীরা এরপর জেলাশাসকের দফতরে গিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের বাধা দেওয়ায় রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত আইসি দীপেন তামাঙ্গকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। বিকাল ৪টা নাগাদ পুলিশ ও প্রশাসনের আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ওই ঘটনার জেরে এ দিন সংসদে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। কর্মী ও আধিকারিকেরা নিরাপত্তার অভাববোধ করে দফতর ছেড়ে চলে যান।
জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান জাহিদ আলম আরজু কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
জেলাশাসক আয়েশা রানির দাবি, ‘‘শিক্ষা ও পেশাগত যোগ্যতার শংসাপত্র যাচাইয়ের সময়ে কিছু ক্রুটি ধরা পড়ায় ওই ৪৫ জন চাকরিপ্রার্থীর নিয়োগ আপাতত আটকে গিয়েছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। যেহেতু টেটের চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষার ফল রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ঘোষণা করেছে। তাই তাঁদের সেখানে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্য বলেন, ‘‘যোগ্য কোনও চাকরিপ্রার্থী যাতে বঞ্চিত না হন, সেই বিষয়ে জেলাশাসককে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার অনুরোধ করেছি।’’ প্রসঙ্গত, গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের কার্যালয়ে টেটের চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অপ্রশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থীদের কাউন্সেলিং শুরু হয়। সোমবার সেই কাউন্সেলিংয়ের শেষ দিন ছিল। ওই দিন ২৫৪ জন চাকরিপ্রার্থীকে কাউন্সেলিংয়ে ডাকা হয়। দ্বিতীয় দফায় দুপুর তিনটে থেকে কাউন্সেলিং শুরু হতেই গোলমালের সূত্রপাত।
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, রাত ১১টা নাগাদ ২৬ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়ার পর সংসদ কর্তৃপক্ষ বাকিদের প্যারাটিচার ক্যাটাগরিতে ফেলে নিয়োগপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন। এরপরেই সংসদের কার্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। তাঁরা দাবি করেন, তাঁরা সাধারণ শ্রেণির চাকরিপ্রার্থী। সংসদ কর্তৃপক্ষ তাঁদের ওই ক্যাটাগরিতে ফেলে যোগ্যতার শংসাপত্রের অভাব দেখিয়ে নিয়োগ আটকে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। খবর পেয়ে রাতেই জেলাশাসক সংসদের কার্যালয়ে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করার পর বিক্ষোভ চলাকালীনই বাকি চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাত তিনটে নাগাদ সংসদ কর্তৃপক্ষ ওই ৪৫ জন পরীক্ষার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে তাঁদের কলকাতায় রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কার্যালয়ে যোগাযোগ করার পরমর্শ দেন বলে দাবি।
আন্দোলনকারীদের তরফে ইসলামপুরের ক্ষুদিরাম পল্লি এলাকার বাসিন্দা রাজীব দত্ত, ইটাহারের বৈদড়া এলাকার বাসিন্দা কমল সোরেন ও চাকুলিয়ার রামকৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দা বীথি মন্ডলের দাবি, ‘‘আমরা সাধারণ শ্রেণিতে টেটের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। সংসদের ওয়েবসাইটেও আমাদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অথচ কাউন্সেলিংয়ে সংসদ কর্তৃপক্ষ আমাদের প্যারাটিচার ক্যাটাগরিতে নিয়োগপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন। আমাদের ওই কাজের অভিজ্ঞতার কোনও শংসাপত্রও না থাকায় কাউন্সিলিং আটকে যায়। সংসদ কর্তৃপক্ষ আমাদের কলকাতায় রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কার্যালয়ে যোগাযোগ করার পরমর্শ দিয়েছেন।’’ তাঁদের কথায়, অবিলম্বে নিয়োগপত্র দেওয়া না হলে তাঁরা আইনের পথে যেতে বাধ্য হব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy