অতিথি শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ঘিরে বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র।
বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসপিছু ৩০০ টাকায় অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছিল চলতি বছরের শুরুতে। সেই বিতর্কই আবার ফিরে এল দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন নাথানিয়্যাল মুর্মু কলেজের অতিথি শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ঘিরে। সেখানে ক্লাসপ্রতি ১০০ টাকা সাম্মানিকের বিনিময়ে ছ’জন অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। সেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসার পরেই জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিযোগ, এত ‘কম’ সাম্মানিক দিয়ে আদতে শিক্ষকদের অপমান করা হচ্ছে! পাল্টা দাবি, কলেজে পর্যাপ্ত সংখ্যায় পূর্ণ সময়ের শিক্ষক না থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। আর অতিথি শিক্ষকের খরচ কলেজকেই বহন করতে হয় নিজস্ব তহবিল থেকে।
সম্প্রতি নিজস্ব ওয়েবসাইটে ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রির পাশাপাশি কলেজে পড়ানোর জন্য যা যা যোগ্যতা থাকা চাই, সবই থাকতে হবে অতিথি শিক্ষকদের। তাঁরা সপ্তাহে সর্বাধিক ১৫টি করে ক্লাস করাতে পারবেন। প্রতি ক্লাসের জন্য তাঁদের সাম্মানিক হবে ১০০ টাকা। অর্থাৎ, হিসাব মতো সপ্তাহে অতিথি শিক্ষকদের রোজগার হওয়ার কথা ১,৫০০ টাকা। আর মাসে ছ’হাজার টাকা। কলেজ সূত্রে খবর, অতিথি শিক্ষক পদের জন্য এখনও পর্যন্ত ১০ জন আবেদনও করেছেন। এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কলেজের অধ্যক্ষ প্রণয় নারাজিনারি। তবে কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি অমলকুমার রায় বলেন, ‘‘নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে ক্লাসের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে শিক্ষকের অভাব দেখা দিয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা এসে ফিরে যায়। ক্লাস করতে পারে না। সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ কিন্তু এই সাম্মানিকের অঙ্ক যে খুবই কম, তা স্বীকার করে নিয়েছেন অমল। তিনি বলেন, ‘‘অতিথি শিক্ষক নিয়োগের জন্য সরকার কোনও টাকা দেয় না। কলেজ থেকেই আমরা ক্লাসপিছু ১০০ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা জানি, এটা করা উচিত নয়। কারণ, এক জন দিনমজুরের রোজগার এর থেকে বেশি। কিন্তু আমরা নিরুপায়। ক্লাস চালাতে গেলে এর বেশি দিতে পারব না আমরা।’’
শিক্ষক মহলের একাংশের বক্তব্য, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ শিক্ষকদের ক্লাসপিছু ৩০০-৫০০ টাকা সাম্মানিক দিয়ে পড়ানোর চল অনেক দিন ধরেই রয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সাম্মানিকের অঙ্ক বৃদ্ধির কথাও বলেছে। তার পরেও কেন এত কম সাম্মানিকে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই। এ বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিত (জুটা)-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘ক্লাসপিছু ৩০০-৫০০ টাকা অনেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই দেওয়া হয় অতিথি শিক্ষকদের। কিন্তু ১০০ টাকা অত্যন্তই কম। এতে ওঁদের মাস গেলে কতই বা রোজগার হয়! এটা অপমান তো বটেই। আর ইউজিসি তো নির্দেশিকা দিয়ে খালাস। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য টাকা আসাও তো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অতিথি শিক্ষক নিয়োগের টাকা তো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়কেই দিতে হয়। ওরা টাকা পাবে কোত্থেকে!’’
পাশাপাশি, শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও কেন স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ না করে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করে কাজ চালানো হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। তপনের লস্করহাটের বাসিন্দা সুনীল সরকার ওই কলেজের বাংলা বিভাগে অস্থায়ী শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পড়াশোনা করেছিলাম অনেক আশা নিয়ে। শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকায় টোটো বা অটো চালাতে লজ্জা লাগে। সেই কারণে যা পাওয়া যায়, তাতেই কয়েক দিন চালিয়ে নিতে হবে। চুপচাপ তো বসে থাকতে পারি না! এখন এই চাকরি পেতেই যে কত কাঠখড় পোড়াতে হবে, কে জানে!’’
এ নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিঁধতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী বলেন, ‘‘তরুণ শিক্ষকদের অপমান করছে রাজ্যের বর্তমান সরকার। ওদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকারের কোনও মাথাব্যথা নেই। সেই কারণেই শূন্য পদে নিয়োগ করা হচ্ছে না। অতিথি শিক্ষকদের দিয়ে এত কম সাম্মানিকে কাজ চালানো হচ্ছে। এটা চলতে পারে না।’’ পাল্টা শাসক তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার বলেন, ‘‘কলেজে শিক্ষক কম থাকায় অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। কত সাম্মানিক দেওয়া হবে, তা বিস্তারিত জানি না এখনও। তবে এতে তো অতিথি শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা বাড়বে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy