আশিস বর্মণ। নিজস্ব চিত্র
ছোট্ট ছেলেটার মুখে এক অমলিন হাসি। দুর্গার শরীরে মাটির প্রলেপ দিতে দিতে আরও যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। বলছে, ‘‘এই দুর্গাকে আমার মায়ের মতো তৈরি করব।’’ আবার থেমে বলছে, ‘‘আরে না না, আমার মা তো লক্ষ্মী।’’ তাঁর মায়ের আসল নাম লক্ষ্মী বর্মণ। লক্ষ্মীর ছেলে আশিস দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। পড়াশোনার ফাঁকে মূর্তি তৈরি করে সে। দিন গেলে কিছু আয় হয়, তা তুলে দেয়মায়ের হাতে। সে জানায়, তাঁর বাবা প্রদীপ বর্মণ ভিন্ রাজ্যে গিয়েছেন। কাজ করে দু’পয়সা রোজগার করতে। আশিস বলে, ‘‘বাবা পুজোয় ফিরতে পারবেন কি না, জানি না। মায়ের জন্য তো কিছু কিনতে হবে। তাই মূর্তি তৈরি করছি।’’ তাঁর মা লক্ষ্মী বলেন, ‘‘ছেলে আমার খুব ভাল। যা বলি, তাই শোনে। আমার জন্য কত চিন্তা ওর।’’
কোচবিহারের ঘুঘুমারির নদীর চরে বাড়ি আশিসদের। ওদের গ্রাম থেকে কিছুটা দূরেই দুর্গা পুজো হয়। পুজোয় মন কেমন করে ওঠে ওদের। যখন ওরা চার ভাই-বোন খুব ছোট, নতুন জামার অপেক্ষায় বাবার পথ চেয়ে থাকত।বাবা ভ্যান চালিয়ে সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফিরতেন। ক্লান্ত শরীর, বুজে আসা চোখ, তার পরেও মুখে হাসি। ছেলেমেয়েদের হাতে নতুন জামা তুলে দিয়ে তৃপ্ত হতেন প্রদীপ। সে জামা পরেই মণ্ডপে মণ্ডপে ছুটে বেড়াত আশিসরা। পুজো শুরু হলে মায়ের সামনে জোড় হাত করে দাঁড়িয়ে থাকত ওরা। ধূপের গন্ধ, পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ, ঢাকের বাদ্য, নীলাভ আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে কষ্টের কথা ভুলে যেতেন প্রদীপরা। শুধু প্রার্থনা করতেন, সন্তানেরা যাতে খেয়ে-পরে থাকতে পারে।
সময় গড়িয়েছে। ছোট ছোট সন্তানেরা বড় হয়েছে। সংসারের খরচ বেড়েছে। সামাল দিতে না পেরে প্রদীপ রোজগারের জন্য গিয়েছেন ভিন্ রাজ্যে। সেখান থেকে কাজ করে কিছু পয়সা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। আবার চলে যেতে হয় তাঁকে। প্রদীপের তিন ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বড় ছেলে স্নাতক হয়েছেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। মেজো ছেলে আশিস ও ছোট সঞ্জয় পড়াশোনা করে। আশিস দ্বাদশ, সঞ্জয় দশম শ্রেণিতে পড়ে। পড়ার ফাঁকে তাঁর কাকা নন্দ বর্মণের কারখানায় বছরখানের হল প্রতিমা তৈরির কাজ শিখছে আশিস। এখন ছোট-বড় অনেক প্রতিমাই তৈরি করতে পারে সে। নন্দ বলেন, ‘‘ও প্রতিমা বানানো শিখতে চেয়েছিল। চলে আসতে বলেছিলাম। এখন ভালই গড়ে।’’
পড়ন্ত বিকেলে কোচবিহার শহরের স্কুল থেকে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরে আশিস। তবু তার যেন ক্লান্তি নেই, পোশাক খুলে পৌঁছে যায় কারখানায়।
দুর্গা প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy