সিআইডির হাতে ধরা পড়া ভুয়ো মার্কশিট, সার্টিফিকেট ও অ্যাডমিট কার্ড তৈরির চক্রের জাল শুধু জলপাইগুড়ি জেলায় নয়, উত্তরবঙ্গের নানা জেলার বিভিন্ন এলাকাতেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা৷ এই চক্রে জড়িত বাকিদের খুঁজে বের করতে ধৃত দু’জনকে এ দিনই নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি৷ সরকারি আইনজীবী প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় জানান, বিচারক ধৃত দুজনের দশদিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন৷
সোমবার বিকেলে জলপাইগুড়ি শহর থেকে জাল মার্কশিট, সার্টিফিকেট ও অ্যাডমিট কার্ড তৈরির চক্রের দু’জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি৷ একটি এডুকেশন সেন্টারের আড়ালে ওই চক্রটি টাকার বিনিময়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়ো মার্কশিট, সার্টিফিকেট ও অ্যাডমিট কার্ড তৈরি করে তা বিক্রি করে আসছিল৷ ঘটনায় ধৃতদের মধ্যে ধূপগুড়ির নাথুয়া বানিয়াপাড়া চৌরাস্তা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক বরুণকান্তি রায়ই এই চক্রের মূল পান্ডা বলে এখনও পর্যন্ত সন্দেহ গোয়েন্দাদের৷ তবে ধৃত আরেক যুবক ভাস্কর সরকারও অল্প সময়ের মধ্যেই এই কারবারে হাত পাকিয়ে ফেলেছিল বলেও জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা ৷
এ দিকে এই ঘটনাতে লেগেছে রাজনীতির রংও। জলপাইগুড়ির ডিওয়াইএফ নেতা শুভাশিস সরকারের অভিযোগ, ‘‘ধৃত ভাস্কর ২০১৪ সালে টিএমসিপি পরিচালিত জলপাইগুড়ি এ সি কলেজ ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিল৷ সে এখনও তৃণমূলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত৷ সেজন্যই মহাশ্বেতা দেবীর ওপর সম্প্রতি শাসকদল পরিচালিত জলপাইগুড়ি পুরসভার একটি বইয়েও ভাস্করের ছবি রয়েছে৷’’
যদিও পুরসভার চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের জলপাইগুড়ি শহর ব্লকের সভাপতি মোহন বসু বলেন, ‘‘মহাশ্বেতাদেবীর বিভিন্ন সময়ের ছবি সেখানে ছাপা হয়েছে৷ সেখানে লেখিকার পাশে কাউকে দেখা গেল মানেই যে সে তৃণমূলের কেউ, এমনটা ভাবা ঠিক নয়৷ ওই ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগাযোগ নেই৷’’
সিআইডি জানিয়েছে, ধৃত বরুণ এক বছর আগে থেকে আঁটঘাট জাল সার্টিফিকেট তৈরির কারবারে নামলেও তারও এক বছর আগে থেকেই এ ধরনের চক্রে সে জড়িয়ে ছিল৷ এই মুহুর্তে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেই তার ‘নেটওয়ার্ক’ ছড়ানো বলে জানা গিয়েছে৷ সেই সমস্ত জায়গাতেও লোক মারফত নিজের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সে৷
ধৃত ভাস্কর মাস দু’য়েক আগে বরুণের এডুকেশন সেন্টারে কাজে যোগ দেয়৷ অল্প সময়ের মধ্যেই জাল সার্টিফিকেটের ব্যাবসায় নানা জায়গায় যোগাযোগ থেকে শুরু করে সার্টিফিকেট ডেলিভারির কাজেও রপ্ত হয়ে উঠেছিল সে৷
এ দিকে বরুণ যে স্কুলের শিক্ষক ছিলেন সেই ধূপগুড়ি নাথুয়া বানিয়াপাড়া চৌরাস্তা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মঙ্গল সরকার জানান, হলদিবাড়ির বাসিন্দা বরুণ ধূপগুড়িতেই বাড়ি ভাড়া করে থাকত৷ কিন্তু বাড়ি সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধার কথা বলে বছর তিন-চার আগে জলপাইগুড়িতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে৷
মঙ্গলবাবুর কথায়, ‘‘ধূপগুড়িতে অনেকেই বরুণের এডুকেশন সেন্টার সম্পর্কে আমার থেকে জানতে চাইতেন৷ কিন্তু বরুণকে তা বললেই সে দাবি করত, এমন কোনও সেন্টার তার নেই৷’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy