এই ভিডিয়োকে কেন্দ্র করেই হইচই। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
এই প্রথম নয়, আগেও সালিশি সভা ডেকে নিজেই দোষী নির্বাচন করে ‘শাস্তি’ দিয়েছেন চোপড়ায় যুগলের গণপিটুনিকাণ্ডে ধৃত তৃণমূল নেতা তাজিমুল ইসলাম ওরফে জেসিবি। এমনটাই দাবি চোপড়ার স্থানীয় বিরোধী নেতৃত্বের। তাজিমুল গ্রেফতার হতেই পুরনো কয়েকটি ভিডিয়োও প্রকাশ্যে এসেছে সোমবার। যেখানে দেখা যাচ্ছে, রাতের অন্ধকারে এক যুবক এবং এক যুবতীকে দড়ি দিয়ে পিছমোড়া করে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছেন কয়েক জন যুবক। অন্য একটি ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, দু’জনকেই একটি ঘরে ঢুকিয়ে লাঠি দিয়ে ব্যাপক মারধর করা হচ্ছে। লাঠির ঘায়ে চিৎকার করছেন তাঁরা। হাতকাটা সাদা গেঞ্জি এবং লুঙ্গি পরে যে ব্যক্তি মূলত মারধর করছেন, তিনি জেসিবি বলেই দাবি উঠেছে (যদিও ওই ভিডিয়োগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন )। যাঁরা মার খাচ্ছেন তাঁদের পরিচয় এবং কেন তাঁদের ওই ভাবে মারধর করা হচ্ছে, তা-ও ভিডিয়োগুলি থেকে স্পষ্ট নয়। স্পষ্ট নয় ঘটনাস্থলও।
রবিবার দুপুরেই তৃণমূলের চোপড়ার নেতা জেসিবির একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। সেই ভিডিয়োয় দেখা যায়, এক তরুণীকে রাস্তার মধ্যে ফেলে এক ছড়া কঞ্চি দিয়ে বেধড়ক মারছেন জেসিবি। মার খেতে খেতে গুটিয়ে যাওয়া মেয়েটিকে চুলের মুঠি ধরে টেনে এনে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলা হচ্ছে। তার পরে আবার শুরু হচ্ছে মার। একইসঙ্গে এক তরুণকেও একই ভাবে মারতে দেখা যায় তাঁকে (ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন )। তবে ওই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরই শুরু হয়েছিল বিতর্ক। একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছিল রাজ্যের বিরোধীরা। পরে ইসলামপুরের পুলিশ সুপারও জানান, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে। তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য অভিযানও শুরু হয়েছে এলাকায়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রবিবার সন্ধ্যায় জেসিবিকে গ্রেফতার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, যে ঘটনার প্রেক্ষিতে রবিবার জেসিবিকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেটি দিন দুয়েক আগে ঘটেছিল চোপড়া থানা এলাকার লক্ষ্মীপুরে। অন্তত তেমনটাই জানিয়েছেন ইসলামপুরের পুলিশ সুপার জবি থমাস কে। এর পরেই ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসতে থাকে ঘটনাপ্রবাহ। জানা যায়, ভিডিয়োয় জেসিবি যে মহিলাকে মাটিতে ফেলে মারধর করছিলেন তিনি বিবাহিত। তবে এক ব্যক্তির সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। পরে তাঁরা ফিরে এলে সালিশি সভা ডেকে দু’জনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। বলা হয়, ওই অর্থ না দিলে তাঁদের এলাকায় থাকতে দেওয়া হবে না। সেই ‘জরিমানা’ না দেওয়াতেই তাঁদের উপর অকথ্য অত্যাচার করা হয় বলে অভিযোগ।
এর মধ্যেই সোমবার আবার নতুন একাধিক ভিডিয়োকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ভিডিয়োগুলিতে দেখা যাচ্ছে, দড়ি দিয়ে হাত বেঁধে নির্মম ভাবে মারধর করা হচ্ছে এক জন যুবক এবং যুবতীকে। যুবককে খালি গায়ে পেটানো হচ্ছে। মার খেয়ে চিৎকার করে কাঁদছেন তিনি। মারধর খেয়ে যুবতীর প্রায় অচৈতন্য অবস্থা। অভিযোগ উঠেছে, ওই ভিডিয়োয় যিনি লাঠি দিয়ে ওই দু’জনকে একনাগাড়ে মারছেন তিনি অন্য কেউ নন, সোমবার চোপড়ার গণপিটুনিকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল নেতা তাজিমুল ওরফে জেসিবি। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এই ধরনের কোনও ভিডিয়োর কথা তাঁরা শোনেননি। তবে ভিডিয়ো সত্যি বলে প্রমাণিত হলে প্রশাসন পদক্ষেপ করবে।
জেসিবি গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন চোপড়ার বিরোধী নেতারা। তাঁদের দাবি, বিভিন্ন ঘটনায় এ ভাবে একাধিক বার সালিশি সভা ডেকেছেন জেসিবি। ‘দোষী’ বেছে নিয়ে নিজেই শাস্তি ঘোষণা করেছেন। আর নির্দেশ না মানলেই চলেছে মারধর। এ প্রসঙ্গে চোপড়ার বিজেপি নেতা ভবেশ কর বলেন, ‘‘তালিবানি কায়দায় এই ধরনের সালিশি অনেক দিন ধরেই চালিয়ে আসছে জেসিবি। নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছে বার বার। আমরা বার বার অভিযোগ পেয়েছি ওর নামে। ও অন্য একটা মামলায় গ্রেফতারও হয়েছিল। কিন্তু ওর অত্যাচার কমেনি। শাসকদলের নেতা হওয়ার কারণেই এত বাড়বাড়ন্ত।’’ চোপড়ার কংগ্রেস সভাপতি মাসিরুদ্দিন বলেন, ‘‘সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করে রেখেছে জেসিবি। লক্ষ্মীপুর এলাকায় কেউ মাথা তুলে কথা বলতে পারছে না। ও গ্রেফতার হওয়ার পর মানুষ আস্তে আস্তে মুখ খুলছে। এর আগেও ওর অত্যাচারের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে।’’ স্থানীয় এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘জেসিবি এর আগেও অনেক মারধরের ঘটনায় জড়িত। পুলিশ গ্রেফতারও করেছিল এক বার।’’
অন্য দিকে, উত্তর দিনাজপুরের তৃণমূল জেলা সভাপতি কানাইলাল আগরওয়াল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আর কী ভিডিয়ো ছড়িয়েছে আমি জানি না। ও শাসকদলের ছত্রছায়ায় নেই। আগেও গ্রেফতার হয়েছে। যার নামেই অভিযোগ ওঠে, তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আমি এ রকম ঘটনা আগে শুনিনি। নতুন ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে বলেও জানি না। যদি সত্যিকারেরই এ ধরনের ঘটনার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসে থাকে, তা হলে সেই সব ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করে প্রশাসন পদক্ষেপ করবে।’’
(চোপড়ার ঘটনায় ধৃত তাজিমুলের নাম আমরা ‘তাজম্মুল’ লিখছিলাম। এফআইআরে তাঁর নাম ‘তাজিমুল’ বলে উল্লিখিত আছে। আমরা সেই নামই লিখছি)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy