বোনের মৃত্যুর দিনই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাগডোগরার বাসিন্দা ওয়াল্টার এক্কা। ২০১০ সালের ১৯ জুলাই তাঁর বোন জ্যোতি এক্কা মারা যান। জ্যোতি বাগডোগরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীর সঙ্গে থাকতেন। ওয়াল্টারবাবুর অভিযোগ ছিল, তাঁর বোনের ক্যান্সার হয়েছে জেনেও ওই স্বাস্থ্যকর্মী তাঁর চিকিৎসা করাননি। উল্টে বোনকে মারধর করতেন। কিন্তু বাগডোগরা থানা তখন অভিযোগটি নিলেও পরে তা প্রত্যাহার করতে তাঁকে বাধ্য করেন বলে ওয়াল্টারবাবুর অভিযোগ। এরপরে নানা জায়গায় বারবার অভিযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি তা দায়ের করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি লেখেন।
অবশেষে ওয়াল্টারবাবু যোগাযোগ করেন দার্জিলিং জেলার লিগাল এড ফোরামের সঙ্গে। তাঁদের পরামর্শেই তিনি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরকে সব কথা জানিয়ে একটি চিঠি লেখেন। তারপরেই প্রধান বিচারপতির নির্দেশে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা গত ২ জুলাই এই ব্যাপারে মামলা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটা নির্দেশ পেয়েছি। তার ভিত্তিতে মামলা করে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ তবে এতদিন কেন অভিযোগ নেওয়া হয়নি, তা নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে অভিযোগ আসার পরেই মামলা করা হয়েছে।’’ ওয়াল্টারবাবুকে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়েছিল বলে যে নালিশ তিনি করেছেন, সে ব্যাপারে তদন্ত হবে বলে পুলিশের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
জ্যোতিদেবী যাঁর সঙ্গে থাকতেন সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অপহরণ, স্ত্রীকে ডিভোর্স না করে অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এবং মারধরের মামলা দায়ের হয়েছে। তবে তাঁকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। ওয়াল্টারবাবুর বোন নকশালবাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্স ছিলেন।
মামলা শুরু করায় আপাতত নৈতিক জয় দেখছেন ওয়াল্টারবাবুর মা ফেলোমিনা এক্কা। তিনি মনে করেন, ‘‘অবশেষে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় আমরা খুশি। এখন আমরা চাইছি অভিযুক্তের কড়া শাস্তি হোক।’’ যাঁদের পরামর্শে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে তাঁরা আবেদন করেছিলেন সেই দার্জিলিং জেলা লিগাল এড ফোরাম তাঁদের সমস্ত রকম আইনি পরিষেবা দিতে চাইছে। ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার দাবি করেন, ‘‘দেরিতে হলেও মামলা হওয়ায় আমরা খুশি। তবে শুধু মামলা করেই যেন বিষয়টি শেষ না হয়ে যায়, অভিযুক্তের শাস্তি দাবি করছি।’’
জানা গিয়েছে, বাগডোগরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করার সময় জ্যোতিদেবীকে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরই চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মী উত্যক্ত করতেন। পরে তিনি বদলি নিয়ে নকশালবাড়ি চলে যান। অভিযোগ, তারপরেও পিছু ছাড়তেন না ওই ব্যক্তি। এরপরে একদিন কাজে বেড়িয়ে আর ফেরেননি জ্যোতি। পরে বাড়ির লোকেরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, নকশালবাড়িতে ঘর ভাড়া নিয়ে ওই ব্যাক্তির সঙ্গে রয়েছেন জ্যোতি। পরিবারের দাবি জ্যোতিকে বিয়ে করেন ওই ব্যক্তি। যদিও তাঁর কোনও প্রমাণ তাঁরা পাননি।
জ্যোতিদেবীর সঙ্গে তাঁর ভাই ওয়াল্টার দেখা করতে গেলে ওই ব্যক্তি মহিলাকে মারধর করত। ফলে তাঁরা সেখানে যাতায়াত বন্ধ করে দেন। এর মধ্যে একটি মেয়েও হয় তাঁদের। এর মধ্যেই একদিন ওয়াল্টারবাবু খবর পান, তাঁর বোন অসুস্থ। তাঁরা গিয়ে তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তাঁর ক্যানসার হয়েছে বলে জানানো হয়। ওয়াল্টারবাবুর দাবি, ‘‘বোনকে চিকিৎসা না করে ফেলে রাখা হয়েছিল বলে আমাদের জানিয়েছিল। শেষ পর্যায়ে খবর পাওয়ায় তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’’ অভিযুক্তকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চেয়ে বারবার ফোন করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy