Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Illegal Firecrackers

আড়ালে ‘লাইনম্যান’, চকলেট বোমার ঝোলা নিয়ে

এই বাজি আসছে কোথা থেকে? জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়া কালীবাড়ি ছাড়িয়ে একটি দোকানে বাজি পাওয়া গিয়েছে গত বছরও। এ বছর নিষেধাজ্ঞার জেরে সে দোকান বসেনি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:১৪
Share: Save:

‘‘কী লাগবে, বাজি?’’

দিনবাজারের সরু গলি। রাস্তার একদিকে বাড়ি-ওষুধের দোকান, অন্য দিকে শুধুই দোকান। সে দোকানের সারিতে দু’টি বাজির দোকান। একটির দরজা বন্ধ। অন্যটি একটু ভেজানো। বাজি লাগবে কি না জানতে চাওয়া যুবকটি ভেজানো দরজার দোকানের সামনে স্কুটারে বসেছিলেন। তিনিই নিয়ে গেলেন দোকানে। বললেন, “এখানে দোকান বন্ধ। বাজি বাজার বসেছে ফণীন্দ্রদেব স্কুলের খেলার মাঠে। সেখানে আমরাও যাচ্ছি।” দোকান থেকে আতসবাজির প্যাকেট নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে বাজি বাজারে।

চকলেট বোমা পাওয়া যাবে? দোকানের মধ্যে এক মাঝবয়সী এবং যুবক দু’জনে নিজেদের দিকে তাকালেন। ভদ্রলোক বললেন, “না, এখানে নেই। দোকানও বন্ধ। আপনি এলেন তাই।” বলা গেল, খুব প্রয়োজন। যত টাকা লাগে দেওয়া যাবে। শুনে যুবকের উত্তর, “সাদা পোশাকে পুলিশও আসে। আপনি পুলিশ নাকি?”

দিনবাজার থেকে সোজা চলে যাওয়া গেল বাজি বাজারে। বুধবার দুপুর। বাজারের দোকানগুলি সাজানোর পালা চলছে। একটি দোকানে ঢুকে সটান প্রশ্ন, চকলেট বোমা পাওয়া যাবে? একটি দোকানের কর্মীর উত্তর, “খেপেছেন নাকি। এখানে ও সব রাখে না কেউ।” তা হলে পাওয়া যাবে কোথায়? যত টাকা লাগে দেওয়া যাবে। কর্মীর উত্তর, “লাইনম্যানদের বলুন!”

বাজি বাজার ছাড়া কোথাও আতসবাজির বিক্রির খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে, ধরপাকড় চলছে। তারই মধ্যে বাজারের ভিড়ে ঘুরছেন সেই ‘লাইনম্যান’-এরাও। তাঁদের সাইকেলে, মোটরবাইকে ঝোলানো বস্তায় ভরে এ হাত থেকে ও হাতে চলে যাচ্ছে নিষিদ্ধ শব্দবাজি। গত মঙ্গলবার উত্তর রায়কতপাড়ার বাসিন্দারা দেদার নিষিদ্ধবাজি পোড়ানোর শব্দ পেয়েছেন বলে অভিযোগ।

এই বাজি আসছে কোথা থেকে? জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়া কালীবাড়ি ছাড়িয়ে একটি দোকানে বাজি পাওয়া গিয়েছে গত বছরও। এ বছর নিষেধাজ্ঞার জেরে সে দোকান বসেনি। সেখানে গিয়ে ফের এক প্রশ্ন, “চকলেট বোমা পাওয়া যাবে? দাম বেশি হলেও ক্ষতি নেই।” কিছুটা ইতস্তত করার পরে দোকানের কর্মী বললেন, “কালীপুজোর আগের দিন আসুন।” সে দিন কী হবে? বিরক্ত হয়ে সেই ব্যক্তি উত্তর দিলেন, “শুক্রবার লাইনম্যান ঢুকবে। তার পরে আসুন।”

শব্দবাজি নিষিদ্ধ হওয়ার পরে এখন সে সবের জোগানদার হয়ে গিয়েছেন ‘লাইনম্যান’-এরা। পাইকারি দোকান থেকে খুচরো দোকানে যাঁরা জিনিসপত্র সরবরাহ করেন তাঁদের চলতি ভাষায় ‘লাইনম্যান’ বলা হয়। বাজিরও এমন ‘লাইনম্যান’ রয়েছে। অভিযোগ, শব্দবাজি ঘুরছে গুটখা, বিস্কুটের ‘লাইনম্যান’দের একাংশের ঝোলায়। দিনবাজার এবং মাসকলাইবাড়িতে কেরোসিন তেলের ‘লাইন’ করেন এমন অনেকের হাত ঘুরে শব্দবাজি চলে যাচ্ছে ছোট ছোট দোকানে। যে দোকানগুলির পসরায় কোনও ধরনেরই বাজি নেই, কিন্তু চাইলে মিলছে শব্দবাজি। তবে পুলিশের ধরপাকড় বেড়ে যাওয়ায় আপাতত নিষিদ্ধ বাজি নিয়ে নিত্যনতুন পন্থা চলছে জলপাইগুড়ির বাজারে। শিরীষতলার এক দোকানের মালিক যেমন চকলেট বোমা লাগবে
শুনেই দোকানের এক তরুণকে দেখিয়ে দিলেন। সেই তরুণ বললেন, “ক’টা প্যাকেট লাগবে? দু’দিন পরে আসুন।”

জলপাইগুড়ির জেলা পুলিশ সুপার উমেশ খণ্ডবহালে বলেন, “বাজি বাজার ছাড়া, কোথাও আতসবাজিও বিক্রি করা যাবে না। নিষিদ্ধ বাজি ধরতে জেলা জুড়ে অভিযান চলছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy