দশভূজা দেবী পূজিত হন ব্যায়াম সমিতির পুজোয়। — নিজস্ব চিত্র
চতুর্ভূজা নয়, দশভূজা রূপে পূজিত হন মহাকালী। এমনই রীতিতে পুজো হয়ে আসছে ইংরেজবাজার শহরের ব্যায়াম সমিতির মহাকালীর পুজোতে। ইংরেজ আমলের এই পুজোকে ঘিরে উচ্ছ্বসিত শহরবাসী। সেজন্য বাজেট বা আলোর চমক তেমন না থাকলেও শুধুমাত্র নিয়মনিষ্ঠার টানে মহাকালীর পুজোতে ভিড় জমান হাজার হাজার মানুষ।
শোনা যায়, ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জেলার বিপ্লবীরা মহাকালীর আরাধনা করেছিলেন। দশ দেবীর শক্তিকে একতিত্র করার জন্য মা কালীকে দশভূজা রূপে পুজো করা হয় বলে জানিয়েছেন ব্যায়াম সমিতির সদস্য তথা শহরের প্রবীণ নাগরিক নটরাজ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘শুধু দশ হাতই নয়, দেবীর দশ মুখমণ্ডল ও দশটি পা-ও রয়েছে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দশ দেবীর শক্তিকে একতিত্র করে আরাধনা করা হয়েছিল। এলাকার যুবকেরা একত্রিত হয়ে গঠন করা হয়েছিল ব্যায়াম সমিতি। ইংরেজেরা পুজো বন্ধ করার চেষ্টা করলেও আমরা তা কখনও বন্ধ হতে দিইনি। এখন পুজোর জাঁকজমক দেখে সেদিনের কথা মনে পড়ে যায়।’’
ইংরেজবাজার শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের গঙ্গাবাগ এলাকায় রয়েছে ব্যায়াম সমিতি। ১৯৩০ সালে স্থাপিত হয় এই সমিতি। ওই বছরই আরাধনা শুরু হয় মহাকালীর। জানা যায়, পুজো তথা সমিতির প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন বিপ্লবী কমলকৃষ্ণ চৌধুরী। তিনিই শুরু করেছিলেন এই পুজো। এখন তিনি না থাকলেও পুজো সেই একই নিয়মে হয়ে আসছে। সমিতিতে ব্যায়ামের পাশাপাশি লাঠি চালানো শেখানো হতো। যাতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে পারে যুবকেরা। পুজো স্থাপিত হওয়ার বছর তিনেক শহরের পুড়াটুলি এলাকায় অস্থায়ী জায়গায় কালীপুজো ও ব্যায়াম অভ্যাস চলত। পরে গঙ্গাবাগ এলাকায় নিজস্ব জায়গায় দেবীর আরাধনা শুরু হয়।
বিপ্লবীদের এই পুজো বন্ধ করতে ইংরেজরা তৎপর ছিল। তবে তারা তা পারে নি। প্রথম থেকেই অমবস্যা শুরুর আগের দিন অর্থাৎ চতুর্দশীতে দিনের বেলায় পুজো করা হয়। এখনও সেই রীতিতেই তন্ত্র মতে পুজো হয়ে আসছে এখানে। দশভূজা দেবীর মূর্তিতে এখানে শিব থাকেন না। শুধু মাত্র মহাশক্তিরই আরাধনা করা হয়। প্রথম প্রতিমা তৈরি করেছিলেন রামকেষ্ট দাস এবং প্রথম পুরোহিত ছিলেন শরৎ পন্ডিত। বংশ পরম্পরায় তাঁদেরই পরিবারের সদস্যরা প্রতিমা ও পুজো করে আসছেন। এই পুজোয় এখনও পাঁঠাবলির চল রয়েছে।
বিপ্লবীদের পুজো হিসেবে শুরু হলেও এখন এই পুজো হয়ে উঠেছে শহরবাসীর। চতুর্দশীর দিন শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে মণ্ডপে নিয়ে আসা হয় প্রতিমা। শোভাযাত্রাকে আকর্ষণীয় করে তোলার জল্য জেলার লোকসংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়। পুজো কমিটির সদস্য দিবাকর চক্রবতী বলেন, ‘‘এ বারও পুরনো ঐতিহ্যের ব্যতিক্রম হবে না। প্রাচীন সমস্ত রীতি মেনেই আরাধনা হবে মহাকালীর।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy