হাহাকার: দুর্ঘটনায় নিহত ইসরাফিল মোমিনের পরিবার। রবিবার এনায়েতপুরে। নিজস্ব চিত্র
কেউ হারিয়েছেন স্বামী। কেউ বা হারিয়েছেন তরতাজা দুই যুবক ছেলে। উত্তরপ্রদেশের ভদোহীর রোহতা বাজারে কার্পেট কারখানায় বিস্ফোরণ কাণ্ডে স্বামী, ছেলেদের হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন মালদহের মানিকচকের এনায়াতপুর ও কামালপুরের পাঁচটি পরিবারের সদস্যেরা। রবিবার দুপুরে দুই গ্রামেই যান রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। যোগ্যতা অনুযায়ী বাড়ির মহিলাদের স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে চাকরি দেওয়ার আশ্বাসও দেন। পরিবারের মহিলা সদস্যদের বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, খাদ্যসাথী প্রকল্পে সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
রাজ্য সড়ক থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে এনায়েতপুর গ্রাম। গ্রামে ঢুকতেই ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। গ্রামের রাস্তার পাশেই অসমাপ্ত পাকা বাড়ির উঠোনে জটলা পাকিয়ে নাগাড়ে চোখের জল ফেলে চলেছেন একদল মহিলা। ওই বাড়িরই তিন সদস্য কাকা আলমগির আনসারি সহ দু’ভাই জাহাঙ্গির আনসারি এবং কাদির আনসারির মৃত্যু হয়েছে উত্তরপ্রদেশে বিস্ফোরণ কাণ্ডে। ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তাঁদের বাড়ির ঠিক পাশেই আব্দুল কালাম মোমিনেরও।
তাঁদের বাড়ি থেকে দুশো মিটার দূরে রয়েছে বিস্ফোরণে মৃত মহম্মদ গফ্ফর মোমিন ও তাঁর ভাই মহম্মদ সুভান আনসারি এবং ইসরাফিল মোমিন ও আতাউর মোমিনের বাড়ি। শনিবার দুপুর থেকে এ দিন পর্যন্ত পুরো গ্রাম জুড়েই রয়েছে শোকের আবহ। সারারাত গ্রামের কোনও বাড়ির কেউ দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি। সকলেই উৎকন্ঠায় রয়েছেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহ থেকে চারটি গাড়ি নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা রওনা দিয়েছেন। সড়ক পথে মৃতদেহগুলি গ্রামে নিয়ে আসা হবে। ওই দিন গ্রামে থাকবেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার দেহগুলো আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
শনিবার সকালেই গ্রামে ফেরেন উত্তরপ্রদেশের রোহতার অন্য একটি কার্পেট কারখানার শ্রমিক তথা এনায়েতপুর গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউল আনসারি। তিনি বলেন, “কার্পেট কারখানার আড়ালে বাজি তৈরি হত বলে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ প্রশাসন বলছেন। তবে ঘটনাস্থল থেকে আমাদের কার্পেট কারখানার দুরত্ব ছিল মাত্র এক কিলোমিটার। আমরা প্রতি সপ্তাহের সোম ও শুক্রবার সকলে এক সঙ্গে জমায়েত হতাম। কখনও শুনেনি যে বাজি তৈরি হত। আর আমি ঘটনার একদিন আগে শুক্রবার উত্তরপ্রদেশ থেকে বাড়ি রওনা দিয়েছিলাম। বাড়িতে আসার ঘন্টা দু’য়েক বাদেই শুনতে পাই বিস্ফোরণে আমাদের গ্রামের শ্রমিকেরা মারা গিয়েছেন।”
উত্তরপ্রদেশ থেকে ফোনে সাহাজান মোমিন বলেন, ‘‘এখানকার সকলেই বলছেন বাজি তৈরি হত বেআইনি ভাবে। আমরা সকলেই খুব ভয়ে আছি। মৃতদেহগুলি হাসপাতাল থেকে ছাড়া হলেই আমরা সকলে বাড়ি ফিরব।’’ ঘটনার তদন্তের দাবি তুলেছেন সাংসদ তথা তৃণমূল নেত্রী মৌসম নুরও। তিনি বলেন, “শুনেছি গ্রেনেড বিষ্ফোরণ হয়েছে উত্তরপ্রদেশের ওই কারখানায়। কার্পেট তৈরির কারখানায় গ্রেনেড বিস্ফোরণ কিভাবে ঘটল তা জানা প্রয়োজন। আমরা চাই ঘটনার ভাল করে তদন্ত হোক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy