সুনসান: চলছে আন্দোলন। ফাঁকা পড়ে রয়েছে ওয়ার্ডের শয্যা। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে শনিবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
এই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল অনেকের কাছেই অচেনা। বহির্বিভাগ বন্ধ। জরুরি বিভাগের সামনে লাইন আছে ঠিকই। তবে হাসপাতালের অন্দরমহল অর্থাৎ ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা কমছে। সাধারণত ভিড়ে উপচানো মেডিক্যালের সঙ্গে শনিবারের মেডিক্যালের কোনও মিলই পাচ্ছেন না ওয়াকিবহাল লোকজনেরা।
প্রায় সুনসান অন্দরমহলে যে ক’জন রোগী আছেন বা যাঁরা এখনও চিকিৎসার জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আসছেন, তাঁদের অনেককেই দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। গোয়ালপোখরের বাসিন্দা খয়ের মহম্মদ (৭২) মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ নিয়ে ১২ জুন, বুধবার এখানে ভর্তি হয়েছিলেন। এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তিনি মারা যান। তাঁর আত্মীয় মহম্মদ উজির বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের আন্দোলন চলছে। ওয়ার্ডে চিকিৎসকরা থাকছেন না। খুব সমস্যা হলে তখন ডাকলে তবেই দু’-একবার সিনিয়র ডাক্তাররা এসে দেখে যান। যথাযথ চিকিৎসা হলে হয়তো চাচাকে বাঁচানো যেত।’’
হাতে গুরুতর চোট নিয়ে এ দিন চিকিৎসা করাতে আসেন আটল চা বাগানের বাসিন্দা সারিনা তিরকি। জরুরি বিভাগের সামনে চিকিৎসকরা তাঁকে দেখে হাতে প্লাস্টার করাতে বলেন। বহিবির্ভাগ বন্ধ থাকায় তা করাতে পারেননি। তাঁকে ওষুধ নিয়েই ফিরে যেতে হয়। ফালাকাটা থেকে এসেছিলেন অনিল রায়। মেরুদণ্ডে সমস্যার জন্য তিনি ওঠাবসা করতে পারছেন না। হাসপাতালের পরিস্থিতি দেখে বাড়ির লোকেরা তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি থেকে এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে রেফার করে পাঠানো হয় ময়নাগুড়ির বাসিন্দা বিশ্বজিৎ অধিকারীকে। ময়নাগুড়ির বাসিন্দা বিশ্বজিৎবাবুর বুকে জল জমে গিয়েছে বলে তাঁকে এর আগে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন। মেডিক্যালে এসে পরিবারের লোকেরা পরিস্থিতি দেখে রাখতে সাহস পাননি। তাঁর আত্মীয় নিত্যানন্দ অধিকারী বলেন, ‘‘গুরুতর রোগী। তাই ওই পরিস্থিতির মধ্যে রাখতে ভরসা পাইনি।’’
অন্তর্বিভাগে যেমন রোগী ভর্তি কমে গিয়েছে, তেমনই যাঁরা আছেন তাঁরাও চিকিৎসা পরিষেবা যথাযথ মিলছে না দেখে চলে যেতে চাইছেন। অন্য সময় যেখানে হাসপাতালে শয্যা পাওয়া যায় না এখন সেখানে মেডিসিন থেকে শল্য বিভাগ সব ক্ষেত্রেই শয্যা প্রচুর ফাঁকা। পুরুষ এবং মহিলা ক্যাজুয়ালটি বিভাগে অনেক শয্যা ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। অনেকেই রোগী নিয়ে চলে যাচ্ছেন। দুর্ঘটনায় চোট পেয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পাঁচ দিন ধরে ভর্তি পাঞ্জিপাড়ার শ্যামসুন্দর পাসোয়ান। বলেন, ‘‘শুক্রবার এমআরআই করাতে বলা হয়েছিল। মেশিন খারাপ বলা হয়েছে।’’
আজ, রবিবার সিনিয়র চিকিৎসকদের অধিকাংশই ছুটিতে থাকেন। এ দিন তাই পরিষেবা কী ভাবে চলবে, কর্তৃপক্ষ তা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন। সুপার কৌশিক সমাজদার বলেন, ‘‘রবিবার অন্তর্বিভাগে পরিষেবা দিতে সিনিয়র চিকিৎসকদের বলা হয়েছে।’’ এর মধ্যে শনিবার রাতে হাসপাতালের বাইরে এলে কয়েকজন জুনিয়র চিকিৎসককে কিছু লোকজন ঘিরে ধরে আজ রবিবার বহির্বিভাগ খোলার জন্য হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলেও কারও দেখা পায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy