ভিতর থেকে ব্যাঙ্ক খোলা রাখায় বচসা কর্মীদের সঙ্গে বন্ধ সমর্থনকারীদের। নিজস্ব চিত্র
গৌড়বঙ্গের মালদহ ও দুই দিনাজপুরে তির-ধনুক, হাঁসুয়া, কুড়ুল, টাঙ্গি, নিয়ে বন্ধের সমর্থনে রাস্তা অবরোধ করলেন আদিবাসী সংগঠন সেঙ্গেল অভিযানের সদস্যরা। যদিও সংগঠনের তরফে এই ঘটনার নিন্দা করা হয়েছে। সোমবার, সংগঠনের ডাকা বন্ধে রাজ্যের কিছু-কিছু এলাকায় প্রভাব পড়ে। তবে, রাজ্য জুড়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিকই ছিল, প্রশাসনের দাবি। বন্ধের মোকাবিলায় শাসক দলের তরফেও কাউকে রাস্তায় নামতে এ দিন দেখা যায়নি। বন্ধের আংশিক প্রভাব পড়ে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায়। এ দিন সকাল থেকে দুই জেলাতেই বেসরকারি বাস রাস্তায় কম ছিল। পুরুলিয়ার হুড়া, বলরামপুর, বরাবাজারের মতো এলাকায় পথ অবরোধ হয়। দক্ষিণ বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকাতেও পথে নামেনি বেসরকারি বাস। তালড্যাংরার শিবডাঙা মোড়, সারেঙ্গার খয়েরপাহাড়ি গ্রামে বন্ধ সমর্থকদের মিছিল হয়। যদিও, সরকারি অফিসে হাজিরা ছিল স্বাভাবিক। পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের বামুনিয়া বাজারে মেমারি-মালডাঙা রাস্তা অবরোধ করা হয়। মেমারির পাহাড়হাটি মোড়ে বর্ধমান-কালনা রাস্তাও অবরোধ করেন বন্ধ সমর্থকেরা।
উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার, চাকুলিয়া, রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, রশিদপুর রাজ্য সড়কে বন্ধ সমর্থনকারীদের অস্ত্র নিয়ে পিকেটিং, অবরোধ চলে বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, প্রকাশ্য রাস্তায় অস্ত্র নিয়ে ঘোরার জন্য মামলা করে দোষীদের চিহ্নিত করা হবে। মালদহের আট মাইলে তির, ধনুক হাতে নিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ হয়। গাজল, হবিবপুরেও বিক্ষোভ হয়। পুলিশ গিয়ে অবরোধ তোলে। তবে, দক্ষিণ দিনাজপুরে বনধে ভাল সাড়া মেলে। বেশিরভাগ জায়গায় পথ অবরোধ হয়। দোকানপাটও এ দিন বন্ধ ছিল, রাস্তায় যানবাহন চলেনি। সপ্তাহের প্রথম দিনের বন্ধে গৌড়বঙ্গের তিন জেলাতেই জাতীয় ও রাজ্য সড়কে মাঝে-মাঝে অবরোধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। মালদহে সরকারি অফিস, দোকান-বাজার এ দিন স্বাভাবিক ছিল। বেসরকারি বাস রাস্তায় না থাকলেও, অন্যান্য যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল বলে দাবি প্রশাসনের।
এ দিন অভিযোগ ওঠে, দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে এক রোগীর পরিবারকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সময় টোটোর চাকা হাঁসুয়ার কোপে দু’ভাগ করে দেন বনধ সমর্থকরা। যা নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ দেখান। ওই ঘটনার নিন্দা করেছে সেঙ্গেল অভিযান। সংগঠনের বালুরঘাটের নেতা অমল মার্ডি বলেন, ‘‘এই ঘটনা সংগঠন সমর্থন করে না। অভিযুক্তদের পুলিশ গ্রেফতার করুক।’’
এ দিন ঘটনাস্থলে পুলিশের বিশাল বাহিনীর সামনেই বড় অস্ত্র, হাঁসুয়া নিয়ে বন্ধ সমর্থকেরা হাজির হন বলে অভিযোগ। কিন্তু পুলিশ তাঁদের অস্ত্র কাড়তেও যায়নি, তাঁদের ধরতেও যায়নি বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। বালুরঘাট ব্যবসায়ী সমিতির নেতা হরেরাম সাহা বলেন, ‘‘বার বার এ রকম ঘটনা ব্যবসার উপরে প্রভাব ফেলছে। অথচ প্রশাসন চুপ। এটা ব্যবসায়ীরা মেনে নেবে না।’’ যদিও ওই ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে বলেন, ‘‘ঘটনায় সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
দণ্ডি-কাণ্ডে প্রদীপ্তা চক্রবর্তীকে গ্রেফতার-সহ বিভিন্ন দাবিতে ১৭ এপ্রিলের পর ফের এ দিন বন্ধ ডাকে আদিবাসী সংগঠন সেঙ্গেল অভিযান। যদিও ঘটনার প্রথম দিনই প্রদীপ্তা দাবি করেন, তিনি কাউকে দণ্ডি কাটতে বলেননি। এর মধ্যে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করে পুলিশ। সোমবারের বন্ধ নিয়ে সংগঠনের উত্তরবঙ্গের সহ-সভাপতি বিভূতি টুডু বলেন, ‘‘বন্ধ সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী সকলেই সমর্থন করছেন। কিন্তু অস্ত্র নিয়ে ভয় দেখানো হলে, তা সমর্থন করছি না। এ বিষয়ে ভবিষ্যৎ আন্দোলনের রূপরেখা পরবর্তী বৈঠকে ঠিক হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy