Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

এ সব কী হচ্ছে, ফোন অশোকের

মাথাভাঙা শেষ হতেই শীতলখুচি, অপেক্ষায় রয়েছে নাটাবাড়ি। পাশের ঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন এক যুব নেতা। নিজের মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘দিনহাটা। খুব জরুরি বলছে।’’

ভোট শেষে হাসি মুখে ফালাকাটায়। ছবি: রাজকুমার মোদক।

ভোট শেষে হাসি মুখে ফালাকাটায়। ছবি: রাজকুমার মোদক।

অনির্বাণ রায় ও সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০১:২১
Share: Save:

মাথাভাঙা শেষ হতেই শীতলখুচি, অপেক্ষায় রয়েছে নাটাবাড়ি। পাশের ঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন এক যুব নেতা। নিজের মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘দিনহাটা। খুব জরুরি বলছে।’’

ফালাকাটায় সিপিএম পার্টি অফিসের মাঝের ঘরের কাঠের চেয়ারে বসে চোখের ইশারায় তিনি শান্ত হতে বললেন ওই যুব নেতাকে। শীতলখুচি থেকে আসা ফোনটি সেরে, যুব নেতার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে দিনহাটার ‘কমরেডে’র অভিযোগ শুনলেন।

দিনহাটার বুড়িরহাটের সাতটি বুথে বাম-কংগ্রেসের জোটের এজেন্টকে তৃণমূল কর্মীরা ঢুকতে দেয়নি বলে অভিযোগ। ভয়ে ওই এলাকার ভোটাররা বুথে আসছে না বলেও অভিযোগ শুনলেন তিনি। শান্ত গলাতেই ফোনের অন্য প্রান্তের ব্যক্তিকে বললেন, ‘‘ভয় পাবেন না কমরেড। বুথের সামনে থাকুন।’’ মোবাইলের কল কেটে টেবিলে রাখা কাগজ থেকে ওই এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে ফোনে ধরলেন তিনি। বললেন, ‘‘অশোক ভট্টাচার্য বলছি। বুথে এজেন্ট নেই, ভোটাররা আসতে ভয় পাচ্ছে। এ সব কী হচ্ছে?’’ তার পরেই ফোনে ধরলেন জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিককে। বুথের নাম দিয়ে যাবতীয় অভিযোগ জানিয়ে বললেন, ‘‘এরপরে কাজ না হলে দিল্লিতে ফোন করতে হবে।’’

ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই দিনহাটা থেকে ফের ফোন এল সিপিএমের ফালাকাটার পার্টি অফিসে। জানানো হল, কেন্দ্রীয় বাহিনী গিয়ে বুড়িরহাটের বুথে সিপিএমের এজেন্টের ঢোকার ব্যবস্থা করেছে। ভোটাররাও বুথের সামনে লাইন দিয়েছেন। চিনি ছাড়া লাল চায়ের গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে আশ্বস্ত অশোকবাবু কাউকে নির্দেশ দিলেন, ‘‘তুফানগঞ্জে একবার ধরে দে।’’

সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ফালাকাটার পার্টি অফিসে বসে এ ভাবেই কোচবিহারের ভোট পরিচালনা করলেন শিলিগুড়ির মেয়র তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোকবাবু। সঙ্গে ছিলেন দার্জিলিং জেলা সিপিএমের সম্পাদক জীবেশ সরকার সহ যুব নেতা শঙ্কর ঘোষ এবং ছাত্র নেতা সৌরভ দাস। গত বুধবারই ফালাকাটায় পৌঁছে গিয়েছিলেন ‘টিম শিলিগুড়ি’।

কোচবিহারের ভোটের দিন ডুয়ার্সের চালসায় রিসর্টে থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশ-প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি করতে চাইছেন বলে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন জীবেশবাবুরা। চাপ তৈরির জন্যই মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে বাছাই করা আইপিএস অফিসারদেরও এনেছেন বলে জীবেশবাবু অভিযোগ করেন। মুখ্যমন্ত্রীর চাপে যাতে পুলিশ-প্রশাসন অসহায় না হয়ে যায়, তাই পাল্টা চাপ তৈরি করতেই বুধবার সন্ধ্যেয় কোচবিহার লাগোয়া ফালাকাটায় পৌঁছে যান অশোকবাবুরা। সন্ধ্যে থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কোচবিহারের বিভিন্ন ব্লক, অঞ্চল এবং বুথ স্তরের নেতা-কর্মীদের জনে জনে ফোন করে ‘টিপ’ দেন অশোকবাবুরা। গভীর রাতে পাশের একটি হোটেলে ঢুকে ফের সকাল সাতটার মধ্যে পার্টি অফিসে ঢুকে পড়েন সকলে। ফালাকাটার পার্টি অফিসই তখন কোচবিহার ভোটের ‘ওয়ার রুম’।

কী ভাবে পাল্টা চাপ তৈরি করলেন অশোকবাবুরা?

কোচবিহার শহর হোক অথবা দিনহাটা, নাটাবাড়ির বিভিন্ন গ্রাম থেকে যখনই জোটের সমর্থক বা এজেন্টদের হুমকি দেওয়া ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকার কেন্দ্রীয় বাহিনী-পুলিশ এবং প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের অশোকবাবু নিজে ফোন করেছেন। ওই এলাকার দলের নেতাদের ফোন করে জীবেশবাবু ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন, হুমকি যত তীব্র হোক না কেন, বুথ ছেড়ে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। নাটাবাড়ির বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ‘দাদাগিরি’র ছবি টিভিতে দেখে অশোকবাবুরা ফোন করেছেন দিল্লির নির্বাচন কমিশনের দফতরে। রবীন্দ্রনাথবাবুর নামে অভিযোগ দায়ের হওয়ার খবর তাঁরা পৌঁছে দিয়েছেন কোচবিহারের নেতা-কর্মীদের কাছে। দিনহাটার বুথে উদয়নবাবুকে ইভিএমের সামনে চলে যাওয়ার ছবি টিভিতে দেখে ফের কমিশনের আধিকারিকদের ফোন করেছেন অশোকবাবু। ওই বুথে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কর্মীদের। অশোকবাবুর কথায়, ‘‘যারা মাঠ কামড়ে পড়ে রয়েছেন, তাঁদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আমাদের জোটের নেতা-কর্মী হোক বা প্রশাসনের আধিকারিক।’’ প্রতি আধ ঘণ্টায় ইন্টারনেটে ভোটের শতাংশ জানানোর নির্দেশ ছিল অশোকবাবুর। সেই মতো যুব নেতা শঙ্করবাবু এবং ছাত্র নেতা সৌরভবাবু পাশের ঘরে বসে স্মার্ট ফোন, ট্যাবের স্ক্রিনে চোখ রেখেছেন। অশোকবাবুদের সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন বনমন্ত্রী যোগেশ বর্মন, ফালাকাটা জোনাল কমিটির সম্পাদক নেপাল গোপ। ফালাকাটা পার্টি অফিস থেকে দিনভর ৬০০টি অভিযোগ পৌঁছেছে প্রশাসন-কমিশনের কাছে। দিনের শেষে অভিযোগের সংখ্যা শুনে দলের নেতা কর্মীরা অবাক হলেও হাসছেন অশোকবাবু। ক্রিকেটপ্রেমী অশোকবাবু বললেন, ‘‘আগের রাতে এসে পিচ তৈরি করেছিলাম। সারা দিন একের পর এক বাউন্সার দিয়েছি। সে সব সামলাতে না পেরেই তৃণমূল নেতারা মেজাজ হারিয়েছেন। গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 TMC Ashok Bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy