প্রতীকী চিত্র।
এনআরসি আতঙ্কে জলপাইগুড়ির এক মুর্শিয়া শিল্পী মহম্মদ সাহাবুদ্দিন (৬৯) আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি তাঁর পরিবারের। তাঁর পরিবারের দাবি, সম্প্রতি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ সারা দেশে এনআরসি চালু হবে বলে মন্তব্য করার পর থেকেই সাহাবুদ্দিন আতঙ্কে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির পাশের এক কাঁঠাল গাছে সাহাবুদ্দিনের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান প্রতিবেশীরা। তাঁর দেহ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক সাহাবুদ্দিনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনাটি জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বাহাদুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাখাধরা গ্রামের।
বসত বাড়ির জমি ছাড়া অন্য কোনও জমি ছিল না সাহাবুদ্দিনের। গরিব পরিবার। অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করতেন। কাজের ফাঁকে মুর্শিয়া, পালাটিয়া সহ নানা লোকগান গাইতেন। লোকশিল্পী হিসেবে সরকারের খাতাতেও তাঁর নাম নথিবদ্ধ। বাড়িতে এক ছেলে, স্ত্রী ও ছেলের বৌ, চার নাতনি থাকতেন। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন বছর কয়েক আগে। বাড়িতে সামনে মুদির দোকানও করতেন তিনি। দোকানেই রাতে থাকতেন। পরিবারের দাবি, বসত বাড়ির জমির কাগজ ঠিক ছিল না। এই নিয়ে বিভিন্ন দফতরে গিয়েছিলেন। কিন্তু কাগজ ঠিক হয়নি। এরই মধ্যে বুধবার টিভিতে সারা অমিত শাহের বক্তব্য শুনেন। তারপরই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বলে দাবি। পরিজনেরা দাবি করেছেন, সাহাবুদ্দিন এর পরেই বলতে থাকেন, একে তো জমির কাগজ ঠিক নেই, তার মধ্যে সংখ্যালঘুদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে। বুধবার অনেক রাত পর্যন্ত ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানা টিভি চ্যানেলে অমিত শাহের বক্তব্য এবং তা নিয়ে আলোচনা শোনেন। এ দিন বৃহস্পতিবার ভোরে প্রতিবেশী হসেন্নারা পারভিন বাড়ির সামনে কাঁঠাল গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয়।
জলপাইগুড়ি জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্রীকান্ত জগন্নাথ রাও ইলওয়াড বলেন, ‘‘এনআরসি আতঙ্কে আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
সাহাবুদ্দিন রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে গান গাইতেন। কবিতাও লিখতেন। প্রতি মাসে শিল্পী ভাতা পেতেন তিনি। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সরকারি অনুষ্ঠান থেকে পুরস্কারও পেয়েছিলেন মুর্শিয়া গানের জন্য। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের আরও এক বাসিন্দা সাবের আলী ২৪ সেপ্টেম্বর এনআরসি আতঙ্কে কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে মারা গিয়েছিলেন অভিযোগ ওঠে।
মৃতের মেয়ে ছায়ারা বানু বলেন, ‘‘বসত বাড়ির জমির কাগজ নিয়ে বাবা আতঙ্কে ছিল। এর মধ্যে টিভিতে এনআরসি ভাষণ শুনে আরও আতঙ্কে পরে যান। তারপরেই আত্মহত্যা।’’ এক প্রতিবেশীও সে কথা বলেন।
জলপাইগুড়ির ইতিহাস নিয়ে চর্চা করা উমেশ শর্মার মন্তব্য, “এক জন ভাল শিল্পীকে হারালাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy