সুরক্ষা: জলদাপাড়ায় হাতিকে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
জলদাপাড়ার জঙ্গলে একের পর এক গন্ডারের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা আরও বাড়ল।
এই জাতীয় উদ্যানের শিসামারা জঙ্গলে পর পর গন্ডারের মৃত্যু অ্যানথ্রাক্সের কারণেই বলে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মহল থেকে সন্দেহ করা হচ্ছিল। এমনকি, বন দফতর থেকেও এই আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় বেলগাছিয়ার অ্যানিম্যাল রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্টের (এআরডি) তরফে বনকর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই গন্ডারদের মৃত্যুর কারণ অ্যানথ্রাক্স নয়। তবে এ ব্যাপারে তাদের কাছে এখনও পর্যন্ত লিখিত কোনও রিপোর্ট তারা পাঠায়নি বলে দাবি বন দফতরের। এমনকি, কী কারণে পাঁচটি গন্ডারের মৃত্যু হয়েছে, সেটাও এআরডির তরফে তাঁদের জানানো হয়নি বলে দাবি বনকর্তাদের।
রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন রাতে বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে এআরডি-র পাশাপাশি একটি বেসরকারি পরীক্ষাগারেও মৃত গন্ডারদের দেহের নমুনা পাঠানো হয়েছিল। দুই জায়গা থেকেই অ্যানথ্রাক্স নেগেটিভ বলে আমাদের জানানো হয়েছে। সেজন্যই এখন চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। সোমবার জলদাপাড়ায় স্থায়ী প্রাণী চিকিৎসকেরা কাজে যোগও দেবেন।’’
এই পরিস্থিতিতে গন্ডার-মৃত্যুর সঠিক কারণ না জানা পর্যন্ত আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না বনকর্তারা। এ দিন সকালেও জলদাপাড়ার শিসামারা বিটে গন্ডারদের দেহে অ্যানথ্রাক্সের প্রতিষেধক দেওয়া হয়। কিছু সুরক্ষামূলক অন্য প্রতিষেধক দেওয়া হয় কুনকি হাতিদের শরীরেও। তবে অ্যানথ্রাক্স হোক বা অন্য কিছু— যেসব এলাকায় গন্ডারগলি মারা গিয়েছে, সেই জায়গাগুলি অবশ্য ইতিমধ্যেই খুঁজে বের করেছেন বন দফতরের কর্তারা। বনমন্ত্রী রাজীব জানিয়েছেন, মৃদু ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক বেড়া দিয়ে ওই জায়গাটিকে অবিলম্ঘিবে রে রাখতে বনকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার জলদাপাড়ার জঙ্গলের শিসামারা বিটে প্রথমে একটি গন্ডারের দেহ উদ্ধার হয়। পরদিন, বুধবার একই বিটে আরও দু’টি গন্ডারের মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার মালঙ্গি বিট থেকে একটি গন্ডারকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার ফের সেই শিসামারা বিটে আরও দু’টি গন্ডারের মৃত্যু হয়। বন দফতর সূত্রের খবর, চারদিনে জলদাপাড়া এলাকায় মৃত্যু হওয়া ওই পাঁচটি গন্ডারই স্ত্রী গন্ডার।
বন দফতর সূত্রের খবর, অ্যানথ্রাক্সের কারণেই জলদাপাড়ার জঙ্গলে বারবার গন্ডারের মৃত্যু হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে প্রথম থেকেই সন্দেহ করা হচ্ছিল। সেজন্য শুক্রবার থেকে শিসামারা বিটে গন্ডারদের অ্যানথ্রাক্সের প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ শুরু হয়। যে কাজ চলে শনিবারও। বিশেষ প্রতিষেধক দেওয়া হয় হাতিদের শরীরেও। এ দিন দুপুরে উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, ‘‘প্রাণী চিকিৎসকদের যারা গন্ডারদের দেহের ময়নাতদন্ত করেছেন, তাঁরাও অ্যানথ্রাক্স সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।’’ বনকর্তাদের কথায়, সেজন্য এআরডি দফতরের তরফেই শুক্রবার থেকে এই প্রতিষেধকের ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু আরও কয়েকঘণ্টা পর বন দফতরের যাবতীয় হিসেব উল্টে যায়। শনিবার সন্ধ্যায় রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিংহ বলেন, ‘‘লিখিত রিপোর্ট না এলেও এআরডি দফতর থেকে আমাকে জানানো হয়েছে যে মৃত গন্ডারদের দেহের নমুনা পরীক্ষায় অ্যানথ্রাক্স নেগেটিভ পাওয়া গিয়েছে। তবে আমরা সতর্কতা জারি রাখছি। এবং আরও রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছি।’’
বন দফতর সূত্রের খবর, মৃত গন্ডারদের দেহের নমুনা বেলগাছিয়ার পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের বরেলী-সহ একাধিক জায়গায় পাঠানো রয়েছে। ফলে সেখান থেকে পরবর্তীকালে কী রিপোর্ট আসে, তার জন্য অপেক্ষা করছেন বনকর্তারা। অ্যানথ্রাক্স নিয়ে এতটুকু ঢিলেমি দিতে নারাজ বনকর্তারা। সেইজন্যই গন্ডারগুলি মৃত্যুস্থল অবশ্য ইতিমধ্যেই খুঁজে বের করেছেন বন দফতরের কর্তারা। সেজন্যই সিপিটু কমপার্টমেন্ট নামে ওই জঙ্গলকে মৃদু ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বন কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy