মনোযোগ: সাহিদুর স্যরের ক্লাসে ছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র
তনুশ্রী, নিরূপমা, মুনমুনদের সঙ্গে জোট বাঁধছেন তাঁদের শিক্ষকেরা। পাশে আছেন অভিভাবকেরাও। সকলেই একমত, বারাণসীতে যাই হোক না কেন, জলপাইগুড়ির কলেজে ‘শেখ’-স্যরের কাছেই সংস্কৃত পড়বেন ছাত্রীরা। তনুশ্রী সাহার তো স্পষ্ট কথা, ‘‘স্যর যে ভাবে পড়ান, তাতে সংস্কৃতকে আরও সহজ মনে হয়। কত শ্লোক এমন ভাবে বোঝান, যাতে সহজেই মনে থেকে যায়।’’ জলপাইগুড়ির প্রসন্ন দেব মহিলা (পিডি) কলেজের ছাত্রীদের কারও কাছে শেখ-স্যার, কারও কাছে সাহিদুর স্যার। আড়াই বছর আগে এই কলেজে শিক্ষকতা করতে আসা মালদহের বাসিন্দা সদ্য ত্রিশের কোঠায় পা রাখা সাহিদুরকে ভালবাসেন অন্য শিক্ষকরাও। ওই কলেজেরই শিক্ষক রূপণ সরকার বলেন, ‘‘রামায়ণ-মহাভারতের কোনও অংশের অনুবাদের প্রয়োজন হলে আমরা সাহিদুরের কাছেই যাই। অসামান্য ভাবানুবাদ করে। এত ভাল সংস্কৃত অনেকেই বোঝেন না।”
সম্প্রতি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএইচইউ) একদল পড়ুয়া এক মুসলিম শিক্ষকের থেকে সংস্কৃত পড়তে অস্বীকার করেছেন। তাতে ইন্ধন দিয়েছে গেরুয়া শিবিরের এক ছাত্র সংগঠন। সে খবর শুনে খানিকটা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন তিরুপতির সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতে স্নাতকোত্তর সাহিদুর শেখ। তাঁর কথায়, “উচ্চ মাধ্যমিক থেকে সংস্কৃত নিয়ে পড়ছি। কোনও প্রশ্ন শুনতে হয়নি। আর হবেই বা কেন! তাই বিএইচইউতে যা ঘটেছে, তাতে মনটা খুব অস্থির হয়ে আছে।”
যে অস্থিরতা খানিকটা টের পেয়ে সাহিদুরের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। কলেজের অধ্যক্ষ শান্তি ছেত্রী বলেন, “সাহিদুরকে নিয়ে আমরা গর্বিত। বারাণসীতে কী ঘটছে তা দিয়ে জলপাইগুড়ি তথা আমাদের রাজ্যকে বিচার করা যাবে না। সাহিদুর শেখ সংস্কৃত পড়াচ্ছেন, পড়িয়ে যাবেন। ভাষাকে কোনও গণ্ডিতে বেঁধে রাখার চেষ্টা করা ভাষারই আপমান।”
মাধ্যমিক পর্যন্ত কিন্তু আরবি ভাষার শিক্ষা নিয়েছিলেন সাহিদুর। মালদহের মহদিপুর হাইস্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকে সংস্কৃত নিয়ে পড়তে শুরু করেন। কেন সংস্কৃত? সাহিদুর বলেন, “আমার সাহিত্যে আগ্রহ ছিল। ভারতের সব প্রাচীন সাহিত্যই সংস্কৃতে। তাই নতুন অনেক কিছু জানা যাবে ভেবে সংস্কৃত নিয়ে পড়েছি।’’ স্কুলে সংস্কৃত পড়া নিয়ে একটি গল্পও রয়েছে তাঁর। সংস্কৃত বিভাগে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা পূরণ হয়ে যাওয়ায় সাহিদুরকে প্রথমে নিতে চাওয়া হয়নি। পরে ভর্তির সময় তাঁকে বলা হয়েছিল, ভাল ফল করে দেখাতে হবে। এ দিন দুপুরে কলেজের শিক্ষকদের ঘরে বসে সাহিদুর বললেন, “সে বার সংস্কৃতে আমি প্রথম হয়েছিলাম।”
সাহিদুরের ছাত্রী নিরূপমা রায়, মুনমুন রায়রা বিআইচইউ-এর ঘটনাটি আমলই দিতে চান না। বরং তাঁরা বলছেন, “সাহিদুর স্যর যখন ক্লাসে উদাত্ত গলায় শ্লোক আবৃত্তি করেন, আমাদের গায়ে কাঁটা দেয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy