কলিগ্রাম পঞ্চায়েতের সামনে শ্রমিকদের বিক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র।
১০০ দিনের প্রকল্পের মজুরি না মেলায় পঞ্চয়েত ও ডাকঘরে চড়াও হয়ে বিক্ষোভ দেখানো, ভাঙচুর-সহ কর্মীদের মারধর ও হেনস্থার অভিযোগ উঠল শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। মালদহের চাঁচলের কলিগ্রাম এলাকায় বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে। দেড় বছর আগে ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজ করেও মজুরি কেন মিলছে না সেই অভিযোগ তুলে এ দিন বিক্ষোভ শুরু করেন কয়েকশো শ্রমিক। ওই সময়েই শ্রমিকদের একাংশ ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। মারমুখী শ্রমিকদের তাণ্ডবে পালিয়ে যান দফতরের কর্মীরা। খবর পেয়ে যুগ্ম বিডিও পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাঁকেও শ্রমিক-বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। যুগ্ম বিডিও-র সামনেই নিমার্ণ সহায়ককে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
কেন শ্রমিকদের মজুরি মেলেনি তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ জানানো হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। মালদহের জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘কেন এমন হল, সে ব্যাপারে বিডিও-র কাছে খোঁজ নিচ্ছি।’’
চাঁচল-১ ব্লকের বিডিও সুব্রত বর্মন বলেন, ‘‘অনলাইনে শ্রমিকদের টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যান্ত্রিক কোনও সমস্যায় মজুরি ডাকঘরে পৌঁছায়নি বলে মনে হচ্ছে। যাই হোক জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ডাকঘর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি। শ্রমিকদের সমস্যাটা বুঝি। কিন্তু ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।’’
পঞ্চায়েত ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের শেষে এলাকার বিভিন্ন বুথে পুকুর খোঁড়া-সহ গোরস্থানে মাটি কাটার কাজ করেন প্রায় ২০০০ শ্রমিক। তাঁদের বকেয়া মজুরির পরিমাণ ৬০ লক্ষ টাকা। গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর উপভোক্তাদের মজুরি সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোনও প্রকল্পের উপভোক্তার সংখ্যা, তাঁদের মজুরি ও অ্যাকাউন্ট নম্বর-সহ সব তথ্য পঞ্চায়েতগুলির তরফে প্রশাসনকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার পর মজুরির টাকা শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে চলে আসার কথা। কিন্তু বারবার পঞ্চায়েত ও ডাকঘরে খোঁজ নিয়েও টাকা পৌঁছয়নি জানতে পেরে এ দিন বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। কয়েক মাস আগেও ওই বকেয়ার দাবিতে তালা ঝুলিয়েছিলেন তাঁরা।
এ দিন একযোগে পঞ্চায়েত ও ডাকঘরে চড়াও হয়ে বিক্ষোভ দেখানোর সময় হঠাৎ শ্রমিকদের একাংশ ভাঙচুর শুরু করেন বলে অভিোগ। তাঁদের মধ্যে বহু মহিলা শ্রমিকও ছিলেন। বিক্ষোভের কথা শুনে যুগ্ম বিডিও খোকন বর্মন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করলে উত্তেজিত শ্রমিকদের একাংশ নির্মাণ সহায়ক অভিজিৎ মিত্রকে বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ। অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘ওদের বোঝানোর চেষ্টা করতেই আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মারতে শুরু করে।’’
কংগ্রেসের প্রধান সফিকুল আলম বলেন, ‘‘আমাদের কোনও ত্রুটি নেই। কিন্তু শ্রমিকরা তা মানতে চাইছেন না। কলিগ্রাম ডাকঘরের পোস্টমাস্টার রণবীর রায় বলেন, ‘‘আমরা টাকা না পেলে কী ভাবে শ্রমিকদের দেব।’’ দুই শ্রমিক মহুয়া দাস, আসফাক আলি বলেন, ‘‘মজুরি চেয়ে পঞ্চায়েতে গেলে বলা হচ্ছে ডাকঘরে যেতে আর ডাকঘর বলছে পঞ্চায়েতে খোঁজ নিতে। এ দিন তাই মজুরির ব্যবস্থা করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছি। কারা ভাঙচুর বা মারধর করেছে তা জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy