Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Aged Idol Maker

কাঁপা হাতেই তুলির টান একশোর বিষ্ণুপ্রিয়ার

১৯৫৫ সালে স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়াকে সঙ্গে নিয়ে কোচবিহারে চলে আসেন নিত্যগোপাল। প্রথমে কোচবিহার শহরের মড়াপোড়া দিঘির কাছে বাসস্থান গড়ে তোলেন।

বৃদ্ধ বয়সে আজও ঠাকুর তৈরি করে চলেছেন বিষ্ণুপ্রিয়া পাল, সোমবার কোচবিহারে।

বৃদ্ধ বয়সে আজও ঠাকুর তৈরি করে চলেছেন বিষ্ণুপ্রিয়া পাল, সোমবার কোচবিহারে। —নিজস্ব চিত্র।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩৬
Share: Save:

বয়স প্রায় একশো। পরিবারের সদস্যরা তেমনটাই দাবি করেন। বয়সের ছাপ শরীরে স্পষ্ট। চোখের জ্যোতি কমে এসেছে। শীর্ণকায় হয়েছে হাত। তবুও মায়ের মূর্তি গড়তে মন চায় বিষ্ণুপ্রিয়ার। অশক্ত হাতেই তুলে নেন তুলি। ধীরে ধীরে মায়ের মুখাবয়বে রঙ করতে শুরু করেন। মায়ের মুখ যত স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ততই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে বিষ্ণুপ্রিয়ার মুখ। মুখে এক অমিলন হাসি। বলেন, ‘‘যখন শরৎ আসে। পুজোর গন্ধ চলে আসে নাকে। মনে হয় মায়ের মূর্তি গড়ি। পারি না। বয়স তো হয়েছে। তাই তুলি নিয়ে মায়ের সামনে যাই মাঝে মাঝে।’’ বিষ্ণুপ্রিয়ার ছোট ছেলে সুজিত পাল বলেন, ‘‘সেই কত বছরের অভ্যেস। বদলানো যায় না। তাই তো মা এই বয়সেও মূর্তির সামনে বসে পড়েন।’’

আজ থেকে বহু বছর আগের কথা। নিত্যগোপাল পালের বাড়ি ছিল বাংলাদেশের ঢাকার বিক্রমপুরে। ১৯৫৫ সালে স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়াকে সঙ্গে নিয়ে কোচবিহারে চলে আসেন নিত্যগোপাল। প্রথমে কোচবিহার শহরের মড়াপোড়া দিঘির কাছে বাসস্থান গড়ে তোলেন। পরে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগমের বাস ডিপোর কাছে পালপাড়ায় বসবাস শুরু করেন তিনি। নিত্যগোপাল মূর্তি তৈরির কাজ জানতেন। সেখানেই তিনি শুরু করেন সেই কাজ। ধীরে ধীরে পসার জমতে শুরু করে। তখন শ্রমিক পাওয়া ভার ছিল। তাই স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়া ছিলেন তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী। ধীরে ধীরে
বিষ্ণুপ্রিয়া হয়ে ওঠেন মৃৎশিল্পী। সত্তরের দশকে মৃত্যু হয় নিত্যগোপালের। সেই থেকে সংসারের সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ে বিষ্ণুপ্রিয়ার ঘাড়ে। সন্তানদের বড় করার পাশাপাশি তিনি মূর্তিতৈরির কাজও চালিয়ে যান। তাঁর ছেলেদের কথায়, ‘‘ওই সময় তো মা এই কাজ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। মায়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।’’

বিষ্ণুপ্রিয়ার তিন ছেলে বাদল পাল, প্রদীপ পাল ও সুজিত এখন মূর্তি তৈরি করেন। এক নামেই তাঁদের গোটা শহর চেনে। ওঁরা বলেন, "মা পাশে এসে দাঁড়ালে আমরা অনেক শক্তি পাই।’’

আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ঘুরছে। কখনও কখনও যেন কাছে চলে আসছে অনেকটা। খানিকটা দূরে তোর্সার পাড়ে কাশফুলের সারি। পুজোর যে বেশিদিন নেই সেই বার্তা নিয়ে এসেছে সকলে। তা বুঝতে পারেন বিষ্ণুপ্রিয়াও। বিছানা থেকে উঠে বাইরে বেরোন তিনি। বাড়ির সামনেই ছেলেদের প্রতিমা তৈরির বিশাল কারখানা। সেখানে বহু প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। কাজ অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। প্রতিমা রঙ করার কাজ শুরু হয়েছে। ধীর পায়ে সেখানে পৌঁছন বিষ্ণুপ্রিয়া। হাতে তুলে নেন তুলি। মায়ের
মুখের কাছে নিয়ে যান নিজের মুখ। চোখ আঁকতে শুরু করেন। পাশ থেকে সদ্য কাজে যোগ দেওয়া এক তরুণ বলে ওঠে, ‘‘দেখ দেখ মা আঁকছেন মায়ের মুখ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cooch Behar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy