Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Vishwakarma Puja

চাহিদা তলানিতে, শিল্পীর হাতে তাই দাঁড়িপাল্লা

বিশাল আকারের প্রতিমা, তার চোখ টানা টানা বৈশিষ্ট ছিল উত্তমের কারখানার। এ বার প্রায় সব ছোট এক চালার প্রতিমা।

পেশা-বদল: আনাজ দোকানে উত্তম। নিজস্ব চিত্র

পেশা-বদল: আনাজ দোকানে উত্তম। নিজস্ব চিত্র

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:১৯
Share: Save:

কিছুক্ষণ আগে প্রতিমার গায়ে মাটি লেপে এসেছেন। এখন কিছুক্ষণ আনাজের দোকান সামলাবেন, তারপরে আবার গিয়ে প্রতিমার গায়ে মাটি মাখাবেন।প্রতি বছর তাঁর ‘স্টুডিয়ো’য় দেড়শোটি বিশ্বকর্মা তৈরি হত, ছোটবড় মিলিয়ে দুর্গা প্রতিমা ৩৪টি। এ বছর বিশ্বকর্মা কুড়িও পার হয়নি, দুর্গা প্রতিমা মেরেকেটে এক ডজন। তাই চল্লিশ বছর ধরে এই সময়ে যে হাত দেবীর চক্ষুদানের জন্য তৈরি হত, এ বারে সেই হাতে চলছে আনাজের ওজন মাপার পালাও। উত্তম পালের এই রুজি বদল কপালে ভাঁজ ফেলেছে অনেকের। কেউ কেউ আবার আশাবাদী, বলছেন, ‘‘করোনার প্রকোপ মিটে গেলে, সব স্বাভাবিক হলে নিশ্চয়ই নিজের এত দিনকার পেশাতেই ফিরবেন উত্তম।’’

ষাট ছুঁইছুঁই উত্তম নিজে কী বলছেন? তাঁর কথায়, “লকডাউনের সময়ে মোটরবাইক বন্ধক দিয়ে ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। তা দিয়ে আনাজের দোকান দিয়েছি, জমানো টাকা দিয়ে এক ছেলেকে চায়ের দোকান করে দিয়েছি। এখন যা বাজার তাতে প্রতিমা গড়ে সংসার চলবে না।” ভাদ্রের শুরু মানেই অরবিন্দনগরের টিনের চাল ছাওয়া প্রতিমা তৈরির পেল্লায় কারখানায় ঢোকার মুখে তাল তাল মাটি রাখা থাকবে— এমনটাই দেখে অভ্যস্ত পথচারীরা। এ বছর সে জায়গায় কাঠের তাক, তাতে হরেকরকম আনাজ রাখা। তার কিছুটা পাশেই একটা টেবিলে রাখা গ্যাস ওভেন, চা বানানোর নানা পাত্র। আনাজের তাক এবং চা বানানোর টেবিলের মাঝখানে দিয়ে অপ্রশস্ত পথ কারখানায় ঢুকেছে। বাইরে থেকে চোখে পড়ল ভিতরে আলো-আঁধারিতে রাখা ছোট ছোট বেশ কয়েকটি বিশ্বকর্মা প্রতিমা। তার পরে ছোট একচালা দুর্গাপ্রতিমায় মাটি লেপা হয়েছে। আনাজের দোকান দেখছেন উত্তম। হাতে শুকনো মাটির দাগ। মূর্তির কাজ করে এলেন। সেই সময়ে দোকান সামলেছিলেন তাঁর বড় ছেলে বাপি। ছোট ছেলে সৌরভ, যিনি গত বছরও বাপ-দাদার সঙ্গে প্রতিমা বানানোয় হাত লাগিয়েছিলেন, এ বারে পাশেই তাঁর চায়ের দোকান। বাপির কথায়, “এবার তো প্রতিমাই নেই। প্রতি বছর অন্তত দেড়শোটি বড় বিশ্বকর্মা হত। এ বার সাকুল্যে ১৮টি হবে। দুর্গা প্রতিমা আমরা বানাতাম ৩৪টি। এবার মাত্র ১০-১২টি হবে।” বিশাল আকারের প্রতিমা, তার চোখ টানা টানা বৈশিষ্ট ছিল উত্তমের কারখানার। এ বার প্রায় সব ছোট এক চালার প্রতিমা।

পুজোর ৩-৪ মাস আগে থেকে কারখানা গমগম করত। অন্তত জনা দশেক কারিগর কাজ করতেন। এ বার কেউ আসেননি। স্থানীয়রা মজুরি বেশি চাইছেন বলে দাবি। উত্তমবাবুর কথায়, “বাঁশ থেকে সুতলি, সবের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ছোট প্রতিমা বানাতেও বেশি খরচ। উল্টো দিকে, ক্লাবগুলি বাজেট কমিয়েছে।” কারখানার বাৎসরিক ভাড়া পঁচিশ হাজার টাকা। সে টাকা জোগাড় হবে কী করে, চিন্তিত উত্তম। বলছেন, “বাড়িতে ন’জনের সংসার। প্রতিমা থেকে এ বছর সকলের ভাত জোগাড় করতে পারিনি। আনাজের দোকানই পেট চালাচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Vishwakarma Puja Artist Crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy