ছবি এএফপি
তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে। একটি-দু’টি দোকান খোলা রয়েছে। লকডাউনের সন্ধ্যায় রাস্তা সুনসান। আচমকাই হেড-লাইটের আলো পড়ল রাস্তায়। সজোরে ব্রেক কষে একে একে চারটি গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল। ট্রাকের ভিতর থেকে হুড়মুড় করে নামতে শুরু করলেন কিছু লোক। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই দু-একটি দোকানের শাটার বন্ধ হয়ে গেল। রাস্তায় ঘুরতে থাকা গুটিকয়েক বাসিন্দারা কোথায় যেন মিলিয়ে গেলেন। পরে ওই গাড়িগুলি ঘুঘুমারি থেকে দিনহাটার পথে রওনা হয়ে যায়।
চিত্র দুই: চান্দামারিতে দু’দিন ধরে ভিন্ রাজ্য থেকে বহু লোক ফিরতে শুরু করেছেন। বাড়ি ফিরেই তাঁদের কেউ কেউ হোম কোয়রান্টিনে থাকতে শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন কোয়রান্টিন সেন্টারে যেতে ইচ্ছুক। বারবার তাঁরা তা নিয়ে আবেদনও জানিয়েছেন। আশা কর্মী থেকে পুলিশ বা স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের কাছেও সেই খবর পৌঁছিয়েছে।
অভিযোগ, তার পরেও তাঁদের জায়গা হয়নি কোয়রান্টিন সেন্টারে। তাঁরা স্থানীয় একটি এসএসকে সেন্টারেই আশ্রয় নিয়েছেন। চান্দামারির উপপ্রধান মহেন্দ্র বর্মণ বলেন, “গ্রিন জোন থেকে ওঁরা দু’জন এসেছেন। তাই হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়েছে।”
চিত্র তিন: তখন দুপুর ২টো। কোচবিহার শহরের প্রবেশপথে তোর্সা সেতুতে তিনটি বড় ট্রাক দাঁড়িয়ে। তিনটিতেই মহিলা-পুরুষ-শিশু মিলিয়ে দেড় শতাধিক মানুষ। ক্লান্ত-অবসন্ন। শিশুরা চিৎকার করছে। দুই-একজন খাবার খুঁজছেন। দুই-একজন সেতুর মধ্যেই শৌচকর্ম করছেন। গাড়ি তিনটির সামনে একটি পুলিশের গাড়ি দাঁড়ানো। ভিতরে এক-দু’জন পুলিশকর্মী বসে। দূরে আরেকটি পুলিশের গাড়ি। ওই গাড়ির পাশ দিয়ে ছুটছে আরও বহু গাড়ি ও মানুষ। একজন জানালেন, তাঁরা বিহার থেকে এসেছেন। বক্সিরহাটের পথে যাচ্ছেন।
গ্রিন জোন কোচবিহারে এ ভাবেই ঢুকছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। যার কিছু হিসেব প্রশাসনের কাছে রয়েছে, তো একটি অংশের হিসেব নেই। এখন কেউই স্পষ্ট করে জানাতে পারছেন না, কোচবিহারের ঠিক কত মানুষ ভিনরাজ্যে কাজ করেন। দিনকয়েক ধরে স্রোতের মতো দিনহাটা, সিতাই, শীতলখুচি, তুফানগঞ্জের পথে মানুষ দেখে খানিকটা হকচকিয়ে গিয়েছেন সবাই। ট্রেনে করে ঠিক কত মানুষ ফিরতে পারেন তা নিয়েও শুরু হয়েছে আলোচনা।
অন্ততপক্ষে সবমিলিয়ে ৩০ হাজারের সংখ্যা ধরেই প্রশাসন কাজ শুরু করেছে। নিউ কোচবিহার স্টেশনে ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ট্রেন থেকে নামার পরে যাত্রীদের থার্মাল স্ক্রিনিং হবে। কে কোন জোন থেকে ফিরেছেন, তা খতিয়ে দেখার পরে কোথায় পাঠানো হবে তা নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু গাড়ি-বাসে বা হাঁটা পথে জেলায় ফিরছেন তাঁদের নির্দিষ্ট কোনও হিসেব নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের আধিকারিক বলেন, “এত মানুষ বাইরে থাকেন, সবাইকে কোয়রান্টিনে রাখা সম্ভব নয়। কোচবিহারের মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল অবশ্য বলেন, “প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলেও লোকসংখ্যা নিয়ে ফাঁপরে পড়েছেন তাঁরা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, কোচবিহার থেকে একদিনে খুব বেশি হলে ৬০০ জনের লালারস নেওয়া যেতে পারে। তা নিলেই শেষ কথা নয়। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে একদিনে খুব বেশি হলে এক হাজারের মতো পরীক্ষা হতে পারে। বর্তমানে যে পরিমাণ লালারস সেখানে জমা হয়েছে তাতে আগামী পাঁচদিন নতুন করে পরীক্ষা সম্ভব নয়। কোচবিহার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পরিস্থিতির দিকে নজর রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy