স্বাস্থ্যপরীক্ষার পর শিশুটিকে তুলে দেওয়া হল তার মা রঞ্জিতার কোলে। নিজস্ব চিত্র।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে শিশুচুরির অভিযোগ উঠেছিল বৃহস্পতিবার। শনিবার সেই শিশুকে উদ্ধার করে তার মায়ের হাতে তুলে দিল পুলিশ। ওই শিশুর বয়স তিন দিন। শিশুচুরির ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের নাম অঞ্জু দাস, রাহুল দাস ও প্রদীপ দাস।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার খড়িবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একটি শিশুর জন্ম দেন রঞ্জিতা সিংহ। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁদের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। তার পর বৃহস্পতিবারই সেখান থেকে উধাও হয়ে যায় সদ্যজাত শিশুটি। চুরির অভিযোগ তোলেন রঞ্জিতার স্বামী নিত্যানন্দ সিংহ। অভিযোগ পেয়েই হাসপাতালে পৌঁছয় শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ, এসওজি, মেডিক্যাল ফাঁড়ি-সহ মাটিগাড়া থানার পুলিশ। শুরু হয় তদন্ত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, বৃহস্পতিবার মেডিক্যাল কলেজ থেকে এক জন নয়, দুজন বাচ্চাটিকে নিয়ে পালিয়ে যান।
পুলিশ সুত্রে খবর, হাসপাতাল চত্বরের সিসিটিভি ফুটেজ বার বার খতিয়ে দেখা হয়। একটি ক্যামেরায় দেখা যায়, ওয়ার্ড থেকে এক মহিলা একটি শিশুকে নিয়ে বার হয়ে যাচ্ছেন। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের সেই ভিডিয়োর উপর ভিত্তি করেই তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিডিয়োতে যে মহিলার ছবি দেখা গিয়েছে তা আশাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকেই যোগসূত্র মেলে।
তদন্তকারীদের দাবি, ওই যোগসূত্র থেকেই উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার বাসিন্দা শিখা দাসের নাম উঠে আসে। এই শিখার মেয়েই অঞ্জু। দু’জনে পরিকল্পনা করেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে শিশু চুরি করেন। তদন্তকারীদের দাবি, এই চুরির ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে আসলে মাতৃত্বহীনতা। গোয়েন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, অঞ্জুর বেশ কয়েক বছর আগে বিহারের গলগলিয়ায় বিয়ে হয়। কিন্তু তাঁর সন্তান হচ্ছিল না। আইভিএফের মাধ্যমে সন্তান ধারণের চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন সেই ভ্রুণের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে অঞ্জুর পরিবারে চলছিল অশান্তি। মেয়েকে সেই অশান্তির হাত থেকে মুক্তি দিতে বাচ্চা চুরির পরিকল্পনা করেন তাঁর মা শিখা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চোপড়ার বাড়ি থেকে বেশ কয়েক দিন আগে মা ও মেয়ে বার হন। গ্রামবাসীরা জানতেন অঞ্জু অন্তঃসত্ত্বা। প্রসবের কারণেই তাঁকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেখান থেকে বাচ্চা চুরি করে সোজা দু’জনে চলে যান চোপড়ায় নিজের বাড়িতে। তবে পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বিগত দু’দিন ধরে বাচ্চা চুরিকে কেন্দ্র করে যে মাত্রায় হইহট্টগোল শুরু হয়েছিল মেডিক্যাল কলেজে, সেই খবর বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁদের কাছে পৌঁছয়। খানিক ভয় পেয়েই অঞ্জু শুক্রবার সকলের চোখ এড়িয়ে মেডিক্যাল কলেজে বাচ্চা ফেরত দিতে আসেন বলে তদন্তকারীদের দাবি। কিন্তু হাসপাতাল চত্বরে শিশুচুরির প্রতিবাদে উত্তপ্ত পরিস্থিতি দেখে তিনি বাচ্চা-সহ ফিরে যান বাড়িতে। শেষে শনিবার রাতে চোপড়ার বলরামপুরে অঞ্জুর বাপেরবাড়ি থেকে পুলিশ নিখোঁজ বাচ্চাকে উদ্ধার করে৷ ধৃতদের মাটিগাড়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্য দিকে, শিশুটিকে নিয়ে আসা হয় মেডিক্যাল কলেজে। স্বাস্থ্যপরীক্ষার পর তাকে তুলে দেওয়া হয় রঞ্জিতার কোলে। গোটা মেডিক্যাল কলেজে উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়। রঞ্জিতা পরে বলেন, “সকলকে অশেষ ধন্যবাদ আমার বাচ্চাকে খুঁজে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।”
শিশুটির বাবা নিত্যানন্দ বলেন, “আজ থেকে সারা জীবনের জন্য সকলের কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে রইলাম।”
হাসপাতাল সুপার সঞ্জয় মল্লিক যদিও এই ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ, প্রশাসন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকলেই চিন্তার মধ্যে ছিলেন। দু’দিনের এত পরিশ্রম সার্থক হল। এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের চলতে হবে।’’
তবে পুলিশ আনুষ্ঠানিক ভাবে এ বিষয়ে কিছু বলেনি। রবিবার সাংবাদিক বৈঠকের ডাক দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy