Advertisement
১৫ জানুয়ারি ২০২৫
India-Bangladesh Border

সীমান্তে কি প্রহরী হতে হবে আবার

পথ রক্তাক্ত হয়েছে আবারও।গত শতকের সত্তরের দশকের উত্তাল সেই সময় বাঁধতে চাইলেও, আমরা থমকে দাঁড়াইনি। বরং হাত বাড়িয়েছিলাম প্রকৃত বন্ধু হয়ে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

শৌভিক রায়
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:০২
Share: Save:

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ‘প্রিয়তমাসু’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘সীমান্তে আজ আমি প্রহরী/ অনেক রক্তাক্ত পথ অতিক্রম ক’রে/ আজ এখানে এসে থমকে দাঁড়িয়েছি।’

গত কয়েক দিন ধরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যা চলছে, তাতে এই কথাগুলি বারবার মনে হচ্ছে। দেশভাগের সময় এক বার রক্তাক্ত পথ অতিক্রম করেছি। চোখের জলে আলাদা করেছি গঙ্গা আর পদ্মা। দুঃখ-সুখের বুকের মাঝে একই যন্ত্রণা হলেও, ভিন্ন পথে হেঁটেছি আমরা।

পথ রক্তাক্ত হয়েছে আবারও।গত শতকের সত্তরের দশকের উত্তাল সেই সময় বাঁধতে চাইলেও, আমরা থমকে দাঁড়াইনি। বরং হাত বাড়িয়েছিলাম প্রকৃত বন্ধু হয়ে। অনন্য এক অনুভূতি স্পর্শ করেছিল আমাদেরও। স্নাত হয়েছিলাম রক্তাক্ত পথ শেষের মুক্তিসূর্যের কিরণে।

ভাবিনি, আলোর উজ্জ্বল আভাতে লুকিয়ে রাহুগ্রাসের গাঢ় অন্ধকার!

সেই অন্ধকার গাঢ়তর হচ্ছে বলেই বোধহয়, আজ আমাদের আবার সীমান্তে দাঁড়াতে হচ্ছে। না, দীর্ঘ কোনও যুদ্ধের প্রস্তুতি নয় এটি। নিজের রাষ্ট্রকে সুস্থিত রাখার জন্যই এই প্রয়াস। যাঁরা সীমান্ত সম্পর্কে সামান্য অবহিত, তাঁরা জানেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত দৈর্ঘ্যে ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার। দৈর্ঘ্যের দিক থেকে পৃথিবীর পঞ্চম দীর্ঘতম সীমান্তরেখা। এর মধ্যে ২ হাজার ২১৭ কিলোমিটার পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে। বাকি অংশ অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও মিজোরামের মধ্যে।

ফলে বাংলাদেশের ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্ব কতটা, সেটা বোঝা কঠিন নয়। কিন্তু আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল এই বঙ্গের উত্তরাংশ। সৌজন্যে, চিকেন নেক। দৈর্ঘ্যে ৬০ কিলোমিটার আর প্রস্থে ১৭-২২ কিলোমিটারের ক্ষুদ্র এই ভূখণ্ড দেখতে অনেকটা মুরগির গলার মতো। আর এর মধ্যে দিয়েই সারা দেশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির যোগাযোগ। সড়কপথে যেতে হলে এই করিডরকে স্পর্শ করতেই হবে। ফলে বোঝাই যায়, কী নিদারুণ এর গুরুত্ব। আবার এই করিডরকে ঘিরে রয়েছে নেপাল, ভুটানের মতো অন্য দু’টি রাষ্ট্রও। খুব দূরে নেই চিনও।

অতীতে বাংলাদেশ-ভারতের উন্মুক্ত সীমান্ত চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছিল। অনুপ্রবেশ ছিল নিত্য ঘটনা। কাঁটাতারের এপারে সীমান্তরক্ষীদের অতন্দ্র পাহারায় আর সাধারণ মানুষদের সচেতনতায় অনেকটাই বন্ধ করা গেছে সে সব। কিন্তু এখনও খোলা জলপথ। ফলে চিন্তামুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। তার উপরে যদি সীমান্তে কাঁটাতার দিতে মেখলিগঞ্জের মতো বাধা দেওয়া হয়, তবে সেটি অবশ্যই অশনি সঙ্কেত। আরও বড় কথা হল, এই বাধাদান অন্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বে আঘাত দেওয়ার সামিল। বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এটিকে উড়িয়ে দেওয়া চলে না। ধোঁয়া দেখলেই আগুন থেকে সাবধান হওয়া উচিত।

স্বদেশের ঠিকানায় থমকে দাঁড়িয়ে বারবার প্রশ্ন জাগে, এই রক্তাক্ত পথ কাম্য ছিল? কেউই তো চাইনি। তবু কেন হায়নারা এল ক্ষতবিক্ষত করতে সব!

লেখক: শিক্ষক, কোচবিহারের বাসিন্দা

অন্য বিষয়গুলি:

Cooch Behar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy